ধুলোবালি থেকে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি : প্রতিরোধের উপায়

॥ ই-হেলথ২৪ রিপোর্টার ॥  শ্বাসকষ্টজনিত কারণে সাধারণত অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়ে থাকে। এ শ্বাসকষ্টের উৎপত্তি হয় নানা রকম অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অ্যালার্জেনের কারণে। অ্যালার্জেনগুলো হচ্ছে ধুলোবালি, ফুলের রেণু, মাইটের মল, পরিবেশের ধুলা, পোষা প্রাণীর লোম ইত্যাদি।

অ্যালার্জিজনিত হাঁপানির একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ধুলো। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ধুলোবালি এমন এক বিরক্তিকর জিনিস যা এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। বাসাবাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা ধুলোবালি, অফিসের খাতাপত্র বা ফাইলে জমে থাকা ধুলো এবং রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে ধুলো উড়ছে তা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রধান উদ্রেককারী।

ধুলোবালি মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অন্য অ্যালার্জেনের চেয়ে ধুলো খুব সহজে নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। ফলে খুব দ্রুত সর্দিকাশি হয় এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়।

সব ধরনের বা সব জায়গার ধুলোই যে হাঁপানি বা অ্যাজমার জন্য খুব বেশি ক্ষতিকারক তা কিন্তু নয়। ঘরে বা অফিসে জমে থাকা ধুলো রাস্তার ধুলোর চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। রাস্তার ধুলোতে থাকে অজৈব পদার্থ যাতে হাঁপানি, অ্যাজমা, সর্দি, কাশি, হাঁচি বা শ্বাসকষ্টের তেমন কষ্ট হয় না। তবে রাজপথে যে যানবাহন চলাচল করে তাতে যে ধুলোবালি, ধোঁয়া থাকে তা হাঁচি বা শ্বাসকষ্টের উদ্রেককারীর অন্যতম পদার্থ।

পুরনো জমে থাকা ধুলো বা ময়লা হাঁপানির জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে মাইট, ফুলের রেণু, তুলার আঁশ, পোষা প্রাণীর লোম ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক মিশে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইট ও ধুলোবালি অ্যাজমা রোগীদের জন্য বিপজ্জনক। এটি হচ্ছে এক প্রকার আর্থোপড জীব। এ পোকা এত ছোট যে, খালি চোখে দেখা যায় না।

আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া মাইট বড় হওয়া এবং বংশবৃদ্ধির যথোপযুক্ত পরিবেশ। এর বাসস্থান হচ্ছে মানুষের ব্যবহƒত বিছানা, বালিশ ও কার্পেট। মাইটের শরীর থেকে নির্গত মল, লালা, রস ধূলার সঙ্গে মিশে মানুষের শ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে যা কিনা পরে হাঁপানিতে রূপ নেয়। এ কারণে বর্তমানে আমাদের দেশে ধুলাজনিত অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমা রোগীর পরিমাণ বেশি।

গ্রামের তুলনায় শহরের বেশিরভাগ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শহরে দূষিত বায়ুর কারণে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের ওপরও হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের হ্রাসবৃদ্ধি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বাতাসে মাইটের পরিমাণ বেশি।

যাদের ধুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়, তাদের কতগুলো বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হয়-
১) এমন পরিবেশে চলা যাবে না যেখানে ধুলোর পরিমাণ বেশি।
২) ঘর পরিষ্কার এবং বিছানাপত্র ঝাড়- দেয়ার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৩) মাইট বেড়ে উঠার উপযুক্ত পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪) অ্যালার্জি প্রতিরোধক টিকা ইমিউনোথেরাপি ব্যবহার করা। ইমিউনোথেরাপি হচ্ছে এমন এক ধরনের ওষুধ যা কিনা দেহের ভেতরে অ্যালার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।

বর্তমান বিশ্বে আধুনিক চিকিৎসার একটি অন্যতম ওষুধ হচ্ছে ভ্যাকসিন বা ইমিউনোথেরাপি। তবে আমেরিকাতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেশি দিন থাকে না। আমাদের দেশেও এখন হাঁপানির অনেক আধুনিক পদ্ধতি এবং ওষুধ রয়েছে। তাই এ রোগ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অনেকে ভুল ধারণা করে থাকে, হাঁপানি একবার হলে তা ধার কোন দিন ভালো হবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই এ ব্যাপারে রোগী এবং চিকিৎসকসহ সমাজের সব স্তরের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন
পরিচালক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।

Exit mobile version