Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

ফোঁড়া কি? কেন হয়, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করনীয়

Published

on

শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে সংক্রমণের কারণে যদি পুঁজ জমা হয়, তখন তাকে ফোড়া বলে। মানুষের শরীরে নানা কারণে ফোঁড়া হতে পারে। শরীরের কোথাও ফোড়া হলে কখনো নিজে নিজে ফাটাবেন না, এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে ত্বকের উপরিভাগে ফোঁড়া হয়।এ ছাড়া বগলে, কুচকিতে, যোনিপথের বাইরেও ফোড়া হতে পারে। মাথার ত্বক, যকৃৎ, কিডনি, পাকস্থলী, দাঁত এবং টনসিলেও ফোড়া হতে পারে।

সাধারনত ফোড়ার চারপাশের ত্বকের রঙ গোলাপী বা লালচে বর্ণের হয়। তবে ডায়াবেটিস, লিউকেমিয়া, ক্যানসার, এইডস, রক্তনালির সমস্যা যেমন পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ থাকলে অথবা স্টেরয়েড থেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর শরীরে ফোড়া বেশি হয়ে থাকে।

ফোঁড়া কেন হয়?
শরীরের কোন স্থানে জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের ফলে প্রদাহ হয়ে ফোড়া সৃষ্টি হয়। আবার সুচ অথবা সুচের মত যন্ত্র দিয়েও ফোঁড়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে।

ফোড়ার লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ
সাধারনত ফোড়ার লক্ষণ ও উপসর্গ, ত্বকের কোন স্থানে ফোড়া হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে ফোড়া হলে স্পর্শ করলে গরম মনে হয় এবং অল্পতেই ব্যথা লাগে, লালচে রঙের পিণ্ডের মতো ঠেসে থাকে, খুবই ব্যথাদায়ক হয়, ফোড়ার মাথা ফোঁটা আকারে দেখা দেয়, অনেক সময় এটা দেখতে ব্রণের মতো হয় আবার ফেটেও যেতে পারে।

সঠিক উপায়ে কাটা বা পরিষ্কার করা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এমনকি এর সংক্রমণ ত্বকের ভেতরের কোষ এবং রক্তপ্রবাহ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার ফোড়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে জ্বর, বমি বমি ভাব অথবা বমি, ব্যথা এবং ত্বক লাল বর্ণ হওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

Advertisement

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
ফোঁড়া হলেই সাধারনত চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় না। তবে, ফোড়াটি ১ সে. মি. বা এক থেকে আধা ইঞ্চি বড় হলে, ফোড়ার আকার বাড়তে থাকলে, ব্যথা বাড়তে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ফোড়া হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে-

আক্রান্ত ব্যক্তির যদি বহুমূত্র, লিউকেমিয়া, ক্যান্সার, রক্তনালীর সমস্যা যেমন-পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ ইত্যাদি থাকে।
কুঁচকি অথবা মলদ্বারের কাছাকাছি ফোড়া হলে।
☑  ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট অথবা এর চেয়ে বেশি জ্বর হলে।
রক্তের বিভিন্ন রোগ যেমন- সিকেল সেল এনিমিয়া, এইডস থাকলে।
পূর্বে স্টেরয়েড থেরাপী, কেমোথেরাপী কিংবা ডায়ালাইসিস করানো থাকলে।

ফোড়া হলে করনীয়
☑  প্রথমে জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে নিতে হবে।
জোর করে ফোড়া গলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ আশপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। একটা সাধারণ বিষফোড়া সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিনের মাথায় আপনা আপনিই গলে যায়। গলে যাওয়ার পর একটা উষ্ণ এবং পরিষ্কার কাপড় বা তুলা বা গজ চেপে ধরে পুঁজ বের করে আনতে হবে। অথবা একটা পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে, চিপে নিয়ে হালকাভাবে ফোড়ার ওপর চেপে ধরলে ফোড়াটি গলে যেতে পারে।
☑  তারপরে অ্যান্টিবায়োটিক মলম হালকাভাবে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিন।
☑  ফোড়া ধরার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ব্যবহার্য টাওয়েল, পোশাক-আশাক, বিছানার চাদর ইত্যাদি গরম পানিতে ধুয়ে রোঁদে শুকিয়ে নিতে হবে।
☑ অনেকের মুখে এবং গালে প্রায়ই ফোড়া হয়, তারা দাড়ি কামানোর পর অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফোড়া এবং তার চারপাশের স্থান পরীক্ষার জন্য কিছু শারীরিক পরীক্ষা, রক্তের পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসোনোগ্রাফী করার প্রয়োজন হতে পারে।

ফোড়ার চিকিৎসা
ফোড়া নিজে নিজে ফাটালে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার ফোড়ার মধ্যে সুচ অথবা ধারালো কিছু দিয়ে পুঁজ বের করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে ফোড়ার চিকিৎসা করলে ফোড়া দ্রুত ভালো হবে। অভিজ্ঞ কারও সাহায্যে ফোড়া কেটে পুঁজ বের করে দিতে হবে। এবং ফোড়া ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করতে হবে। ফোড়া কেটে পুজ বের করার আগে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

Advertisement

ফোঁড়া প্রতিরোধে করনীয়
☑ সবসময় পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
☑ দাড়ি কামানোর সময় যেন ত্বকের কোনো অংশ কেটে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
☑ দাড়ি কামানোর পর অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পেতে পারেন।
☑ কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
☑ ডায়াবেটিস বা অন্য কোন রক্তের রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

কাদের ফোড়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফোঁড়া হওয়ার ঝুকি একটু বেশি থাকে। যেমন-
☑ যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি আছে।
☑ যাদের রক্তনালীতে সমস্যা আছে অথবা রক্তের রোগ আছে, যেমন- লিউকেমিয়া।
☑ পূর্বে কিডনি ডায়ালাইসিস করেছেন অথবা রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি করেছেন তাদের ক্ষেত্রে।
☑ যাদের অন্ত্রনালীতে সমস্যা আছে।
☑ মারাত্মক পোড়া অথবা মারাত্মক আঘাত থাকলে।

ফোঁড়া হলেই কাটতে হবে?
ফোঁড়া হলেই কাটা ছেঁড়া করতে হবে অনেকে এই ভয়েই বাড়িতে ফোঁড়ার চিকিৎসা করতে চেষ্টা করেন, এটা অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। ফোঁড়া হলে অস্ত্রোপচার করাতে হতে পারে, আবার তবে সব ক্ষেত্রে তা নাও লাগতে পারে। ফোঁড়ার অস্ত্রোপচার খুব বেশি জটিল নয়। যাঁদের আসলেই অস্ত্রোপচার দরকার, তাঁরা সঠিক সময়ে তা করিয়ে সহজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

ফোঁড়া কি? কেন হয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করনীয়
ফোঁড়া হলে নিজে নিজে না গালিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনিই অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রয়োজন মনে করলে চিকিৎসক আপনাকে অস্ত্রোপচারের বদলে অ্যান্টিবায়োটিক-জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ও হালকা গরম সেঁক দিয়ে সাময়িক উপকার পেলেও সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে ফোঁড়ার চিকিৎসা নেওয়া না হলে পরবর্তীতে সেখান থেকে ক্রমাগত পুঁজ বের হতে পারে। আবার পুজ বের না করে ওষুধ খেলে ফোঁড়ার স্থানে একধরনের গোটা হতে পারে, যার নাম অ্যান্টিবায়োমা। এরকম ক্ষেত্রে অনেক সময় গোটা বা চাকাটিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে বের করতে হতে পারে। ফোঁড়া গলিয়ে দিলেই কিন্তু সবসময় যন্ত্রণার উপশম হয় না। তাই, নিজে নিজে চিকিৎসা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও উচিত।

সবশেষে
বার বার এবং একসঙ্গে অনেক ফোড়া হলে অথবা জ্বর, ডায়াবেটিস কিংবা জটিল কোনো রোগ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগেই ফোড়া থেকে পুঁজ বের করে নিতে হবে। ফোঁড়ার চিকিৎসা করানো হলে ফোড়া দ্রুত ভালো হয়ে যায়। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হয় না। ফোড়া দ্রুত ভালো হওয়ার জন্য ফোড়া কেটে পুঁজ বের করে দিতে হয়। ফোড়া সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করতে হবে।

Advertisement
Continue Reading
Advertisement