দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে যায় না, যা উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, জাতীয় পর্যায়ের নতুন তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় নথিভুক্ত নয়।
ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে। সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে, তারা তাদের বয়স অনুপাতে শিক্ষাগতভাবে গড়ে দুই বছরেরও বেশি সময় পিছিয়ে।
বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম বলেন, এই প্রথম বিবিএস প্রতিবন্ধী ব্যক্তি-সংক্রান্ত একটি জাতীয় জরিপ পরিচালনা করেছে। এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য প্রতিবন্ধী শিশুরা বেড়ে ওঠার সময় কত প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তা তুলে ধরেছে। রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রণয়নে সরকারকে সহায়তা করবে।
জরিপের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের ১ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’-এ সংজ্ঞায়িত ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিকতার অন্তত একটি প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বেঁচে আছে। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু অন্তত এক ধরনের ‘ফাংশনাল ডিফিকাল্টিস’ রয়েছে। ফাংশনাল ডিফিকাল্টিসের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে রয়েছে দেখা, শোনা, আঙুল ব্যবহার করে সূক্ষ্ম কাজ করা, যোগাযোগ, শেখা, খেলা বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ।
জরিপে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা কাজ করার বয়সি, তাদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কর্মরত, যেখানে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাজে নিযুক্ত না থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর যদিও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সরকারিভাবে নিবন্ধিত, তাদের ৯০ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে ভাতা পান, বেশিরভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই, প্রায় ৬৫ শতাংশই অনিবন্ধিত থেকে যায়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে কতজন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা তুলে ধরেছে নতুন এই তথ্য। এই শিশুদের জন্য আমাদের আরও অনেক কিছু করা দরকার। আমাদের তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সেবা দিতে হবে এবং এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা উন্নতি করতে পারে।