সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে বলে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো ওষুধের দাম দ্বিগুণও বেড়েছে বলে খবরে প্রকাশ। ২০০৫ সালে প্রণীত ওষুধ নীতিতে দাম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এ কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে পড়ছে কি না, তাও বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের কাঁচামাল ও ডলারের দাম বৃদ্ধির ঘটনা উপেক্ষা করা যায় না এ ক্ষেত্রে। তবে অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় এসবকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় করা হয়। সম্প্রতি ওষুধের বাজার এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন যে, দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার রাখে। খুচরা বিক্রেতারা সব সময়ের মতো পাইকারি বিক্রেতাদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। পাইকারি বিক্রেতারাও নানা কথা বলেন। ওষুধ বিপণনে নিযুক্তরাও দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কিছু জানেন না। নিয়ম রয়েছে, কোম্পানি ইচ্ছা করলেই যেকোনো ওষুধের দাম বাড়াতে পারে না। এ জন্য ওষুধ শিল্প সমিতির সিদ্ধান্ত দরকার। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, কোম্পানিগুলো এসব নিয়মনীতি না মেনে অলিখিতভাবে দাম বাড়ায়। সমিতি বসে থাকে ক্রেতার অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষায়। দাম ক্রমে বাড়তে থাকায় একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও এটা ঘটতে দেখা যায়।
ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর ওষুধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। তদারকি ও ওষুধের মান রক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। ১৯৯৪ সালে সরকারিভাবে নির্ধারিত হয়েছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিজেরাই তাদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে। কোনো কোম্পানি নতুন মূল্য সনদ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে ওষুধ প্রশাসনের দায়িত্ব নির্ধারিত নির্দেশিকা যথাযথভাবে পালিত হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। ওষুধের দাম নির্ধারণের ওপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ এবং তা বৃদ্ধির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, এটাই সত্য। সচেতন হতে হবে ক্রেতাদেরও। প্রায়ই দেখা যায়, অন্যান্য পণ্যের দামের ব্যাপারে কিছুটা খোঁজখবর রাখলেও ওষুধের দামের বিষয়ে ক্রেতারা বেখবর। আর ওষুধ এমনই পণ্য, যা প্রয়োজনে কিনতেই হবে। এখানেই ক্রেতাদের জিম্মি করার সুযোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ কেনার সময় ক্রেতারা রসিদ নেন না। এতে অভিযোগ থাকলেও তা প্রমাণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অধিকার। এ জন্য ওষুধ প্রয়োজন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে যেসব ওষুধ সরবরাহ করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল; অন্যদিকে প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ রোগীকে বাজার থেকেই কিনতে হয়। ভেজাল বা নকল ওষুধের ছড়াছড়িও উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। ওষুধ জীবন রক্ষাকারী অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ওষুধ ব্যবহার করে না। জীবন রক্ষাকারী পণ্যের দাম নিয়ে এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে মূল্যবোধ জাগ্রত করায়ও জোর দেয়া চাই। দেশে এখন জরুরি প্রায় সব ওষুধই তৈরি হচ্ছে এবং এর রফতানিচিত্রও উত্সাহব্যঞ্জক। ওষুধের উপকরণ পৃথক পৃথকভাবে একেকটি কোম্পানি তৈরি করে। তাদের কোনো প্রতিযোগী নেই বলে পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে ওষুধ কোম্পানিগুলো অভিযোগ করে আসছে। অনেক সময় এক মাস আগে দাম পরিশোধ করেও নাকি সময়মতো সরবরাহ মিলছে না। এসব অনিয়ম দূর করা না গেলে ওষুধ শিল্পে আমাদের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার বাস্তবায়নও ব্যাহত হবে।