ক্যারিয়ার আর মানব সেবা এক হয়ে গেছে যে পেশা তার নাম চিকিৎসা পেশা। হারারো পেশার মধ্যে তাই সকলের কাছে আদর্শ ক্যারিয়ার এটি। চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে আজীবন উপার্জন করা সম্ভব। বরং এই পেশার সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে এই পেশাতে নিয়োজিত চিকিৎসকের যত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে ততই আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমাদের দেশে চাকরির পদের তুলনায় চাকরিপ্রাথর্ীর সংখ্যা দিন দিনই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে প্রতিবছরই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা।
বাস্তবতার নিরীক্ষে বাংলাদেশে প্রয়োজন বিশেষায়িত শিক্ষার যার মাধ্যমে শিক্ষা সম্পন্ন করার পরপর কেউ যেন চাকরির পিছনে না ছুটে স্বনির্ভরতার সাথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হলে এবং সফলভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হলে আপনার ক্যারিয়ার আজীবন সচল থাকবে কোন বিরতি ছাড়াই।
পরিকল্পনা : নিজেকে যদি ভবিষ্যতে একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই। মূলত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রকৃত সময়। কেননা উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই চিকিৎসক হিসেবে শিক্ষা অর্জন করার লক্ষ্যে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
কোথায় শিখবেন : বাংলাদেশে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করতে হলে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সরকার পরিচালিত মেডিকেল কলেজগুলো দেশের বিভিন্ন জেলাতে অবস্থিত। উন্নত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার পরিচালিত এই মেডিকেল কলেজ সমূহ হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, শহিদ জিয়া মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ।
সরকার পরিচালিত এই ১৪টি মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত ৩৪টি মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করা সম্ভব।
ভর্তির সময় ও যোগ্যতা : উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার ৩/৪ মাস পরেই এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। দেশের সবকটি মেডিকেল কলেজে একই সময় অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়ে থাকে। এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করতে হলে একজন ছাত্র-ছাত্রীর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি/ সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে উন্নততর জিপিএ’র অধিকারী হতে হয়। সেই সাথে আবেদনকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই জীব বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে এইচএসসি পাশ করতে হয়।
শিক্ষা পদ্ধতি : আমাদের দেশে চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ৫ বছর মেয়াদী এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। সেই সাথে ১ বছর মেয়াদী ইন্টার্নশীপ সম্পন্ন করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে।
তবে প্রাথমিক ভাবে একজন সদ্য পাশ করা চিকিৎসকের ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ১/২ বছর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। কেননা এতে তার কাজের পরিধি এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। যা তার ভবিষ্যত কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়ে থাকে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কাজ করার পরে একজন ব্যক্তি যে কোন হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে আবার নিজ উদ্যোগে তার সুবিধাজনক স্থানে চেম্বার স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারে। এই পেশার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকের অফিস সময়ের পরবতর্ী সময়েও নিজস্ব চেম্বার স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে সক্ষম। সুনির্দিষ্ট কিছু সময় চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি যে কেউ ইচ্ছা করলে উচ্চতর ডিগ্রী এবং প্রশিক্ষণ অর্জন করতে সক্ষম হয়ে থাকে। সেই সাথে যে কোন মেডিকেল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করনের মাধ্যমে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে সবসময় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
উচ্চতর প্রশিক্ষণ : ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যেকোন পেশার ন্যায় এই পেশারও উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থে অন্যান্য যেকোন পেশার তুলনায় এই পেশায় উচ্চতর প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পরবতর্ী পর্যায়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত প্রশিক্ষণ প্রদান করে চলেছে। মূলত চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় বিএসএমএমইউ ডিপেস্নামা থেকে মাস্টার্স ডক্টোরাল ডিগ্রী প্রদান করে থাকে। এখানে উন্নততর ডিগ্রী অর্জনের জন্য রয়েছে ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের অন্তর্গত এমডি (৩ বছর মেয়াদী), এমফিল (২ বছর মেয়াদী), এফসিপিএস (দেড় বছর মেয়াদী), ডিপেস্নামা (১ বছর মেয়াদী)। ফ্যাকাল্টি অব সার্জারীর অন্তর্গত রয়েছে এমডি (৩ বছর মেয়াদী), এমএস তিন বছর মেয়াদী), এফসিপিএস (দেড় বছর মেয়াদী), ডিপেস্নামা (১/২ বছর মেয়াদী)। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তারপরও দিন দিন শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। চাহিদার তুলনায় দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের স্বল্পতার কারণে এই পেশায় যে কেউ ক্যারিয়ারে সফলতা আনতে সক্ষম হয়ে থাকে। এই পেশার মূল মন্ত্র হিসেবে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হয় সর্বাগ্রে।