ঈদ-উল-আজহার অন্যতম প্রধান বিবেচ্য বিষয় কোরবানি। আর কোরবানির কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রধান গুরুত্বপূর্ বিষয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। তার উপর এবারে রয়েছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন না হলে পরবর্তীতে এ কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যসমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে।
কোথায় কীভাবে কোরবানি দেয়া হবে, কোরবানির পর পরিবেশের আবর্জনা কীভাবে সরানো হবে, সে পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখা প্রয়োজন। মাংস কাটাকাটি ও বিলি–বণ্টনের সময়ও পরিচ্ছন্নতা জরুরী।
কোরবানির আগে-পরে : নিজের সুবিধার জন্য সমাজের অন্য সবার অসুবিধার সৃষ্টি করা উচিত নয়। এ জন্য নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করতে হবে। যে কোন বর্জ্য ফেলতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে। আবর্জনা ফেলার স্থান পর্যন্ত নেয়ার জন্য শক্ত কাগজের ব্যবস্থা রাখুন। অনেকে বাড়ির নিচে মাংস ভাগ করার কাজটি করেন। রক্ত গড়িয়ে যেন রাস্তায় না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পাকা জায়গায় এবং রাস্তা থেকে দূরে কাজ করুন। আরও খেয়াল রাখুন, যেন খুব বেশি সময় ধরে সিমেন্টের মেঝেতে মাংস, রক্ত বা আবর্জনা রাখা না হয়। দীর্ঘসময় থাকলে এগুলো মেঝেতে শক্তভাবে আটকে যায়, এর জন্য ভুগতে হতে পারে ১ থেকে ২ সপ্তাহ। বৃষ্টির পানি বা কাদা-মাটি যেন মাংসে লেগে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
কোরবানির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি: পুরনো ছুরি ও মরিচাপড়া কাটাকাটির অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না। নতুন জিনিসগুলোও পরিষ্কার করে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। বড় একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। পাত্রটি নামিয়ে এর মধ্যে সব সরঞ্জাম ডুবিয়ে রাখতে পারেন ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত। এভাবে সম্ভব না হলে গরম পানিতে পরিষ্কার করে নিন। তা-ও না হলে অন্তত স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন।
পরিচ্ছন্ন থাকুন: মাংস ভাগ-বাঁটোয়ারা ও বিলি–বণ্টনের সময় হাতে, শরীরের অন্যান্য অংশে, কাপড়ে ও ঘরের মেঝেতে রক্ত লেগে যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখুন, খুব বেশি সময় পর্যন্ত যেন এভাবে রক্ত লেগে না থাকে। রক্ত বা আবর্জনা লেগে থেকে গেলে পরবর্তী সময়ে এটি পরিষ্কার করতেও সমস্যা হয়। খাদ্যগ্রহণের সময় অস্বস্তি হতে পারে। এগুলো খাবারের সঙ্গে পেটে চলে গেলে পেটের পীড়াও হতে পারে। এছাড়া মাছি, তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড় আকৃষ্ট হতে পারে; যেগুলো নানান অসুখের কারণ। এগুলো দীর্ঘসময় পর্যন্ত ত্বকে লেগে থাকলে চুলকানি এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব যে কোন সাবান দিয়ে ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন। কলের পানিতে হাত পরিষ্কার করে নিন প্রথমে। সাবান তো লাগবেই। সহজে পরিষ্কার না হলে কুসুম গরম পানি ও সাবান ব্যবহার করতে পারেন। পরিষ্কার করার পর ত্বক ভালভাবে মুছে শুকনা করে ফেলতে হবে। চাইলে কাজ শুরুর আগে পাতলা গ্লাভস পরে নেয়া যেতে পারে। মেঝে পরিষ্কার করতে কুসুম গরম পানি এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা ভাল।
সবার আগে প্রয়োজন সুরক্ষা ও নিরাপত্তা: কাটাকাটির কাজ করুন সাবধানে। হাতের কাছেই রাখুন তুলা, ব্যান্ডেজ ও জীবাণুনাশক তরল বা ক্রিম। হাতের নখ ছোট রাখুন, নেইলপলিশ বা কৃত্রিম কোন কিছু ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কাজ করার সময় বড় নখ ভেঙে যেতে পারে, নখের কারণে আঘাত পেতে পারেন আঙুলেও।
মাংস রান্নাবান্না ও সংরক্ষণ : আধা সিদ্ধ বা আধা রান্না মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মাংস রান্নার আগে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন। ফ্রিজে রাখতে চাইলে ছোট ছোট প্যাকেট করে রাখুন।
বেশি পরিমাণ মাংস চাপাচাপি করে ফ্রিজে রাখতে গেলে অনেক সময় ফ্রিজ ঠিকমতো কাজ করে না, বিষয়টি খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
মাংস নিয়ে দূরে কোথাও যেতে হলে ঝটপট তা গুছিয়ে ফেলুন এবং গন্তব্যের পথে রওনা দিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাংস নষ্ট হতে থাকে। অনেকে মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। তবে এভাবে সংরক্ষণের সময় ময়লা থেকে যেতে পারে, ছত্রাক হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। রান্নার পরে খুব বেশি পরিমাণ মাংস একবারে খাওয়া ঠিক নয়। এতে বমি বমি ভাব এবং পেটের পীড়া হতে পারে।