বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ নানা ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় লিভার ক্যান্সারের কারণে। এ দেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ লিভারের ক্যান্সার।
বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ নানা ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় লিভার ক্যান্সারের কারণে। এদেশে লিভার ক্যান্সারের কারণ নানাবিধ। সবার আগে চলে আসবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের নাম। পাশাপাশি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আর ফ্যাটি লিভারও আমাদের দেশে লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ।
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা আর দশটি ক্যান্সারের চিকিৎসার চেয়ে একেবারেই আলাদা। প্রচলিত অর্থে কেমোথেরাপি আর রেডিওথেরাপি এই ক্যান্সারে অচল। এখানে আমরা ব্যবহার করি মুখে খাওয়ার কেমোথেরাপি আর হালের সবশেষ সংযোজন ইমিউনোথেরাপি। আশার কথা এই সব ওষুধ তৈরি হয় বাংলাদেশেই । আর এগুলো কাজও করে প্রচলিত কেমো আর রেডিওথেরাপির চেয়ে অনেক বেশি। সমস্যা হচ্ছে ওষুধগুলো দেরিতে প্রয়োগ করলে ততটা ভালো ফল পাওয়া যায় না, আর আমাদের দেশে বেশিরভাগ লিভার ক্যান্সার রোগীই অনেক দেরিতে আমাদের কাছে আসেন। ফলে তারা এসব ওষুধগুলোর পূর্ণ সুফলও পান না।
এই রোগীদের জন্য দারুণ সুখবরটা হলো ‘টেইস’, যার পুরো নাম ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমো অ্যাম্বোলাইজেশন। হার্টের বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ক্যাথল্যাবে হার্টের ব্লক হওয়া ধমনীতে স্টেন্ট পরিয়ে রক্ত চলাচল পুনরায় চালু করে দেন, আমরা লিভার বিশেষজ্ঞরাও একইভাবে ক্যাথল্যাবে লিভারের ধমনীর মাধ্যমে লিভার ক্যান্সারের টিউমারগুলোতে সরাসরি কেমোথেরাপি প্রয়োগ করি আর তারপর সেই রক্তনালীগুলোকে ব্লক করে দেই। এতে কেমোথেরাপিটা শুধু লিভার ক্যান্সারের টিউমারের মধ্যেই থেকে যায়, ছড়াতে পারে না শরীরের অন্য কোথাও। ফলে রোগীর চুল পড়া, খাওয়ায় অরুচি ইত্যাদি কেমোথেরাপিজনিত কোনো সাইড এফেক্টই হয় না। অন্যদিকে রক্তনালীগুলো ব্লক করে দেওয়ায় লিভার ক্যান্সারের টিউমারগুলোয় রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে টিউমারগুলো ক্রমেই আরও নির্জীব হয়ে পরে। টেইস করার কারণে এভাবে টিউমারগুলো ছোট হয়ে এলে, পরে লিভার ক্যান্সারের রোগীদের মুখে খাওয়ার কেমোথেরাপি কিংবা ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। এমনকি অনেক সময় অপারেশন করে লিভার ক্যান্সারের টিউমার অপসারণও করা যায়।
এই যে টেইস, এটি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক লিভার ক্যান্সারের রোগীকে টেইসের মাধ্যমে চিকিৎসা করেছি। আমাদের টেইসের অভিজ্ঞতা আমরা আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশও করেছি। আমরা খুব গর্ব করে বলতে পারি যে টেইসে আমাদের সাফল্য, আমাদের আশপাশের দেশগুলোর সমতুল্য আর খরচের কথায় যদি আসি তাহলে বলতে হবে যে এ জায়গাটাতেও আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। অতএব লিভার ক্যান্সার মানেই শুধুই হতাশা আর নিশ্চিত মৃত্যু এমন কথা এখন আর সত্যি নয়, বরং লিভার ক্যান্সারে আশা এখন হয়নি শেষ!
লেখক: অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আঞ্চলিক পরামর্শক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা