শীতকালে ত্বকের অন্যতম সর্বাধিক পরিচিত সমস্যা হচ্ছে হাতের শুষ্কতা ও ফেটে যাওয়া। শুধু তাই নয়, ত্বকের বেষ্টনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে একজিমা, সোরিয়াসিস ও অন্যান্য চর্মরোগ আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এখানে শীতের দিনগুলোতে হাত কোমল রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হলো।
গ্লাভস পরুন
শীতকালে হ্যাট পরার মতো ঠান্ডা পড়লে বুঝতে হবে যে এখন হাতে গ্লাভস পরারও সময় চলে এসেছে। পশমের গ্লাভস অথবা উল-লাইনড লেদার গ্লাভস বেছে নিতে পারেন, কারণ এসব গ্লাভস বাতাসকে বাধা দিতে ও হাতকে উষ্ণ রাখতে বেশি কার্যকর। কুয়াশা বেশি পড়লে ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্স গ্লাভস পরার কথা বিবেচনা করতে পারেন। শীতকালে বাসন-কোসন ধোয়া অথবা অন্যান্য গৃহস্থালি কাজ করার সময় রাবার গ্লাভস পরে নেয়া ভালো, বলেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত ওয়েক্সলার ডার্মাটোলজির বোর্ড-সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্ট ফ্রান্সিসকা ফুসকো।
প্রতিদিন এসপিএফ ব্যবহার করুন
ময়েশ্চারাইজিং সানস্ক্রিন ব্যবহার করে হাতকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করুন। অথবা এমন হ্যান্ড লোশন বেছে নিন যেটাতে এসপিএফ রয়েছে। মাঝেমাঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে হবে না, হাতের ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে দিনের অধিকাংশ সময় বাইরে কাটালে।
হাতকে ময়েশ্চারাইজ করুন
ডা. ফুসকো তার কাছে আসা রোগীদেরকে ডেস্ক ড্রয়ার, হ্যান্ড ব্যাগ, কিচেন কাউন্টার, বেডসাইড, গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট ও অন্যান্য স্থানে একটি করে ময়েশ্চারাইজারের টিউব রাখতে পরামর্শ দেন। তার এ পরামর্শ থেকে বোঝা যায় শীতকালে হাতকে ময়েশ্চারাইজ করার গুরুত্ব কত বেশি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ঘনঘন ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বককে পুষ্ট করে, নিরাময় করে ও সুরক্ষিত রাখে।’
মৃতকোষ দূর করুন
অধিকাংশ লোকই হাতকে এক্সফোলিয়েট (মৃতকোষ অপসারণ) করার কথা ভাবেন না, কিন্তু এটা জেনে রাখা ভালো যে হাতের ত্বক থেকেও মৃতকোষ দূর করার গুরুত্ব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডা. ফুসকো বলেন, ‘হাতে এক্সফোলিয়েশন করলে ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ভালোভাবে প্রবেশ করবে।’ নারকেল তেল ও চিনি একত্রে মিশিয়ে হাতে সার্কুলার মোশনে ঘষুন। আপনি চাইলে আপনার প্রিয় ফেসিয়াল এক্সফোলিয়েন্টও ব্যবহার করতে পারেন।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
ত্বক বিশেষজ্ঞরা হাতের ত্বকের সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহারে ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে। একারণে ডা. ফুসকো নন-ড্রাইয়িং ফর্মুলার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে সুপারিশ করছেন, যেখানে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান রয়েছে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভালো এবং ময়েশ্চারাইজারের ওপর প্রয়োগ করা যায় এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন।
হাত ধুতে ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন
গরম পানি ও সাধারণ সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধুলে ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল দূর হয়ে যায়। এর সমাধান হচ্ছে: ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন ও বেশি গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
হ্যান্ড ড্রায়ার এড়িয়ে চলুন
পাবলিক টয়লেটে অটোমেটিক ড্রায়ার অথবা পেপার টাওয়েল- এ দুটি অপশন থাকলে শেষেরটি বেছে নিন। এর কারণ হচ্ছে, অটোমেটিক ড্রায়ার ত্বকে শুষ্কতার পরিমাণ বাড়াতে পারে, বলেন ডা. ফুসকো।
নখের যত্ন নিন
আপনার নখ ও নখের গোড়ার ত্বকও (কিউটিকল) হাতের অন্যান্য অংশের মতো শীতকালীন কড়া আবহাওয়ার প্রতি সমান সংবেদনশীল। একারণে ডা. ফুসকো নখের যত্নে ওয়েলিডা কিউটিকল সফেনার পেন ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যা কিউটিকলকে মেরামত, নরম ও অস্বস্তিকর অনুভূতি ছাড়াই অপসারণ করে। অথবা হোয়াইট টি ও শসার সঙ্গে ম্যানিকিউর কিউটিকল ইরেজার অ্যান্ড বামের মতো প্রোডাক্ট মিশিয়ে রাতে কিউটিকল ও নেইল বেডে প্রয়োগ করতে পারেন।
রাতে ত্বকের যত্ন নিন
রাতে হাতের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এ ধরনের ক্রিম মাখলে হাত কোমল হয়। অথবা ব্লিস গ্ল্যামার গ্লাভসও কিনতে পারেন। এ গ্লাভস পরে ২০ মিনিট শুয়ে থাকলে ত্বক সুস্থ থাকবে। এই জেল-লাইনড গ্লাভসে অলিভ অয়েল, গ্রেপসিড অয়েল ও ভিটামিন ই থাকে। এ গ্লাভস প্রায় ৫০ বার পরতে পারবেন।