ভেজাল অ্যানেসথেসিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিন শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষায় চেতনানাশক ওষুধ হ্যালোসিনে ভেজালের প্রমাণ মিলেছে। উৎপাদন বন্ধের পরও ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছেই বা কেন, প্রশ্ন উঠলেও মিলছে না উত্তর।
উৎপাদন বন্ধের পরও ‘হ্যালোসিন’ বাজারে কেন, মিলছে না উত্তর।
হ্যালোথিন গ্রুপের চেতনানাশক ওষুধ হ্যালোসিন দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকমহলে বেশ জনপ্রিয়। কারণ, সহজে ব্যবহার উপযোগী ও দাম তুলনামূলক কম। যদিও বিশ্বব্যাপী ব্যবহার কমে যাওয়া ও কাঁচামালের অপ্রতুলতার কারণে প্রায় এক বছর আগে গত বছরের জুনে ওষুধটির উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করে একমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই।
উৎপাদন বন্ধ এই ওষুধ ব্যবহার করেই বিপত্তিতে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। গত চার মাসের ব্যবধানে মৃত্যু হয় তিন শিশুর।
জানা যায়, বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিন শিশুর কানে বিশেষ ডিভাইস বসাতে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এরপরই কারণ অনুসন্ধানে নড়চড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। তখনই নজরে আসে চেতনানাশক ওষুধ হ্যালোসিন। ওষুধের মোড়ক ও উপাদান নিয়ে সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বিসিএসআইআরের পরীক্ষাগারে। পরীক্ষায় উঠে আসে ৯ থেকে ৫৪ ধরণের রাসায়নিকের উপস্থিতি। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যু হওয়া তিন শিশুর মরদেহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা না হলেও চিকিৎসকরা ভেজাল চেতনানাশক হ্যালোসিনের প্রভাব উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বাজারে ওষুধটির উপস্থিতির সত্যতা জানতে সময় সংবাদ যায় শাহবাগের আজিজ মেডিসিন মার্কেটে। একাধিক দোকানি ওষুধ দেয়ার কথা বলেও প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে বদলে ফেলে সুর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি ও বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজিসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়ার প্রয়োগ নিয়ে কিছু কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ আসা শুরু করলো। রোগীর কাশি হচ্ছে, অনেকের জ্ঞান ফিরতে দেরি হচ্ছে। বিভিন্ন পিড়াপিড়িতে কিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষাতে দেখা গেল রোগীর কোনো সমস্যা নেই। কেমিক্যাল রিয়েকশনে হয়তো এমনটা হচ্ছে। তবে হ্যালোসিন ওপেন মার্কেটে পাওয়ার কথা না।’
উৎপাদন বন্ধের পর গত বছরের জুনে এসিআই কোম্পানি চিকিৎসক ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে লিখিতভাবে বিষয়টি জানালেও বাজারে ওষুধটির উপস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সরকারি দায়িত্বশীল দফতরগুলোর দায়িত্ব নিয়ে। যদিও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি কোনও পক্ষ। তবে সম্প্রতি অ্যানেসথেসিয়ার ব্যবহার নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বস্থ্যসেবা বিভাগ।