স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিরাজমান অব্যবস্থার অন্যতম কারণ অব্যবস্থাপনা, ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি অবহেলামূলক অবান্ধব নীতি প্রণয়ন, দুর্নীতি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব বলে জানান চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)’।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, চিকিৎসাসেবা শুধু নয়, চিকিৎসা শিক্ষাতেও সমভাবে নৈরাজ্য বিরাজমান। রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে কোনও তদন্ত ছাড়াই সরাসরি ডাক্তারদের দোষী করে সংবাদ শিরোনাম অনেক সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চিকিৎসাখাতে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা নিয়ে ‘এফডিএসআর’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, অভিযুক্তের বক্তব্য ছাড়া কেবল অভিযোগ তুলে ধরলে বিষয়টি একপাক্ষিক হয়ে যায়। দেশে চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল বা এ-সংক্রান্ত অভিযোগ নিরসনের জন্য বিএমডিসি আছে। উন্নত দেশে প্রতিবছর পঞ্চাশ হাজারের বেশি রোগী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাই চিকিৎসাজনিত ভুল হয় না, এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে সেই ভুল ইচ্ছাকৃত কিনা অথবা এটির জন্য অন্য কেউ দায়ী কিনা, সেটা না জেনে ঢালাও সংবাদ পরিবেশন করলে সাধারণ জনগণের চিকিৎসা ব্যাহত হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চিকিৎসাজনিত ভুল অস্বাভাবিক নয়। এরজন্য রোগীকে ক্ষতিপূরণসহ চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের বিধান আছে। আমরা মনে করি রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের স্বার্থে এই অভিযোগগুলোর বিহিত হওয়া জরুরি। তাই বলে একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার ও জামিন প্রদান না করা সঠিক হতে পারে না।
বাংলাদেশে অধিকাংশ রোগের চিকিৎসায় স্ট্যান্ডার্ড কোনও ট্রিটমেন্ট প্রটোকল তৈরি করা হয়নি। অথচ, অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কাজটা আদৌ কঠিন নয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল সোসাইটি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করে তারা বলেন, রোগীকে অজ্ঞান করা নিয়ে উদ্ভূত জটিলতায় সম্প্রতি যে তিন জন রোগীর মৃত্যু হলো, তা আমাদের আবার ট্রিটমেন্ট প্রটোকলের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। বর্তমান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বলা হচ্ছে, কেবলমাত্র এনেসথেটিস্টরাই রোগীকে ঘুম পাড়ানো বা অজ্ঞান করার কাজটা করবেন। বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর কোনও দেশের প্রেক্ষিতে এটি বাস্তবসম্মত কোন ভাবনা নয়। বরং, এক্ষেত্রে আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট প্রটোকল থাকা জরুরি, যেখানে লেখা থাকবে একজন ডাক্তার কখন, কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে ‘সিডেশন’ দিতে পারবেন এবং কখন সিডেশন ও অজ্ঞান করার জন্য একজন এনেসথেসিস্টদের দরকার হবে।
বক্তারা মনে করেন, কোনও চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যদি এসব ‘স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস’ অনুসরণ করা হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও তখন ঢালাওভাবে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উত্থাপিত হবে না।
সব চিকিৎসাকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরাসহ উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার দাবিসহ ১৪টি প্রস্তাব পেশ করেন চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)’।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এফডিএসআর’র উপদেষ্টা ডা. আবদুন নূর তুষার। এ ছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুগ্ম মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী, ডা. ফরহাদ মঞ্জুর, ডা. শাহেদ ইমরান, ডা. অসিত মজুমদার, ডা. এহছান প্রমুখ।