■ ইহেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি ডেস্ক
তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবার করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। নেই অবকাঠামো ও চিকিৎসা দেয়ার যন্ত্রপাতি। সেবাদানকারীরা সময়মতো কর্মৰেত্রে হাজির হন না। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের শতকরা মাত্র ৫৭ ভাগ দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের অনেকে কর্মদিবসের পূর্ণ সময় সেবা কেন্দ্রে থাকেন না। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র দেখা গেছে।
দেশের ১৩ জেলার ৩৭ উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী চিকিৎসক ও চিকিৎসার পর গবেষণা পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক এলাকায় চিকিৎসকের শতকরা ২০ ভাগ, নার্সের ১৯ ভাগ ও স্বাস্থ্যকর্মীর ৭ ভাগ এবং অন্যান্য কর্মচারীর ১৯ ভাগ পদ শূন্য হয়ে আছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সেবাদানকারীদের সকলেই কাজে যোগদান করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যথাস্থানে দায়িত্ব পালন করছেন শতকরা মাত্র ৫৭ ভাগ। তাঁদের অনেকেই আবার কর্মদিবসের পূর্ণ সময় সেবাকেন্দ্রে থাকেন না। আর অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন না। নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অনেকে কর্মস্থল থেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তাঁদের অনেকের বিভাগ ও জেলা শহরে থাকার মানসিকতাই বেশি। তারা গ্রামাঞ্চলে মন বসাতে পারেন না। চাহিদার তুলনায় মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি কম থাকায় সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না। থানা স্বাস্থ্য কমপেস্নঙ্গুলোর ব্যবস্থাপত্রে অবহেলার চিত্র ফুটে উঠে। ছোট একটি কাগজের টুকরোয় প্রেসক্রিপশন করা হয়, যেখানে রোগীর নাম ও বয়স লেখার পর বর্ণনা ও ওষুধের নাম, মাত্রাসহ বাড়তি কিছু লেখার জায়গা থাকে না। এতে সঠিকভাবে ওষুধ ও রোগের নামসহ অন্যান্য ডাক্তারি নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয় না। উক্ত ব্যবস্থাপনা রোগীর ফলোআপ কাজে আসে না। রোগী ও তার অভিভাবকরা তা সংরৰণ করেন না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এখনও স্থায়ীভাবে কোন সেবা প্রদানকারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে অনিয়মিতভাবে সেবা প্রদানকারীরা সেখানে সেবা প্রদান করে থাকেন।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব জানান, স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়মিত ও জোরালো করা উচিত। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মস্থলে অবস্থান করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মানসিকতা সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী প্রশিৰণের ব্যবস্থা করা দরকার। সেবাকেন্দ্র এলাকার জনগণ ও সেবা প্রদানকারী দ্বারা প্রসত্মুতকৃত কার্যকর সিটিজেন চার্টার তৈরি করা উচিত। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দ্রম্নত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা দরকার।
এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার করম্নণ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও মন-মানসিকতাকে দায়ী করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা: মাখদুমা নার্গিস। তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করে তোলা উচিত। স্বাস্থ্যসেবার জন্য দেশে পর্যাপ্ত জনবল ও উপকরণ রয়েছে। সমস্যা রয়েছে ব্যবস্থাপনা ও মন-মানসিকতায়। সরকার পরিবর্তন হলেই দলীয় বিবেচনায় অনেক ভাল কাজও পরিত্যক্ত হয়ে যায় বলে তিনি আৰেপ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগ ভালভাবে বাসত্মবায়িত হলে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বেশ উন্নতি ঘটবে। বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক আ ব ম ফারম্নক বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী সরকারী মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা উচিত। সরকারীভাবে পাঠানো অনেক ওষুধ ও যন্ত্রপাতি লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ওষুধের বিষয়ে তিনি বলেন, বেশির ভাগ নকল ওষুধ বিক্রি হয় গ্রামাঞ্চলে। বিগত সময়ে ড্রাগজনিত দুর্নীতির কোন বিচার হয়নি। এতে ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎসাহিত হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার ওপর আরেকটি আঘাত অপেৰা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান ১৫ প্রকল্প বন্ধ হতে চলেছে। অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত অর্থবছরের তিন শ’ কোটি টাকার জায়গায় চলতি অর্থবছরে ওই ১৫ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা । এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এতে দেশের জনস্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক স্থবিরতা নেমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বৃহৎ কর্মসূচী ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা ((এইচএনপিএসপি) কর্মসুচীর মেয়াদ গত বছরের জুন মাসে শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সেক্টর কর্মসূচী প্রণয়নে বিলম্বের কারণে এইচএনপিএসপির মেয়াদ ২০১১ পর্যনত্ম বৃদ্ধি করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধানত্মের সময় নির্দেশনা দেয়া হয়, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ১৯ অপারেশনাল পস্ন্যানের বরাদ্দ টাকার ব্যয় সংকোচন করে বর্ধিত সময় ২০১১ সাল পর্যনত্ম কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে কর্মসূচীর মেয়াদ বৃদ্ধির বিপরীতে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ কমে যায় কয়েকগুণ।
সুত্র : জনকণ্ঠ