রাজধানী ঢাকায় বায়ু দূষণ মহামারি পর্যায়ে পৌঁছায় মাঝেমধ্যে। এ পরিবেশ দূষণের কারণে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে কিডনি রোগী হবে ৫০ লাখ। আমরা কেউ পরিবেশ নিয়ে সচেতন নই। এমনকি গ্লোবাল ওয়ার্ড কমিউনিটিও এ নিয়ে কোনো কাজ করছে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোওয়ারী।
সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
মূলপ্রবন্ধে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণী তথা পরিবেশ-প্রতিবেশ ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। ওজন স্তর কীভাবে ক্ষয় হয় তার বিস্তারিত তিনি প্রবন্ধে তুলে ধরেন।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. ইউনুস মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন, স্টামফোর্ড বিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, ইউএসএআইডি পক্ষে আশরাফুল হক, ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের পক্ষে জাস্টিন গ্রীণ এবং ড. আবু মোস্তফা কামাল উদ্দিন।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে আরেও বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা, সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন ও সিনিয়র প্রভাষক মাহমুদা ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মারুফা গুলশাল আরা এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রিসার্চ ফেলো হুমায়ূন কবির।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোওয়ারী বলেন, আমরা সবসময় পরিবেশ মহামারির মধ্যে বসবাস করছি। পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য আমরা সোচ্চার নই। সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষই বৈশ্বিক উন্নত দেশের দূষণকারী থেকে আমারা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারছি না। স্থানীয়ভাবে আমরা যে পরিমাণ দূষণ করছি তা ধারণার বাইরে। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বিশেষভাবে ক্যানসার এবং কিডনি রোগী বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে কিডনি রোগী হবে ৫০ লাখ। এত রোগীর ডায়ালাইসিস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এ রকম অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি বাড়ছে যা আমাদের পরিবেশ দূষণের ফল।
ফাতিনাজ ফিরোজ বলেন, আমাদের জীবনের জন্য ওজোন স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সহযোগীতাই পারে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষা করতে। এ ক্ষেত্রে যুবকদেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ধনীরাই মূলত পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। আমরা বাসা, অফিস ও গাড়িতে শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার করি। যা থেকে CFC গ্যাস নির্গত হয় ফলে ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়।
অধ্যাপক ড. শহিদ আখতার হোসেন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোই CFC গ্যাস নির্গমনের জন্য প্রধানত দ্বায়ী। এদের জন্য অনুন্নত দেশগুলো ভুক্তিভোগী হতে পারে না।
অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা তার উপস্থাপনার মাধ্যমে উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশের ওপর ওজোন স্তরের ক্ষয় ও অতি বেগুনী রশ্মির বিরুপ প্রভাব তুলে ধরেন।
মারুফা গুলশান আরা বলেন, ওজোন স্তর ক্ষয় রোধে মন্ট্রিল প্রোটোকল ও ইইউ রেগুলেশন মান্য করার বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রতিকার করা সম্ভব।
আশরাফুল হক বলেন, জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি বিধি আমাদের পরিপালন করা দরকার। যদি আমরা এক্ষেত্রে সচেতন না হই তবে পরিবেশের দূষণের দায় আমাদেরই নিতে হবে।
ড. মাহমুদা পারভীন বলেন, ক্রমাগত ওজোন স্তরের ক্ষয়ের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে চলে আসে। এর প্রভাব থেকে আমাদের চোখ নিরাপদে রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।