ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
বাচ্চাদের হাঁপানির লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসককে সজাগ থাকতে হয়। অনেক সময় লেবুর দানা, বোতাম, পুঁতি ইত্যাদি ফরেন বড়ি বাবা-মায়ের অজান্তে বাচ্চাদের নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালীতে আটকে থাকতে পারে। এর ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে শিশুরা ভুগতে পারে। জেনেটিক কারণে কারও কারও হাঁপানি হয়ে থাকে সদ্যোজাত থেকে বৃদ্ধ সবারই হাঁপানি হতে পারে। হাঁপানি রোগীদের অর্ধেকের বয়স দশ বছরের মধ্যে। মেয়েদের তুলনায় শিশু বয়সে ছেলেদের অ্যাজমা হয় বেশি। একই সঙ্গে একাধিক কারণকে এ অসুখের জন্য দায়ী করা হয়। তবে শ্বাসনালীর হাইপার রেসপোনসিভনেসের কারণে বাচ্চারা এতে ভোগে বেশি। ছোটদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকটা কম। তাই তাদের বারবার রেসপিরেটরি ট্রাক্টের সংক্রামণজনিত কারণে সর্দিকাশি হওয়ার প্রবণতাও বেশি। কোন কোন শিশুর রেসপিরেটরি ট্রাক্টের সংক্রমণের ফলে শ্বাসনালীতে হাইপার ইরিটেবিলিটি দেখা দেয় অর্থাৎ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এ ক্রনিক ইনফ্লামেশনের ফলে বাইরে থেকে কোন কিছু (ঠাণ্ডা মাইট, ধুলো, ফুলের রেণু ইত্যাদি) শ্বাসনালীতে ঢুকলেই শুরু হয় সংকোচন; এর ফলস্বরূপ হাঁপানি। তবে বাচ্চাদের হাঁপানির লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসককে সজাগ থাকতে হয়। অনেক সময় লেবুর দানা, বোতাম, পুঁতি ইত্যাদি ফরেন বড়ি বাবা-মায়ের অজান্তে বাচ্চাদের নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালীতে আটকে থাকতে পারে। এর ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে শিশুরা ভুগতে পারে। জেনেটিক কারণে কারও কারও হাঁপানি হয়ে থাকে। ঘর-বাড়ির ধুলো-ময়লায় মাইট পোকা, ফলের বা ঘাসের পরাগ রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুর পশম, ছত্রাক, কিছু কিছু খাবার ওষুধ, নানারকম রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা হয়ে থাকে।
অ্যাজমাতে কেন শ্বাসকষ্ট : শিশুদের শ্বাসনালী খুব ক্ষুদ্র। ২ মিমি থেকে ৫ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। চারদিকে মাংসপেশি পরিবেষ্টিত। এ ক্ষুদ্র শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় খুব সহজেই বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে। যদি কখনও অ্যালার্জিক বা উত্তেজক কোন জিনিস শরীরে প্রবেশ করে তখন শ্বাসনালীর মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয়। ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। তাছাড়া উত্তেজক জিনিসের প্রভাবে শ্বাসনালীর গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় আঠালো মিউকাস জাতীয় কফ এবং ইনফেকশনের কারণে শ্বাসনালীর ভেতরের মিউকাস আবরণী ফুলে ওঠে, ফলে শ্বাস নিতে এবং ফেলতে কষ্ট হয়। মিউকাস জাতীয় আঠালো কফ উঠিয়ে ফেলার পথ এত সরু হয় যে বাতাস বায়ুথলিতে পৌঁছায় না, তখন শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। এটি খুবই মারাÍক অবস্থা। এ অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
বংশগতভাবে অ্যাজমার ঝুঁকি : মাতৃকুলে হাঁপানি থাকলে তিনগুণ বেশি রিস্ক আর পিতৃকুলে হাঁপানি থাকলে অনেকটা কম রিস্ক।
কীভাবে এই রোগ চিহ্নিত করা যায় : অনেক বাচ্চার প্রায়ই ঠাণ্ডা লাগে অর্থাৎ নাক দিয়ে পানি পড়ে, কাশি হয় বিশেষ করে রাতে। যদিও এ লক্ষণগুলোকে অধিকাংশ মা নিউমোনিয়া বলে ধরে নেয়; এর কারণ অধিকাংশ সময় চিকিৎসকরা নিউমোনিয়া বলেই চালিয়ে যান।
বড়দের মতো ছোটদের অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেয় যেমনÑ
১. বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ
২. শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট
৩. দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা
৪. ঘন ঘন কাশি
৫. বুকে আটসাট বা দম বন্ধ ভাব
৬. রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা দেখা।
সিরাম আইজিই
স্কিন প্রিক টেস্ট : এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালারজেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।
অ্যাজমা চিকিৎসারÑ
১. অ্যালারজেন পরিহার : হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হল, যে জিনিসে অ্যালার্জি তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।
২. ওষুধপত্র : সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
ক) শ্বাসনালীর সংকোচন বন্ধ করতে ব্রঙ্কোডাইলেটর যেমন সালবিউটামল, থিউফাইলিন, ব্যামবুটারল।
খ) প্রদাহ নিরাময়ের ওষুধ যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড (বেকলোমেথাসন, ট্রাইয়ামসিনোলোন, ফ্লোটিকাসন)। লিউকোট্রাইন নিয়ন্ত্রক-মন্টিলুকাস্ট, জেফিরলুকাস্ট ব্যবহার করা।
৩. অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার এটিও চিকিৎসা পদ্ধতি।
লেখক : অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগবিশেষজ্ঞ
দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার, ঢাকা
ফোন : ৮১১২৮২৫