নির্বাচিত
টাঙ্গাইলে ক্যাম্পস’র ফ্রি কিডনি ও চক্ষু ক্যাম্প

প্রায় তিন হাজার সুবিধাবঞ্চিত রোগীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রসহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনটি গত ১৮ বছর ধরে করে আসছে ক্যাম্পস। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯তম বছরে এসে ক্যাম্পস চলতি বছরেও টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে ‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প’ এর মাধ্যমে অসহায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।
ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্পে টাঙ্গাইল ও এর পার্শ্ববতী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জন রোগীর নিবন্ধন ও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে মেডিকেল ক্যাম্পের ১০ দিন আগে থেকে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞসহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রসহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছে। এছাড়াও ৩০০ এর বেশি চক্ষু রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের), সংসদ সদস্য, টাঙ্গাইল-০৮। ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন জসীম উদ্দীন হায়দার, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টাঙ্গাইল।
প্রয়াস-১৯ এর মোড়ক উন্মোচন করেন সরকার মোহাম্মদ কায়সার, পুলিশ সুপার, টাঙ্গাইল। বরেণ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মনছুরুল আলম (হীরা), সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, ঢাকা ও অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ
আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ।
তিনি বলেন, এক সময় ছিল যখন কলেরা, কালাজ্বর, গুটি বসন্ত, প্লেগ, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ মানুষের অকাল মৃত্যু হতো। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। বর্তমানে চিত্র বদলে গেছে। এখন প্রতি বছর প্রায় পাঁচ কোটি মৃত্যুর মধ্যে চার কোটি মৃত্যু ঘটে অসংক্রামক ব্যাধিতে। আমাদের মত নিম্ন অথবা মধ্যম আয়ের দেশে প্রায় ৭০ ভাগ মৃত্যু ঘটে এই অসংক্রামক রোগে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক বছরে যত মৃত্যু হয় তার ৫০ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগ সম্পৃক্ত আছে।
সভায় প্রধান অতিথি, অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) বলেন, এমন মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকের ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকান্ডে সরকারী ও বিত্তবান শ্রেণির মানুষদের সহযোগিতা খুব জরুরি।
মেডিকেল ক্যাম্প এর উদ্বোধক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, সখিপুরবাসী ভাগ্যবান এই জন্য যে, তারা অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ এর মতো একজন দেশপ্রেমিক সমাজসেবক পেয়েছেন। আমাদের দেশে জটিল রোগ ও রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে তাই চিকিৎসার চেয়ে, রোগ প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন এই মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রাণ, চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকান্ড নিরলসভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হালিম, অধ্যক্ষ, কমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মো. আওলাদ হোসেন (সুমন), উপসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। মো. আমিমুল এহসান কবির, পরিচালক, শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
আলোচনা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুহাম্মদ আমিন শরীফ (সুপন), সদস্য ক্যাম্পস। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফারজানা আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল। ডা. রুহুল আমিন মুকুল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল। মো. রেজাউল করিম, অফিসার ইনচার্জ, সখিপুর থানা, টাঙ্গাইল।