ঠান্ডায় গলা ব্যথার সমস্যা বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একটু গলা ব্যথা হলেই সেটাকে টনসিল বলছে সবাই। কিন্তু আসলেই কি তাই? আপনার যে এই খানিকটা গলা ব্যথা, সেটার মূল কারণ কি টনসিল? চলুন, টনসিল সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান না রেখে এবার পুরোটাই জেনে নেওয়া যাক।
টনসিল কী?
আমরা যেটাকে টনসিল বলি সেটা আদতে টনসিলিটিস। টনসিল হলো আমাদের গলার একটি অংশ, যেটি অ্যান্টিবডি উৎপন্নের মাধ্যমে আমাদের মুখের মধ্যে থাকা সমস্ত জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের একটি অংশ।
কিন্তু এই টনসিল কখনো কখনো সংক্রমণের শিকার হয়ে আকারে বড় হয়ে যায়। তখন এই সমস্যাটিকে টনসিলিটিস বলা হয়।
টনসিলিটিসের সমাধান কী?
আপনার টনসিলের সমস্যা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। চিকিৎসক নানারকম পদ্ধতিতে আপনার টনসিলের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আপনার মুখের ভেতরের অংশটিকে দেখে স্ট্রেপটোকোকাল হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করতে পারেন। আবার রক্তকোষ পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার টনসিলিটিস হওয়ার কারণটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারেন।
আপনার টনসিলের সমস্যার পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন, সেটা পরীক্ষার পরই চিকিৎসক বলতে পারবেন যে, আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন ও কতটা বেশি হওয়া দরকার।
টনসিলেক্টোমি কী?
টনসিল কিন্তু সংক্রমণের পর শুধু ব্যথা দেয় তা নয়, এই অবস্থায় খুব বড় রকমের কিছু হতে পারে এবং বারবার দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চিকিৎসক টনসিলেক্টোমি করার পরামর্শ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায়-
● জিহ্বা এবং গলার সংক্রমণের পরিমাণ কমে আসবে
● ওষুধ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে
● বারবার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেতে হবে না এবং
● সর্বোপরি আপনি খুব ভালো সময় কাটাবেন
টনসিলিটিসের ঝুঁকি কাদের বেশি?
টনসিলিটিস শিশুদের মধ্যে প্রায়ই হতে দেখা যায়। তবে দুই বছরের কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম হয়। টনসিলের সমস্যা বেড়ে যায় ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে।
এছাড়া শিশুরা ছাড়াও জীবাণুর সংস্পর্শে বেশিরভাগ সময় থাকেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও টনসিলিটিসের পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতে আমাদের শরীর শীতল হয়ে আসায় উষ্ণ থাকাকালীন যে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা সহজেই করতে পারত, সেই ক্ষমতা কমে আসে। ফলে সেখান থেকে ঠান্ডাজনিত সমস্যা এবং ঠান্ডা থেকে টনসিলাইটিসের মতো সমস্যা তৈরি হয়।
কখন টনসিলেক্টোমি করা বা চিকিৎসা নেওয়া দরকার?
এমনটা কিন্তু না যে, একদম প্রাথমিক টনসিলের সংক্রমণেই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা সার্জারি করতে হবে। তবে আপনার মধ্যে যদি-
● টনসিলের ব্যথা বারবার ফিরে আসতে দেখা যায়
● গলার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা করে
● স্লিপ অ্যাপনিয়া
● জ্বর
● মাথাব্যথা
● দুর্গন্ধ
● গলা ফুলে যাওয়া, খাবার খেতে সমস্যা বোধ করা ইত্যাদি দেখা দেয়
সে ক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যত দ্রুত এই সমস্যাটির সমাধান করবেন, তত দ্রুতই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনার শরীরের সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ কম পাবে।
তাই, টনসিলের ব্যথা খুব বেশি বেড়ে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং আপনার টনসিলের অবস্থা এখন কেমন সে সম্পর্কে জেনে নিন।