বড় ধরনের অনিয়মের কারণে বন্ধ রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের কেনাকাটার কাজ। দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়ভাবে রামেকে সকল ঠিকাদারি সংশ্লিষ্ট কাজসহ অন্যান্য বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে চলেছে একটি শক্তিশালী চক্র। সেই ঠিকাদারি চক্রের কারণে বতমানে ১৬ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কাজও ব্যহত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি মূল্যে বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকার মালামাল হাসপাতালে সরবরাহের কাজ করে আসছে একটি আলোচিত স্থানীয় শক্তিশাহী সিন্ডিকেট চক্রের ৪টি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ হাসপাতালের ১৬ কোটি টাকার উচ্চ প্রযুক্তির ভারি চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার টেন্ডারেও রীতিমতো অংশ নেয় সে সকল সিন্ডিকেটের সদস্যবৃন্দ।
টেন্ডার জমার শেষ তারিখ ছিল ৪ এপ্রিল। ঠিক আগের মতোই তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দর দিয়ে টেন্ডার দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ওই সিন্ডিকেটের দরকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। রিপোর্ট দাখিল করার পর পরই ঘটে মূল ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার নির্বাচনের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে এক মাস ধরে। তাই এমন রিপোর্টে নাখোশ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সিন্ডিকেট। পরিস্থিতি টের পেয়ে চক্রটি টেন্ডারটি বাতিল করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
জানা যায়, ১৫ মে এর মধ্যেই এ বিষয়ে কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে ১৬ কোটি টাকার পুরোটাই ফেরত যাবে ফান্ডে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মার্চ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৬ কোটি টাকার হাইটেক মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র আহ্বান করেন। যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে- ডায়াথার্মি মেশিন, প্যাসেন্ট মনিটর, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, দুই ধরনের অপারেশন টেবিল, গাইনোকলোজিক্যাল অপারেশন টেবিল, এইচডি কলপস্কোপিক ভিডিও ক্যামেরা, ইলেক্ট্রো-সার্জিক্যাল পাওয়ার ইউনিট, হিস্টারেস্কো পিকচার সিস্টেম, গ্যাস্ট্রোস্কপি ও কোলোনস্কপিক উচ্চ প্রযুক্তির ভিডিও ক্যামেরা, ইআরসিপি মেশিন, হাইয়েন্ড ইকো-মেশিন, ইনফিউশন পাম্প, পেসমেকার, ডায়ালিসিস মেশিন ও চেয়ার, হাইয়েন্ড ফোর-ডি কালার ডপলার ও আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার, ফোর চ্যানেল ইএমজি মেশিন ও ডিজিট্যাল ইসিজি মেশিন, ভ্যাসেল সেলার, ল্যাপারোস্কপিক মেশিন, নিউরো-সার্জিক্যাল মাইক্রোস্কোপ, শিশু ল্যাপারোস্কপিক মেশিন, সিস্টোস্কপিক সেট, হাইস্পিড ডাবল কপি ইএনটি পাওয়ার সিস্টেম, আইসিইউ ব্রেন মনিটর সিস্টেম, অটোমেটেড ইম্যুনাসি অ্যানালাইজার ও ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইজারসহ মোট ৫২টি আইটেম।
দরপত্র কেনা ও দাখিলের শেষ দিন ছিল ৪ এপ্রিল। ১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেন। ৭ দিনের মধ্যে দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়নও সম্পন্ন হয়। কমিটি নির্ধারিত সময়েই দর বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কর্তৃপক্ষ এক মাস ধরে ঠিকাদার নির্বাচনের কাজে গড়িমসি শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার জানান, কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডেকেট রামেক হাসপাতলে যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তারা প্রায় সব টেন্ডারেই বাজার মূল্যের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি দর দিয়েও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সকল ঠিকাদারি কাজ গুলো পেয়ে যান। অথচ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাদের চেয়ে কম দরে দরপত্র জমা দিয়েও কাজ পায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওই চক্রের অঘোষিত গভীর সমাঝোতায় হচ্ছে এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
গত নভেম্বরেও একইভাবে এই সিন্ডিকেট ১৫ কোটি টাকার এমএসআর প্রায় ২৮ কোটি টাকায় সরবরাহ করেছে। আলোচিত সিন্ডিকেটের চারটি প্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এই টেন্ডারে অংশ নিয়ে বাকি ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দর দেয়। তবে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এবার বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জষ্যপূর্ণ দরগুলো গ্রহণের পক্ষে মতামত দেয়ার সঙ্গে আলোচিত সিন্ডিকেটের চারটি প্রতিষ্ঠানের দরকে অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করেছেন। যার কারণে বিপাকে সেই ৪ টি সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ। আর একারণেই তারা রি-টেন্ডার করার পায়তারা করছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ও টেন্ডার কমিটির সদস্য ডা. বিধান চন্দ্র ঘোষ বলেন, হাইটেক মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার এই টেন্ডারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দরকারি নতুন যন্ত্রপাতি এই টেন্ডারে নেয়া হবে। যাতে করে রামেকের চিকিৎসায় বড় অগ্রগতি ঘটবে। কিন্তু সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে হেরফের হলে সমস্যা সকলেরই।
টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে জরুরি সভা হবে। এরপর সে সভায় সিদ্ধান্ত হবে। নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না গেলে টাকা ফেরত যাবে ফান্ডে। যা কারো জন্যই মঙ্গলকর নয়।