বিয়ের পর মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায় কেন?

প্রতিকি ছবি

শরীরে এডাল্টহুড আসার পর থেকে সেক্স ডিজায়ার একটি নরমাল ইস্যু। সময় এবং বয়সভেদে শুরুর দিকে এটি যেমন থাকে, একটি পরিণত বয়স – একুশ থেকে পঁচিশে এটি পূর্ণতা পায়, চাহিদা সম্পূরক হয় এবং সেক্স ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়, যা একেবারে স্বাভাবিক ।

কিন্তু দেখা যায় যে – বিয়ের দুই থেকে তিন বছর পর মেয়েদের সেক্স করার ইন্টারেস্ট কমে যায়। কিন্তু, কেন এমন হয়?

সেক্স ইন্টারেস্ট মানে হলো – সেক্স করার ইচ্ছা। এখানে কিন্তু সেক্সের চাহিদা কমে না, সেক্স ডিমান্ডও কমে না। শুধু যার সাথে থাকে, তার সাথে সেক্স করতে ইন্টারেস্ট জাগে না মেয়েদের। শরীরে ইচ্ছেটি মরে যায়, কিন্তু ক্ষুধা থাকে। যেমনটি অনেক সময় আমাদের ক্ষুধা আছে পেটে, কিন্তু খেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কেন এমন হয়?
ছেলেদেরও বিয়ের পর এমন সমস্যা হতে পারে । তবে তুলনামূলকভাবে শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতা ছাড়া ছেলেদের সেক্স ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে বিয়ে তেমন প্রভাব ফেলে না। কারণটি সিম্পল। ছেলে এবং মেয়েদের সেক্স স্টিমুলেশনের প্যাটার্ন একই ভাবে কাজ করে না। যদিও সেক্স হরমোন দুজনেরই একই।

আসল বিষয়ে আবার আসি। বিয়ের পর মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায় কেন? বেশ কয়েকটি কারণে এমনটি হয় বা হতে পারে। যার যার কারণটি নিজেদের মতো মিলিয়ে খোলা মনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই সমাধান সম্ভব।

এক. মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্টটি মুডের উপর নির্ভর করে বেশি। মুড সেক্সের ক্ষেত্রে অনেকখানি মোটিভেটেড করে। আবার মেয়েদের মুড শারীরিক কিছু সিচুয়েশন, যেমন : পিরিয়ড এবং হরমোনের উপর নির্ভর করে। সাথে বিয়ের পর সাংসারির ব্যস্ততা এবং বিচিত্রতা এই মুডকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণও করে। অনুভূতির বাড়তি-কমতি যার যার জীবন জটিলতার উপর নির্ভরশীল। সে তুলনায় সিঙ্গেল থাকা অবস্থায় লাইফ অনেক মনোটোনাস থাকে, স্বাধীন থাকে, অন্যের সাধ পুরনের চাপ কম থাকে। কিন্তু বিয়ের সম্পর্ক শারীরিক চাহিদা নির্ভর। নিজের স্বাদের স্পেস পাওয়ার চেয়ে অন্যের সাধ পুরনের ডিমান্ড নিজের ডিমান্ডকে বিরক্তির দিকে ঠেলে দেয়।

দুই. মাতৃত্ব মেয়েদেরকে সেক্সের ব্যাপারে সাবকনসাসলি ডিমোটিভেটেড করে। এর কারণ, সমাজ, সামাজিকতা, শশুড়বাড়ির যৌথ পরিবেশ, ধর্মীয় এবং কালচারাল স্টিগমা। কম বেশি সব সমাজে মাদারহুড কনসেপ্টটি এখনও একধরনের ডিসেকচুয়েলাইজ। উপমহাদেশে সেটা আরও বেশি টনটনে এবং মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়। সাথে মা হওয়ার পর মেয়েদের শরীর এবং মনে ভিন্ন একটি মানসিক টার্ন নেয়। এই জন্যে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা একটু বড় হতে থাকলে বাবা-মা আলাদা বিছানায় ঘুমোতে শুরু করেন, যা তাদের সেক্স ইন্টারেস্টকে আরও কমিয়ে দেয়। ডিসেকচুয়েলাইজ প্রেশার দুটো মানুষের হেলদি ফিজিক্যাল রিলেশনকে রেশনিং করে ফেলে।

তিন. স্ত্রী যদি বার বার কোনো অজুহাত তুলেন যে – তার কিছু করতে ইচ্ছে করছে না, বা শরীর ভালো না, এমন সব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা যখন ইমোশনালি তার হাজব্যান্ড কিংবা পার্টনারের সাথে কানেক্ট করতে পারে না, তখন এমন ওজুহাত তুলে এড়িয়ে যেতে চায়, আলাদা রুমে ঘুমায়। এমনকি অনেকে বাড়ন্ত বাচ্চাকে সাথে নিয়ে ঘুমায়, যাতে স্বামী বাধ্য হয় অন্য বিছানায় ঘুমাতে ! রীতিমতো বিছানা রাজনীতি। ভেতরের সত্যটি হলো এমন অবস্থায় এমনটি শুরুর কারণ হলো মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট তখন কমে যায়। অনেকে সংসারের ক্ষতির ভয়ে সংসার ধরে রাখতে ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মাঝে রুটিন ওয়ার্কের মতো করে যায়। তখন জোর করে করার প্রয়োজনটি নিজের প্রয়োজনকে খেয়ে ফেলে।

চার. কোনো মানসিক পীড়া, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা দীর্ঘদিন একনাগাড়ে চলতে থাকলে মেয়েরা সেক্সে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে ক্রনিক ডিপ্রেশন, প্যানিক এটাক, কোনো ট্রমাটিক ইভেন্ট লাইফে ঘটে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন, স্বামীর অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক, যৌতুকের চাপ, এমনসব সামাজিক এবং পারিবারিক পীড়া শরীর এবং মনের সেক্সকে বিষিয়ে তুলে।

পাঁচ. সেক্স ড্রাইভকে বলে লিবিডো। সময় এবং পরিস্থিতি ভেবে লিবিডো কম-বেশি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন শরীরের নিজের কোনো রোগ থাকে, তখন মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায়। যেমন থাইরয়েড সমস্যা, বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজম, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, আন কন্ট্রোল ডায়াবেটিস , ক্রনিক স্ট্রেস, হরমোন ইমব্যালেন্স, কিছু মেডিসিন খেলে লিবিডো কমে যেতে পারে, যেমন : এন্টিহিস্টামিন, ব্লাড প্রেশার মেডিসিন কিংবা আন্টি ডিপ্রেসেন্ট মেডিকেশন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে প্রতি দশ জনের মধ্যে দুই জনের উল্টো সেক্স ড্রাইভে কমে যায়, অনেকের বেড়ে যায়। শরীরে আয়রন কম থাকলে বা এনিমিক হলে লিবিডো কম থাকতে পারে।

ছয়. বেশি একটিভ লাইফ মেয়েদের সেক্স ড্রাইভকে অনেক সময় ডিঅ্যাকটিভ করে দেয়। বিশেষ করে চাকুরীজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। এর কারণটিও স্বাভাবিক। মেয়েরা চাকুরী করলেও সংসারের কাজগুলো কিন্তু তাদের কমে না। একটি মেয়েকে তিনটি সেক্টরে কাজ করতে হয় তখন। কিন্তু পুরুষরা কেবল ঘরের-বাহিরে চাকুরী করলেই দায়িত্ব যেন শেষ হয়ে যায়। মেয়েরা চাকুরী করলে অফিসে কাজ করে এসে সংসারের কাজ গুলিও করতে হয়, বাচ্চাদের দেখা শোনাও করতে হয়, জবে ডে ডিউটি শেষে বিছানায় নাইট ডিউটিও দিতে হয়। দিনশেষে নিজের ইচ্ছার কোনো দাম থাকে না।

সাত. একেকটি মানুষের সেক্স সিগন্যাল একেক রকম। একটি মেয়েরও তাই। বেশিরভাগ দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা পার্টনার এটি বুঝে না। মেয়েটি তার মতো সেক্স সিগন্যাল না পেলে স্টিমুলেটেড হয় না, হবে না। বিয়ের পর মেয়েরা এমন করে তাদের সেক্স সিগন্যালটি না পেয়ে পেয়ে একসময় ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। সেটা নিজের ডিজায়ারের প্রতি, সেটা পার্টনারের প্রতি আকর্ষণ, এমনকি সেটা নিজের ডিমান্ডের প্রতিও ইন্টারেস্টলেস হয়ে উঠতে পারে। ধারালো ছুরিও বেশিদিন ফেলে রাখলে এমনিতেই জং ধরে।

এর বাহিরে আরও অনেককিছুই দাম্পত্য জীবনে মেয়েদের সেক্স লাইফটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একজন সুস্থ মানুষের তিনটি দিকে সুস্থতা না থাকলে তিনি আসলে পুরোপুরি সুস্থ নন। শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক। মজার বিষয় হলো – দাম্পত্য জীবনে হেলদি সেক্স লাইফ এই তিনটিকেই ভালো রাখে। আবার এই তিনটির একটিও কম বেশি হলে সেক্স লাইফে তার ইম্পেক্ট পড়ে। পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, এবং নিয়মিত শারীরিক আনন্দ একটি সুস্থ পরিবার গঠনের নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর।

© অপূর্ব চৌধুরী। চিকিৎসক, কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক । জন্ম বাংলাদেশ, বসবাস ইংল্যান্ড । গ্রন্থ ৮ । উল্লেখযোগ্য বই : অনুকথা, জীবন গদ্য, ভাইরাস ও শরীর ।

Exit mobile version