প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।’ ‘জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার আরও ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর জন্য পর্যায়ক্রমে ৮টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতকি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬ বছর। আর এখন তা ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। আমরা মা ও শিশুর মৃত্যু হার কমিয়েছি। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে শুধু সরকার একা নয়, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা মানুষের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারব। বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার জন্য এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। শিশুদের ইনকিউবেটর মেশিন আনার বিষয়ে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তার ও নার্সদের আরও যত্নবান হতে হবে। বিশেষায়িত নার্স তৈরি করতে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের বাইরে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশেও এই ব্যবস্থা করা হোক।’ ‘সারাদেশের হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সাপোর্টিং স্টাফ। মেডিক্যাল শিক্ষার প্রসারে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার সুফল জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ও গ্যাভি অ্যাওয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।‘আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথিক, ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হয়। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর চাহিদা বাংলাদেশে রয়েছে। তাই এই ধরনের চিকিৎসার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প বাস্তবায়নে মোবাইল ফোন এবং টেলিমেডিসিন পদ্ধতির মাধ্যমেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।’ গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গ্রামের ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। সেখানে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছে। প্রত্যেকটি উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক পরিমাণ কম রয়েছে। আমরা সেগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ৮৫ কোটিরও বেশি পরিদর্শনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের এ উদ্যোগ সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
সকলের সুস্থতা নিশ্চিতকল্পে ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার-শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) থেকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় জিপ গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।