ব্রণ কেন হয় এবং এর চিকিৎসা
মুখের ব্রণ নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। শিশু থেকে মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ পর্যন্ত ব্রণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আর তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের বেশির ভাগের ব্রণ এক প্রকার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মমাফিক যথাযথ প্রোটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া গেলে ব্রণের কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। ব্রণের জন্য ব্যয়বহুল লেজার এমসিডি, ইএলএফ ইত্যাদি চিকিৎসার কোনো প্রয়োজনও নেই। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশসমূহে শুধু ওষুধ ও বিভিন্ন টপিক্যাল লোশন-ক্রিম দিয়েই সফলভাবে ব্রণের চিকিৎসা দেয়া হয়। বরং এসব দেশেই ব্রণের লেজার চিকিৎসা একেবারেই নিরুৎসাহিত করা হয়। ব্রণের রয়েছে নানা ধরন ও প্রকারভেদ। যথাযথ কারণ অনুসন্ধান করে ব্রণের সঠিক চিকিৎসা দেয়া গেলে যে কোনো ধরনের ব্রণের চিকিৎসা সম্ভব। আমরা যদি ব্রণকে মাইন্ড, মডারেট ও সিভিয়ার তিনভাবে ভাগ করি তবে মাইল্ড ব্রণ বা একনির ক্ষেত্রে শুধু টপিক্যাল ওষুধই যথেষ্ট। মডারেট ব্রণের জন্য টপিক্যাল ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। আর সিভিয়ার বা তীব্র ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাবার ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক লোশন এবং এডাপ্লিন, বেনজাইল পারঅক্সাইড ও রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া সিভিয়ার ব্রণের জন্য ক্ষেত্রবিশেষ ওরাল আইসোটেরিটিনিয়েন দেয়া হয়। পাশাপাশি সব ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অয়েল কন্ট্রোলের জন্য একনি কন্ট্রোল সোপ বা লোশন ব্যবহার করতে হয়।
মনে রাখতে হবে একনি বা ব্রণ মুখ, বুক, পিঠ ও শরীরের কিছু কিছু স্থানের অয়েল গ্ল্যান্ডের নিঃসরণ বাড়লে একনি দেখা দেয় এবং এর জন্য দায়ী এক ধরনের হরমোন। তাই ব্রণপ্রবণ মুখের জন্য অয়েল কন্ট্রোল জরুরি। শুধু স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন ও চিকিৎসার পরামর্শ মেনে চললেই আমরা অবশ্যই ব্রণমুক্ত ত্বক রাখতে পারি। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
দীর্ঘকালীন কফ ও কাশির কারণ
কফ কাশির সাথে আমরা সবাই অল্প বিস্তর পরিচিত। কফ-কাশি কোনো নির্দিষ্ট ব্যাধি নয়। বিভিন্ন ধরনের বক্ষ ব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। নানা ধরনের বুকের অসুখ-বিসুখের কারণে রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা মানুষের দেহের একটি জটিল ব্যাধি। কফ-কাশি হওয়ার একটি অন্যতম বক্ষব্যাধি হচ্ছে ফুসফুসে যক্ষ্মা। ফুসফুসে যক্ষ্মার একমাত্র প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘকালীন কফ-কাশি। কোনো ব্যক্তির যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকে, তবে চিকিৎসক ওই ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রানত্ম হয়েছেন বলে ধারণা করেন। ফুসফুসের ক্যান্সার ফুসফুসের একটি মারাত্মক ব্যাধি। ফুসফুসের ক্যান্সারকে মরণঘাতকও বলা হয়ে থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সার রোগের পূর্ব লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ-কাশি। এক্ষেত্রে কফ-কাশির সাথে বুকে ব্যথাও হয়ে থাকে। এ রোগের উপসর্গ হিসেবে কখনো কাশির সাথে রক্ত নির্গত হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক লোক ব্রঙ্কিওটাইসিস নামক রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে। এটি বুকের একটি ব্যাধি। এই রোগটি সাধারণত মধ্য বয়সের পরে মানুষের দেহে প্রকাশ ঘটে। ব্রঙ্কিওটাইসিস হলে প্রচণ্ড কাশির উপক্রম হয় এবং কাশির সাথে হলুদ পাকা কফ নির্গত হয়। এ সমসত্ম রোগীর দীর্ঘকালীন কাশির সাথে মাঝে মাঝে রক্তপাত হয়। হাঁপানি প্রধানত একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ।
শ্বাসকষ্ট হাঁপানির প্রধান লক্ষণ হলেও এর আর একটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ কাশি। ফুসফুসে কখনো কখনো ফোড়া দেখা দেয়। ফুসফুসে ফোড়া যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। এ রোগে আক্রানত্ম রোগীর কাশির সাথে যে কফ নির্গত হয় তা সাধারণত পেকে হলুদ হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রানত্ম রোগীদের মধ্যে কফ-কাশির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এ জাতীয় রোগীদের কফের রং সাদা বা হলুদ হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন কফের রঙ লালচে ধরনের হয়। এছাড়া ফেরেনজাইটস, পোস্ট নেজান ড্রিপ (সাইনোসাইটিস জাতীয় ব্যাধি) ইত্যাদি রোগের লক্ষণ হিসেবেও কফ-কাশির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কফ-কাশি আলাদা বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাধি নয়। কোনো কোনো বক্ষব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। তাই কফ-কাশি প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে, যে সকল রোগের উপসর্গ হিসেবে কফ-কাশির প্রকাশ ঘটে সে সমসত্ম রোগ প্রতিরোধ করা।
মাথা ধরে কেন?
মাথা ধরা বা মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে দেখা গেছে যে মাথার খুলির মধ্যের রক্তনালিগুলো (ধমনী বা শিরা) যদি বেশি প্রসারিত হয় অথবা মসিত্মষেকর আবরণী পর্দাগুলোর মধ্যে যে রক্তনালিগুলো আছে সেগুলোতে যদি কোনো কারণে টান লাগে অথবা কপাল, মুখমণ্ডল, চোখ, ঘাড় ইত্যাদির মাংসপেশিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম হয় বা ওইসব জায়গায় কোনো প্রদাহ হয় তবে মাথা ধরে। মাথা ধরা তাই কোনো অসুখ নয়। এটা একটা লক্ষণ। তাই মাথা ধরা সারানো অর্থাৎ বরাবরের জন্য মাথা ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বেদনা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারে সাময়িকভাবে মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারি, কিন্তু এতে মাথা ধরার মূল কারণগুলো দূর করা সম্ভব নয়। মাথা ধরা সারার জন্য যেসব ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সময়েই অন্য অনেক ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এসব ওষুধ বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। সাময়িক উপশমের জন্য প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিন টেবলেট, দুএকটা খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।