দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ১৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেছেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার পরিধি ও মান বৃদ্ধি করে মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি হাসপাতালে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ‘আগামী দুমাসের মধ্যে আমরা প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে সক্ষম হবো। এর কিছুদিন পরেই আরো ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যথাযথ মানের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতালের সম্প্রসারণ, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরো সহজলভ্য ও সুলভ করার কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশের একজন মানুষও যেন মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে না থাকে, সেদিকে দৃষ্টি রেখে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানো হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে নতুনরূপে সংস্কার করে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর, দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে ১০০ শয্যার ক্যান্সার ও কিডনি হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপনসহ জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাহিদ মালেক বলেন, শিগগিরই দেশে দেড়শো নতুন আইসিইউ নির্মাণের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, এখন ৬০ শতাংশ সেবা দেয়া হয় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে, কিন্তু এখানে চিকিৎসায় অনেক বেশি। আমরা তাদের চার্জ কমানোর আহ্বান জানাচ্ছি। শহরের হাসপাতালগুলোতে দরিদ্রদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিশেষ কর্নার খোলারও চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বড় বড় বিশেষায়িত হাসপাতালে দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষেরা প্রায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও সংক্রাকম রোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশের সাফল্য আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। কিন্তু ক্যান্সার ও কিডনি রোগসহ কিছু কিছু অসংক্রামক রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদেরকে বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল অথবা বিদেশে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে অসংক্রামক রোগ মোকাবেলার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা হবে।
অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে দেশের সেরা সেবা প্রদানকারী ২৭টি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। এ বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাটাগরি থেকে পাঁচটি, জেলা সদর হাসপাতাল ক্যাটাগরি থেকে পাঁচটি, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনটি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে দুইটি, কমিউনিটি ক্লিনিক ক্যাটাগরি থেকে পাঁচটি, সিভিল সার্জন ক্যাটাগরি থেকে পাঁচটি, বিভাগীয় পর্যায় থেকে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ বক্তৃতা করেন।