মানুষের মাঝে একধরনের মিথ আছে যে, জোড়া কলা খেলে নাকি যমজ সন্তান হয়। যমজ শিশুদের নিয়ে সব সময় এক ধরনের কৌতূহল কাজ করে। অনেকে যমজ সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তবে বিভিন্ন সায়েন্টিফিক কারণ এর জন্য দায়ী। তবে চিকিৎসকদের মতে, যমজ মায়ের মেয়ের যমজ বাচ্চা হতে পারে।
‘জার্নাল অব রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে যমজ শিশু বেশি জন্ম নেয়ার কারণ, তাদের আচরণ এবং কাদের যমজ শিশু বেশি জন্ম হয় তা নিয়ে তথ্য দেয়া হযেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব নারীর উচ্চতা বেশি তাদের যমজ সন্তানের জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মায়ের উচ্চতার সঙ্গে যমজ সন্তান জন্মদানের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ আমাদের শরীরের বেড়ে ওঠার জন্য কিছু বিশেষ বিষয় কাজ করে। যাকে বলা হয় গ্রোথ-ফ্যাক্টর। যা হচ্ছে ইনসুলিন নামের এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন। এই ইনসুলিন বোন সেল বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। একই সঙ্গে মেয়েদের লম্বা হবার প্রবণতা ও যমজ সন্তান জন্মদানের বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
যমজ সন্তান দুই ধরনের হয়। এক যারা একই রকম দেখতে। এদের বলা হয় ‘আইডেন্টিকাল টুইন’। আরেক যাদের চেহারায় মিল নেই। তাদের বলা হয় ‘ফ্র্যাটার্নাল টুইন’।
বিশ্বে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে নাকি ১ জন যমজ সন্তানের জন্ম দেন। একবারেই দুই সন্তানের বাবা-মা হতে পারার আনন্দ যেমন রয়েছে, তেমন বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। মায়ের শরীরে ধকল বেশি হয়, জন্মের আগে ও পরে। খরচ অবশ্যই অনেক বেশি। দুই সন্তান বড় করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নাও থাকতে পারে অনেকের।
মোটের উপর, এই বিষয়ে খুব একটা ‘সারপ্রাইজ’ পেতে বাবা-মায়েরা পছন্দ করেন না। বরং আগে থেকে জানা থাকলে, তাদের প্রস্তুতি নিতে অনেক বেশি সুবিধা হয়। কাদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তা মোটামুটি আন্দাজ করা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। জেনে নিন সেগুলো কী।
জিনগত
অনেকেই বলেন, আমাদের পরিবারে বেশি যমজ সন্তান হয়। কথাটা একেবারে ভুল নয়। বিশেষ করে ফ্র্যাটার্নাল যমজ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। যদি আপনার কোনও যমজ ভাই বা বোন থাকে, তা হলে আপনারও যমজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্র্যাটার্নাল যমজদের ক্ষেত্রে মায়ের শরীর ডিম্বাণু বেশি উৎপাদন হয়। একে বলে হাইপারওভিউলেশন। এই প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে মায়েদের ডিএনএ থেকে আসতে পারে।
বয়স
বেশি বয়সে মা হলে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ৩৫ বা ৪০ বছরের বেশি হলে। মেয়েরা যত ঋতুবন্ধের দিকে এগিয়ে যান, ততই তাঁদের শরীরে কিছু হরমোনের বদল আসে। এবং তাতেই যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
উচ্চতা
খুব বেশি লম্বা মেয়েদের যমজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মেয়েদের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষা বলছে ১২৯ মেয়ে যাঁদের যমজ সন্তান হয় তাঁদের সকলেরই উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির বেশি ছিল।
ওজন
যাদের স্থুলতাজাত রোগ বা ওবেসিটি রয়েছে, তাদেরও যমজ বা আরও বেশি সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কী রকম ওজন হলে আপনার পক্ষে সবচেয়ে ভাল হবে, তা নিয়ে আগেই নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিন।
আইভিএফ পদ্ধতির মা
যারা আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হচ্ছেন, তারা সফল হওয়ার জন্য অনেক সময় একাধিক ভ্রুণ শরীরে প্রবেশ করান। একাধিক ভ্রুণ শরীরে প্রবেশ করালে হতেই পারেই আইভিএফ পদ্ধতিতে তার প্রত্যেকটাই সফল হল।
ডায়েট
একটি সমীক্ষা বলছে, যারা ভিগান তারা যমজ সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন বেশি। মানে যারা নিরামিষাসী হওয়ার পাশাপাশি উদ্ভিদজাত দুধ খাচ্ছেন। এর একটি কারণ হতে পারে, দুগ্ধজাত খাবার খেলে শরীরে এমন কিছু পদার্থ যায় যা শরীরের সন্তান উৎপাদন পক্রিয়ায় কিছু বদল আনতে পারে। তবে এই নিয়ে এখনও বিস্তারিত গবেষণা করা হয়নি।