বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় সি-ব্লকে মা ও প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।
ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর তত্ত্বাবধানে সফল সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়। অস্ত্রোপচারের আগে উপাচার্য অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনুপ্রেরণা দেন এবং টেস্টটিউব নবজাতকের মাকে অভয় দেন।
যেভাবে বিএসএমএমইউয়ের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম
বরিশালের বাসিন্দা বিএসএমএমইউয়ের ইতিহাসে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেওয়া নিঃসন্তান দম্পতি দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে ৮ বছর আগে দম্পতির রোগটি ডায়াগনোসিস হয়। এই দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ্যত্ব সমস্যা নিরসনে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও কোনো সফলতা বা তারা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) পরামর্শও পাননি।
২০২২ সালে এই দম্পতি বিএসএমএমইউয়ের ইনফার্টিলিটি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন এবং পরিপূর্ণ ইভাউলিউশন শেষে এই বিভাগ তাকে আইভিএফ উইথ আইসিএসআইয়ের (ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন, যা আইসিএসআই নামে পরিচিত, ডিমের সাইটোপ্লাজমে শুক্রাণু কোষকে ইনজেকশন দেওয়ার একটি কৌশল। এই কৌশলটি আইভিএফের একটি বিশেষ রূপ যা পুরুষ-ফ্যাক্টর বন্ধ্যত্বের গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়) পরামর্শ দেয় এবং স্টেমসেল থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে তারা এ চিকিৎসা শুরু করেন।
যথাযথ চিকিৎসা শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে এই নবজাতকের মা গর্ভধারণ করেন এবং নিয়মিত চেকআপে থাকেন। ৩৮ সপ্তাহ পর সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় এই টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ যা বললেন
বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম গ্রহণের মাধ্যমে আরেকটি সফলতার পালক যুক্ত হলো। নিঃসন্তান দম্পতির দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য সব সময় কাজ করছে ইনফার্টিলিটি বিভাগ। টেস্টটিউব নবজাতকের জন্মগ্রহণে নিঃসন্তান দম্পতিদের সহযোগিতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিনগুলোতে আজকের দিনটি অনুপ্রেরণা জোগাবে। টেস্টটিউব নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছেন। তাদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর দোয়া প্রার্থনাও করেন তিনি।
উপাচার্য আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন দেশের মাটিতে মানুষের সব ধরনের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে চলছে।
ইনফার্টিলিটি বিভাগের প্রধান ডা. জেসমিন বানু যা বললেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের প্রধান জানান, সাধারণত বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় শতকরা ৫-১০% রোগীদের আইভিএফ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ইনফার্টিলিটি বিভাগ চালু হয়। তবে ২০১৯ সাল থেকে অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর তত্ত্বাবধানে টেস্টটিউব বেবির আইভিএফ পদ্ধতি পুরোদমে চালু হয়। করোনাকালীন এই সেবা কিছুটা স্থগিত থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্বগ্রহণের পরপর ২০২২ সালে পুনরায় আইভিএফ পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর নেতৃত্বে বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা স্টেম সেল থেরাপি, পিআরপি থেরাপি, রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, এআরটি, আইইউআই, আইভিএফ সেবা প্রদান করে আসছে।