Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

হাড়ের ব্যথা কারণ, চিকিৎসা ও করণীয়

Published

on

হাড় ব্যথা একটি উপসর্গ মাত্র যা একাধিক বা উপসর্গসহ প্রতীয়মান হতে পারে। এ ব্যথা পৃথক কোনো হাড়ে হতে পারে বা জোড়া ও পেশির সঙ্গে হতে পারে। দীর্ঘদিন হাড় ব্যথা মানুষকে চিন্তাগ্রস্ত ও বিষণ্ন করে তোলে যা ব্যথা থেকে ভয়াবহ। অধিকাংশ ব্যথা হয় হাড়ের বাইরের স্নায়ু সংবেদনশীল আবরণ (পেরিওসটিয়াম) আক্রান্ত হওয়ার জন্য। পর্যাপ্ত স্নায়ু থাকে বিধায় মেরুদণ্ডের হাড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয়। কিছু ক্ষেত্রে হাড়ের গঠন দুর্বল ও হাড় অকেজো হলে হাড়ের ভেতরের আবরণের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র ব্যথার উদ্রেক হয়। বিভিন্ন রোগের কারণে হাড়ে বিভিন্ন উপসর্গসহ ব্যথা হয়।

সাধারণত মাঝ বয়সী বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষ হাড়ের ব্যথায় ভুগে থাকেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরও অনেক পরিবর্তন হয়। শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশির আকার ও হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এতে বারবার আঘাত লাগার প্রবণতায় হাড় ভেঙে যায়।

যদি হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার কারণে বা হাড়ে আঘাত লাগার কারণে ব্যথা হতে থাকে, তাহলে সেটা এক বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা ক্যান্সারের কারণে ব্যথা হতে পারে।

হাড় ব্যথার কারণ

Advertisement
  • ইনজুরি বা আঘাত
  • বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি।
  • হাড় ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপরোসিস ইত্যাদি।
  • শরীরের এক স্থানের ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া (স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রস্টেটের ক্যান্সার সাধারণত হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে)।
  • হাড়ের ক্যান্সার, যা হাড়েই উত্পন্ন হয়।
  • হাড়ে রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ যেমন—সিকেল সেল এনিমিয়া।
  • অস্টিওমাইলাইটিস জাতীয় হাড়ের মারাত্মক ইনফেকশন।
  • লিউকেমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ইত্যাদি।

হাড় ব্যথার উপসর্গ

  • বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগা
  • স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া ইত্যাদি।
  • মাংসপেশি ও টিস্যুতে ব্যথা
  • ঘুমের সমস্যা
  • পেশি কামড়ানো
  • অবসাদ ও দুর্বল লাগা
  • পিঠে ব্যথা, নুয়ে থাকা
  • সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া
  • মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা
  • হাড় ভেঙে যাওয়া
  • খিঁচুনি, জন্ডিস
  • ছোট ছোট শ্বাস ফেলা
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • ত্বকের নিচে পিণ্ড অনুভব করা
  • ইনফেকশনের স্থানটি লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া ও গরম অনুভব করা।
  • বমিবমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য
  • শরীর অবসন্ন হয়ে পড়া
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • রাতে ঘেমে যাওয়া ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

পরীক্ষা নিরীক্ষা

প্রাথমিকভাবে চিকিত্সক শারীরিক পরীক্ষা করবেন। এ জন্য যা যা করা যেতে পারে তা হলো :

  • রক্ত পরীক্ষা
  • ক্যান্সার আছে কি না নিশ্চিত হতে ক্যান্সার মার্কার
  • হাড়ের এক্স-রে
  • এমআরআই
  • সিটি স্ক্যান ইত্যাদি।

চিকিত্সা কি
যদি হাড় ব্যথার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটা উপেক্ষা করা যাবে না। দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে।

চিকিত্সক হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করার পর সে অনুযায়ী চিকিত্সা করবেন। তবে আক্রান্ত স্থানটি যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে। হাড় ব্যথার বিভিন্ন চিকিত্সার মধ্যে রয়েছে—

ব্যথানাশক ওষুধ কখন খাবেন
হাড় ব্যথা কমাতে সচরাচর ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। তবে এসব ওষুধ হাড় ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোকে সারিয়ে তোলে না। সাধারণভাবে আইবুপ্রফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়।

অ্যান্টিবায়োটিক কখন
হাড়ে ইনফেকশন থাকলে ইনফেকশন ঘটানোর জন্য দায়ী জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলতে অ্যান্টিবায়োটিক যেমন—সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লিন্ডামাইসিন বা ভ্যানকোমাইসিন দেওয়া হয়।

Advertisement

কি খাবেন
অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র মাত্রা ঠিক রাখতে পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

ক্যান্সারের চিকিত্সা
ক্যান্সারজনিত হাড়ের ব্যথার চিকিত্সায় সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপি রয়েছে। কেমোথেরাপি আবার হাড়ের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। বাইফসফোনেট জাতীয় ওষুধ মেটাস্টাটিক বোন ক্যান্সারের রোগীদের হাড়ের ক্ষতি রোধ করে ও হাড়ের ব্যথা কমায়। ব্যথা কমাতে অনেক সময় অপিয়েট ব্যথানাশক দেওয়া হয়।

কখন সার্জারি বা অপারেশন
ইনফেকশনের কারণে হাড়ের কোনো অংশ মরে গেলে সেই অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। হাড় ভেঙে গেলে ও টিউমার থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হয়। মারাত্মক ক্ষেত্রে রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

হাড় ব্যথা রোধে কি করবেন

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করুন। মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করুন।
  • আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখুন।
  • হাড় ক্ষয় বা হাড়ের অন্য কোনো রোগ হয়েছে কি না তা জানতে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

ডা. জি.এম. জাহাঙ্গীর হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি
নিটোর, ঢাকা

Advertisement
Continue Reading
Advertisement
Advertisement
জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন4 weeks ago

ওষুধ খাওয়ার ভুলে অসুস্থতা

জ্বর বা মাথাব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, অ্যালার্জির জন্য হিস্টাসিন কিংবা গ্যাসের ট্যাবলেট- এই ধরনের ওষুধগুলো আমরা হরহামেশাই খাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই।...

খাদ্য ও পুষ্টি1 month ago

শিশুদের জন্য লবণ যতটুকু দরকার

অতিরিক্ত লবণ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদানের পাশাপাশি অল্প বয়সে রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিমাণ লবণ রাখতে হবে যা...

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 month ago

ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কেন

বয়সে টিংকু বেশ ছোট। এত ছোট যে মাঝেমধ্যে টিংকুর দাঁত পড়ে। একবার বিড়াল টিংকুকে আঁচড়ে দিল। চিকিৎসক বললেন যে র‌্যাবিসের...

Advertisement