॥ ই-হেলথ২৪ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে ক্যান্সারের প্রকোপ হৃদরোগের পরই দ্বিতীয়। পৃথিবীতে প্রধান ক্যান্সারগুলোর মধ্যে উল্ল্যখযোগ্য হল : পুরুষের বেলায়- ফুসফুস, প্রস্টেট, চামড়া, লিম্ফনোড, অন্ত্র বিশেষত পাকস্থলী, ব্লাড ক্যান্সার।
মেয়েদের বেলায়- স্তন, ফুসফুস, জরায়ু, সার্ভিক্স, লিম্ফনোড, এন্ডোক্রাইন, অন্ত্রের ক্যান্সার।
বাচ্চাদের বেলায়- লিউকোমিয়া, লিমফেমো, সারকোনা, ব্লাটোমা যেমন রেটিনো ক্লাস্টোম, নেফ্রোক্লাটোমা ইত্যাদি।
প্রতিটি ক্যান্সারের জনন এবং এর জন্য রোগীর জেনেটিক মেকআপ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ইনফেকশন, সুষম খাবার গ্রহণ, ফিজিক্যাল বা কায়িক পরিশ্রম কম ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়।
=) ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বস্তু
১) ধূমপানের কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ফুসফুস, এসোফেগাস বা খাদ্যনালী, ব্লাডার মুখ, গলা, কিডনি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার। পান, চুন, জর্দার কারণে মুখগহ্বরের খাদ্যনালীর ক্যান্সার।
২) মদপান সম্পর্কিত ক্যান্সারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মুখগহ্বরের খাদ্যনালী, স্বরনালী, লিভার বা যকৃতের ক্যান্সার, অন্ত্র এবং মলদ্বার, স্তনের ক্যান্সার।
৩) পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত ক্যান্সারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ফুসফুস, রক্ত ক্যান্সার।
৪) রেডিয়েশন, সূর্যরশ্মি, অতিবেগুনী রশ্মি সম্পর্কিত ক্যান্সারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া, চামড়ার ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সার।
৫) খাদ্য প্রিজারভেটিভ সম্পর্কিত ক্যান্সারগুলো হল- অন্ত্র বিশেষত পাকস্থলীর ক্যান্সার।
৬) কেমিক্যালস সম্পর্কিত ক্যান্সারগুলো হল- ব্লাডার ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার।
৭) ইনফেকশন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী সম্পর্কিত ক্যান্সারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- পাকস্থলীর ক্যান্সার, সার্ভিক্সের ক্যান্সার, ব্লাডার ক্যান্সার ইত্যাদি।
৮) অনিয়ন্ত্রিত যৌনকাজ, বেশি লোকের সঙ্গে সঙ্গম করা, মুখে মলদ্বার এবং যোনী দিয়ে সঙ্গম করলে এসব জায়গায় ক্যান্সার তৈরি হয়।
৯) অতিরিক্ত মেদস্থূলতা, চর্বি, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস্বল্পতার কারণে অন্ত্র খাদ্যনালীর ক্যান্সার।
১০) অতিরিক্ত হরমোনজনিত এন্ডোমেট্রিয়াম, প্রস্টেট।
১১) ওষুধজনিত- লিভার ক্যান্সার।
=) ক্যান্সার প্রতিরোধে কী কী করা প্রয়োজন
১) প্রতি বছর নিয়মিত কিছু টেস্ট করা ডাক্তারের পরামর্শমতো, যেমন রক্তে হিমোগ্লাবিন, টিসি, ডিসি, ইএসআর, প্রস্রাব ও পায়খানা রুটিন, ওবিটি, বুকের এক্স-রে বা ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি দেখা। শরীরে কোন গোটা, চাকা, দলা হলে এফএনএসি বা বায়োপসি করা।
২) শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো।
৩) ধূমপান, মদপান, নেশা-জাতীয় দ্রব্য পরিহার।
৪) সুষম খাবার গ্রহণ, পরিমাণমতো আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ।
৫) অতিরিক্ত চর্বি, জাংক ফুড যেমন বার্গার, পিজা, স্যান্ডউইচ, সফট ড্রিংক না খাওয়া।
৬) সূর্যরশ্মি থেকে নিজেকে প্রতিরোধ করা।
৭) নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃংখল জীবন যাপন। বহুগামিতা পরিহার।
৮) ধূমপান তামাকজাত নেশাজাতীয় ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা।
৯) মদপান থেকে বিরত থাকা।
১০) অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে বাঞ্ছিত ওজন (বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী যাকে ইগও বলে)।
১১) শারীরিক ও কায়িক পরিশ্রম করা।
১২) অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া বা না খাওয়া।
১৩) সূর্যরশ্মি, অতিবেগুনী রশ্মি, আলট্রাভায়োলেট রে থেকে দূরে থাকা।
১৪) প্রচুর ভিটামিন, আঁশযুক্ত, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার বিশেষত তাজা ফলমূল, শাকসবজি, প্রচুর পানি গ্রহণ।
১৫) বেশি দিন ফ্রিজে থাকা খাবার, আইসক্রিম, চকলেট চিপস, সফট ড্রিংক না খাওয়া।
১৬) যে কোন ধরনের প্রদাহ হলে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ গ্রহণ।
=) কিছু লক্ষণ যা প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
১) সঠিক খাবার গ্রহণ করা সত্ত্বেও ওজন কমে গেলে। অরুচি, ক্ষুধামন্দা হলে।
২)) শরীরে ত্বকের কোন রঙ, আঁচিল, তিল বড় হলে, রঙের পরিবর্তন হলে।
৩) স্বাভাবিক প্রস্রাব বা পায়খানায় অভ্যাস পরিবর্তন হলে।
৪) প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হলে, রক্তবমি হলে।
৫) তিন মাস ধরে খুসখুসে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে।
৬) শরীরের কোথাও কোন চাকা বা দলা তৈরি হলে।
৭) মহিলাদের স্তনে, বগলে, শরীরের কোথাও কোন চাকা বা দলা তৈরি হলে।
৮) মহিলাদের মাসিকের কোন পরিবর্তন যেমন খুব বেশি স্রাব, দুই মাসিকের মধ্যে ঋতুস্রাব, মেনপজাল মহিলাদের স্পটিং বা রক্তপাত হলে।
৯) গলার স্বরের পরিবর্তন হলে।
১০) মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়া। হঠাৎ হাড় ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি।