বরগুনার বেতাগী উপজেলার কেওড়াবুনিয়া এলাকায় বাড়ির পাশের খালে মাছ শিকার করতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মুখের ভেতর দিয়ে শ্বাসনালীতে ছয় ইঞ্চি লম্বা জীবিত একটি বাইম মাছ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে রীতিমতো হৈ চৈ পড়েছে গোটা এলাকায়। তবে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাছটিকে অপসারণ করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কেওড়াবুনিয়া এলাকার জমাদ্দার বাড়ির বাসিন্দা কৃষক সিদ্দিক জমাদ্দারের ছেলে আব্দুল কাইউম। তিনি বর্তমানে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বজনরা জানান, গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে বাড়ির পাশের কেওড়াবুনিয়া খালে মাছ ধরতে যায় আব্দুল কাইউম। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাছের জাল তোলার সময় হঠাৎ খালের পানিতে ডুবে যায় কাইউম। এসময় তার হাতে থাকা বাইম মাছটি মুখের মধ্যে চলে যায়। পরে খবর পেয়ে কাইউমের খালা ও চাচাতো বোন তাকে উদ্ধার করেন। কাইউমের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে প্রথমে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বাইম মাছটি বের করতে সক্ষম হন চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থী আব্দুল কাইউম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘নতুন খাল খনন করায় সেখানে গভীরতা বেশি ছিল, তাই ঠাঁই পাচ্ছিলাম না। এর মাঝেই মাছটি হাত থেকে ছুটে গেলে আমি মুখ খুলে ডুব দেই। আর তখনই মাছটি আমার গলার মধ্যে ঢুকে যায়। এরপর কোনোভাবে আমি খাল থেকে পাশের রাস্তায় উঠতে পারলেও শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তাৎক্ষণিক স্বজনদের কোনোভাবে ডাক দিয়ে পেটের মধ্যে বাইম মাছ চলে যাওয়ার কথা বলেছি।’
এদিকে, কোনো সমস্যা ছাড়াই অস্ত্রোপচারটি সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে পেরে খুশি চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের ঘটনার রাতের বর্ণনায় রেজিস্টার ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর অক্সিজেন লাগানো অবস্থায়ও রোগী হাঁসফাঁস করছিল। রোগীর বাবা জানায়, গলায় বাইম মাছ চলে যাওয়ার কথা। শুরুতে গলা চেক কোথাও কোনো মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, তবে শ্বাসে মাছের আঁশটে গন্ধ ছিল। রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় এক্সরে করার সুযোগ না থাকলেও নানা লক্ষণে আমরা বুঝতে পারি মাছটি শ্বাসনালীতে চলে গেছে। পরে সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় শ্বাসনালী কেটে বাইম মাছটি বের করা হয়।
হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে অসাবধানতাবশত একটি বড় বাইম মাছ রোগীর শ্বাসনালীতে চলে যায়। এতে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি দেখা দেয়। আর তাকে খুব মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় শ্বাসনালী কেটে বাইন মাছটি বের করা। এরপর রোগী সুস্থ হলে ৭-৮ দিন পর তার শ্বাসনালীতে বসানো টিউব অপসারণ করি।
রোগী এখন সুস্থ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগে এখনও ভর্তি রাখা হয়েছে কাইউমকে।