বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় একসময় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষণার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।
দেশীয় ৭০টি ওষুধ কোম্পানিতে উৎপাদিত রেনিটিডিন গ্রুপের ওষুধের ভাগ্য নির্ধারণে আগামী রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) জরুরি সভা ডেকেছে দেশের ওষুধের বাজারের সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
অধিদফতরটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান রাত সোয়া ৯টায় জাগো নিউজকে বলেন, জিএসকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুঁটিয়ে নিয়েছে। তবুও বাজারে তাদের রেনিটিডিন থাকতে পারে। এ ওষুধগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তবে দেশীয় ৭০টি কোম্পানির রেনিটিডিন বাজার থেকে প্রত্যাহারের আগে সেগুলো সত্যিই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগামী রোববার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির (বিএপিআই) নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় একসময় মুড়ি-মুড়কির মতো চলত রেনিটিডিন ট্যাবলেট। বিভিন্ন খ্যাতনামাসহ ছোটবড় সব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ ট্যাবলেট উৎপাদন করত। রেনিটিড ও রেনিডিন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এখনো দেশের বাজারে ওষুধটি চলছে। প্রতি পিস ট্যাবলেটের খুচরা মূল্য তিন টাকা।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় একসময় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ভারতের বাজার থেকেও রেনিটিডিন গ্রুপের ‘জ্যানটেক’ নামের এই ট্যাবলেট প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে কোম্পানিটি।
জিএসকের এ ঘোষণার পর দেশের বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রিত রেনিটিডিন গ্রুপের ওষুধের কী হবে-তা নিয়ে কানাঘুষা চলছে। এ ওষুধটি কি বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে, না কি থাকবে? যদি প্রত্যাহার হয় তবে কী উপায়ে হবে? বলছেন তারা।
দেশের সামগ্রিক ওষুধের বাজার দেখভালের দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। তবে জিএসকের এ ঘোষণার ব্যাপারে এখনো কিছু্ই জানে না ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। রাত ৮টার দিকে অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের কাছে রেনিটিডিনে ক্যান্সারের উপাদানের উপস্থিতির কারণে জিএসকে বাজার থেকে ওষুধটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে-এমনটি জানালে তিনি এ সম্পর্কে এখনো কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, গত ৩০-৪০ বছর ধরে ওষুধটি বাজারে রয়েছে। কখনো কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। তবে একসময় ওষুধটি খুব চললেও বর্তমানে কম চলে। তিনি এ সম্পর্কে আরও জেনে নিশ্চিত হয়ে মন্তব্য করবেন বলে জানান।
আজিমপুরের একটি ফার্মেসি দোকানের মালিক আরিফ আহাম্মদ জানান, ২১টির এক পাতার ওষুধের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা। তিনি বলেন, একসময় রেনিটিডিন গ্রুপের ওষুধ মুড়ি-মুড়কির মতো চললেও এখন নতুন নতুন ভালো ওষুধ বাজারে আসায় কম চলে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে রেনিটিডিনে ক্যান্সারের উপাদান নিয়ে দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রকাশিত প্রতিবেদনটির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই। এ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধে গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল সেবনকৃত রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির জেরে বিশ্ববাজার থেকে ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষণা এসেছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সারের উপাদানের উপস্থিতির বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর বিশ্বের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) এ ঘোষণা দিয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) পূর্ব সতর্কতা হিসেবে গ্যাস্ট্রিকের জনপ্রিয় ট্যাবলেট রেনিটিডিন বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের বাজার থেকেও রেনিটিডিন গ্রুপের ‘জ্যানটেক’ নামের এই ট্যাবলেট প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জিএসকে।
পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখতে রেনিটিডিন ওষুধ সেবন করা হয়। একেক দেশে একেক নামে এ ওষুধ বিক্রি হয়। গ্যাসের চিকিৎসায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রেনিটিডিন।
ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজার গবেষণা সংস্থা এআইওসিডি আওয়াকস ফার্মা ট্রাক বলছে, শুধু ভারতেই প্রায় ৬৮৮ কোটি রুপির ব্যবসা করছে রেনিটিডিন। রেনিটিডিন ছাড়াও একই ব্র্যান্ডের রেনট্যাক, রেনট্যাক-ওডি, আর-লক, রেনিটিনও গ্যাসের ট্যাবলেট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
বিশ্বের বাজার থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন রেনিটিডিন তুলে নিলেও অন্যান্য সংস্থা গ্যাসের চিকিৎসার এই ওষুধ তুলে নিচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভারতের শীর্ষ ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) কয়েক দিন আগে দেশটির সব রাজ্যের ওষুধ বিভাগের কাছে একটি চিঠি ইস্যু করে। ওই চিঠিতে রাজ্যের কোথাও এখনো রেনিটিডিন উৎপাদন হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের পর ডিসিজিআইকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। ভারতের শীর্ষ এই ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চিঠি ইস্যুর পরপরই গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাজার থেকে রেনিটিডিন তুলে নেয়ার ঘোষণা দিল।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট রেনিটিডিন সেবনের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। গত ১৩ সেপ্টেম্বরের ওই সতর্ক বার্তায় মার্কিন এফডিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, রেনিটিডিনে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে পরিচিত ‘এনডিএমএ’র স্বল্পমাত্রার উপস্থিতি রয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী এ উপাদান অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য এবং পানিতেও পাওয়া যায়।
গত বছর মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ ব্লাড প্রেসারের ওষুধ ভালসার্তান এবং লোসার্তানের ব্যাপারে তদন্ত করে। ব্লাড প্রেসারের এ দুই ওষুধে উচ্চ মাত্রায় এনডিএমএর উপস্থিতি পায় মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। পরে এই ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
রেনিটিডিনে স্বল্পমাত্রায় এনডিএমএ পাওয়া যাওয়ায় এখনো উচ্চ সতর্কতা জারি করেনি মার্কিন ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন; তবে তদন্ত চলছে। এর মাঝেই গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন স্বেচ্ছায় তাদের এই ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার শুরু করেছে। রেনিটিডিনে যে দূষণকারী উপাদান পাওয়া গেছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না-সে বিষয়ে জানতে পরীক্ষার জন্য পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বাজার থেকে ওষুধটি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে রেনিটিডিন ও রেনিটিডিন গ্রুপের অন্যান্য সব ট্যাবলেট স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা স্যানডোজ। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের এক মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববাজারে রেনিটিডিন উৎপাদন, বাজারজাত ও সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।