আজ বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করলেন প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীন মোহম্মদ নুরুল হক স্যার। দ্বায়িত্বভার গ্রহণের প্রাক্কালে তাঁকে যে রাজসিক সম্বর্ধনা দেওয়া হলো তা ছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ও ব্যতিক্রমী, যদিও এসময় অতিউৎসাহী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দৃষ্টিকটু নর্তন-কুর্দন শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছিলো!
বিদায়ী উপাচার্যের দ্বায়িত্বভার গ্রহনের ক্ষণটিও আজকের মতো এমন রাজসিক না হলেও অনেকটা উৎসাহ ও উদযাপনপূর্ণই ছিলো কিন্তু আজ তার বিদায়টা যে মোটেও সুখকর হয়নি বিগত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহেই তা সকলের কাছেই প্রতীয়মান হয়েছে।
বিদায়ী উপাচার্যের বিদায় কেন এমন বিব্রতকর ও অসম্মানজনক হলো সে উপাখ্যান লিখতে গেলে বোধকরি এ লেখা আজ আর শেষ হবে না। তাই সেদিকে আর নাইবা গেলাম।
বিগত প্রায় একবছরের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ঘাটলেই যে কেউ বিদায়ী উপাচার্যের অসম্মানজনক বিদায়ের অসংখ্য কারন খুঁজে পাবেন আশা করি। দেশের প্রথম সারির পত্রপত্রিকাগুলোতে বিদায়ী উপাচার্যের বিভিন্ন প্রশ্নবিদ্ধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ধারাবাহিকভাবে যে পরিমান রিপোর্ট ছাপা হয়েছে তাতে করে যেকোন সময়ের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীহীনভাবে হার মানিয়েছেন বলা যায়!
অন্যদিকে কর্মচারী থেকে শুরু করে অধ্যাপক পর্যন্ত কতিপয় মেরুদণ্ডহীন চাটুকর ফ্যাকাল্টি নিজেদের ডিপার্টমেন্ট ফেলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন প্রত্যূষে বিদায়ী উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে কর্ডন করে যেভাবে তার রুমে পৌঁছে দিতো তার নজির এইদেশে তো দূরে থাক সারাবিশ্বের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কিনা আমাদের জানা নেই।
এই দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও বোধকরি প্রতিদিন তাদের অফিস শুরুর আগে এমন প্রটোকল পাননা!
বিদায়ী উপাচার্যের জন্য নির্মম পরিহাস হলো যেসব ফ্যাকাল্টিরা নিজেদের গাটস ভুলে এমন নতজানু রীতি-নীতিতে নিত্য অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আজ উপাচার্যের বিদায়ের ক্ষনে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি বরং তাদের অনেককেই নতুন উপাচার্যের রাজসিক সম্বর্ধনার সারিতে দেখা গেছে! এভাবেই হয়তো নতুন উপাচার্যের চাটুকারী করতে এদের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকবে!
আশা করি, নতুন উপাচার্য এদের রাশ টেনে ধরবেন।
আশা করি,নতুন উপাচার্য প্রতিদিন প্রত্যূষে এমন রীতিহীন অনাবশ্যক মর্নিং প্রটোকল নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
আশা করি, নতুন উপাচার্য তাঁর চারিপাশে কোন স্বার্থাণ্বেষী দূর্ভেদ্য বলয় তৈরি হতে দিবেন না।
আশা করি,নতুন উপাচার্য তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেকোন স্বার্থাণ্বেষী বলয়কে অগ্রাহ্য করে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে প্রাধান্য দিবেন। আশা করি, প্রয়োজনে সকল ডীনকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে পাশে রাখবেন।
আশা করি,বিদায়ী উপাচার্যের এমন বিব্রতকর ও অসম্মানজনক বিদায় দেখে নতুন উপাচার্য সতর্ক হবেন এবং এই ধরনের চাটুকর গোষ্ঠী থেকে নিজেকে যোজন যোজন দূরে রাখবেন।
আশা করি, সদ্য নিযুক্ত উপাচার্যকে আজ যে উষ্ণ ও রাজসিক সম্বর্ধনা দেওয়া হলো তাঁর বিদায়টাও যেন এমনই উষ্ণ ও হৃদত্যাপূর্ণ হয়, যেন বিদায়ী উপাচার্যের মতো এমন বিবৃতকর ও অসম্মানজনক না হয়।
আমরা এমনটাই আশা রাখতে চাই।
লেখক : আতিকুজ্জামান ফিলিপ
চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ, এবং সাবেক সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ