‘আমি ত্বক ফর্সা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা পুড়ে গেল।’ এমন কথা প্রতিদিন অন্তত একজন রোগির কাছ থেকে হলেও আমাদের কে শুনতে হয়। এদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা মানসিক ভাবে হতাশ হয়ে গিয়েছেন কারন তারা রঙ ফরসাকারি ক্রিম ইউস করে ফরসা তো হয়ই নাই বরং ভালো স্কিন কে আরও খারাপ করে ফেলেছেন।
এসব রোগি রা বিভিন্ন রকমের ক্রিম দেখান যেগুলো তারা কোন ধরনের প্রেসক্রিপশান ছাড়াই বাজার থেকে কিনেছেন। আবার অনেকে আছেন যাদের গায়ের রং কিছুটা মলিন, তাই নিয়ে তারা হিনমন্যতায় ভোগেন। ফর্সা হবার আশায় তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই বাজারে থাকা বিভিন্ন নামী-বেনামী রং ফর্সাকারী ক্রিম মাখতে শুরু করেন। এই রঙ ফরসাকারি ক্রিম এর ক্ষতিকর দিক সম্পকে লিখেছেন চর্ম ও যৌন রোগ চিকিৎসক ডা. সৈয়দা সামিনা মাহ্জাবিন।
রঙ ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারে গায়ের রঙ খুব কমই ফর্সা হয়। অনেক সময় এই ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করে দিলেও ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের কোনও অংশ সাদা আবার কোনও অংশ কালো হয়ে যায়। এই ক্রিম ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে পরবর্তীতে গায়ের রঙ আরও কালো হয়ে যেতে পারে।’
কারা বেশি ঝুকে এই দিকে-
যাদের গায়ের রং কালো বা শ্যামলা।
ফর্সা যাদের হতেই হবে বলে বিশ্বাস করেন।
মেছতা বা মুখে যেকোন দাগ আছে যাদের
ব্রণ আছে যাদের
কেনো ক্ষতিকর:
ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভসহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে; যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।
রঙ ফরসাকারি ক্রিম এর ক্ষতিকর বিষয়গুলো :
- ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া,
- রং বদলে যাওয়া,
- কালশিটে দাগ পড়া
- ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া
- উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা, মানসিক অস্থিরতা থেকে বৈকল্য স্নায়ু-জনিত সমস্যা হতে পারে।
- এই ধরনের স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম অকারণে মুখে মাখতে মাখতে পাতলা হয়ে যেতে পারে ত্বক, অতিরিক্ত সূর্য-সংবেদী হতে পারে ত্বক।
- ব্রণ ও অবাঞ্ছিত লোম।
- মুখে মেছতা পরতে পারে পাশাপাশি মুখে, গলায়, হাতে বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি, র্যাশ, হয়।
- ত্বক শুকিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- যারা নিয়মিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখেন, তাদের চোখে জ্বালা থেকে শুরু করে নানা রকম অসুবিধা হতে পারে।
- মার্কারি থেকে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সফট টিস্যুরও সমস্যা হয়।
এমনকি ত্বকের ক্যান্সারের শঙ্কাও হয়। - আবার অনেক রং ফর্সাকারী ক্রিম কারনে পরে দেখা যায়, রোদে বের হতে পারছেন না বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে পারছেন না। পরে পুরো ত্বকের ব্যাপারটি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
এ ধরনের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে শুরু থেকেই একজন স্কিন ডা. এর সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।
ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য বাজারের বিভিন্ন নামে-বেনামে রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার না করে একজন স্কিন ডক্টর সাথে পরামর্শ করে রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন টা করা উচিত।
ডা. সৈয়দা সামিনা মাহ্জাবিন
চর্ম ও যৌন রোগ চিকিৎসক, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল।
স্কিনোলজিক স্কিন এন্ড হেয়ার কেয়ার, ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার।