নির্বাচিত
নওগাঁয় দীর্ঘদিন বন্ধ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভোগান্তিতে রোগীরা

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে সেবা ভোগান্তিতে পড়েছেন ইউনিয়নবাসী। কবে মিলবে সেবা তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। আধুনিক সেবা পেতে ২৫ কিলোমিটার দূরে নওগাঁ জেলা শহরে আসতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে চিকিৎসাসেবা চালুর দাবি ইউনিয়নবাসীর।
জানা গেছে, সদর উপজেলার প্রত্যন্ত হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। এ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামে বাজারের পাশে অবস্থিত। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তার খসে পড়া ও দেয়াল ফাটল ধরায় জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় গত দুই বছর আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তারপরও একজন চিকিৎসক দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) লিখে দেওয়া হলেও কোনো ধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হতো না। একজন অফিস সহায়কও ছিলেন।
এ ছাড়া পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডিব্লউভি) দিয়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবাপ্রদান করা হচ্ছিল। তবে গত ৪ মাস আগে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক, অফিস সহায়ক ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শককে অনত্র বদলি করা হয়। এরপর থেকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে সবধরণের সেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আধুনিক সেবা পেতে তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরে আসতে হয়। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি হয়রানি হতে হয় এবং বাড়তি অর্থ খরচ হয়ে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে সেবা নিতে এসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় আবার অনেকে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণ করাসহ দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা চালু করার দাবি ইউনিয়নবাসীর।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের বাসীন্দা হাদেশ আলী প্রামাণিক বলেন, ‘আগে সপ্তাহে ৪-৫ দিন আমরা সেবা পেতাম। কিন্তু ২ বছর থেকে সেবার কার্যক্রম ধীর হতে থাকে। ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেও হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাওয়া যেতো না। আমরা বাইর থেকে কিনে নিতাম। কিন্তু ৪ মাস থেকে চিকিৎসাসেবা একদমই বন্ধ। এতে করে আমাদের ভোগান্তীতে পড়তে হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সায়েদ আলী, খোদাবক্স, আনিসুর রহমান, মোজাহার আলী সহ অনেকেই বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ আছে। প্রাথমিক চিকিৎসাও পাওয়া যাচ্ছে না। নারী ও শিশুরা যে চিকিৎসা পেতো তা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে জেলা শহরে যেতে হয়। অনেক গরীব মানুষ অর্থাভাবে ভাল সেবাও পায়না। জেলা শহরে যাওয়ার সময় রাস্তায় রোগী মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’
হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জছিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর থেকেই চিকিৎসাসেবা বেহাল অবস্থা। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় ইউনিয়নবাসীদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। তারপরও সেবা চালু রাখতে আমার পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সার্বিক ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনিহা। পরিবার পরিকল্পনা অফিসে বার বার জানানোর পর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি নতুন ভবন নির্মাণ করাসহ জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।’
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদীন বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসাসহ দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’