আমাদের অনেকের ধারণা রাতে জ্বর আসলেই হয়তো জ্বরঠোসা হয়। এই ধারণা আসলে কতটুকু সত্যি? জ্বরঠোসা আসলে শুধুমাত্র জ্বরের কারণে হয়ে থাকে, তা নয়। এর একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
ঠোটের কোণায় কিংবা বর্ডারে একগুচ্ছ ফুসকুড়ি। সাধারণভাবে আমরা একে বলে থাকি জ্বরঠোস, জ্বর-ঠোসা বা জ্বরঠুঁটো। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ফিভার ব্লিস্টার বলে। প্রকাশ পাবার ২-৩ দিনের মধ্যে ব্লিস্টারে ব্যথা অনুভব হলে তখন একে বলা হয় কোল্ড সোর।
লক্ষণ:
ঠোটের কোণে, বর্ডারে বা বর্ডারের আশেপাশে গুচ্ছ-বদ্ধ ফুসকুড়ি, জ্বর, ব্যথা, বমিভাব কিংবা বমি, মাথাব্যথা।
কেন হয়:
সাধারণভাবে আমরা মনে করি জ্বর আসার লক্ষণ হিসেবে এই ফুসকুড়ি উঠেছে। আসলে তা নয়। ফিভার ব্লিস্টারের কারণ হচ্ছে HSV-1 ইনফেকশন। এই ইনফেকশনের কারণেই জ্বর আসে! তবে হ্যাঁ, জ্বরের কারণেও ফিভার ব্লিস্টার হতে পারে যদি সেই জ্বর অন্য কোনো ইনফেকশনের কারণে হয় যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
যাদের বেশি হয়:
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০% মানুষই HSV-1 এ আক্রান্ত থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগই সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং দশ বছর বয়সে প্রথম প্রকাশ পায়। প্রথমবার হওয়া ফিভার ব্লিস্টার সেরে যাবার পর HSV-1 স্নায়ুকোষে লুকিয়ে থাকে এবং জীবনে বারবার এর প্রকাশ ঘটে।
যেসব কারণে ফিভার ব্লিস্টার পুনরায় প্রকাশিত হতে পারে: কোনো ইনফেকশন। মানসিক চাপ। মেয়েদের মাসিকের সময়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি।
সাধারণভাবে ৭-১৪ দিন উপসর্গ বর্তমান থাকলেও ৮-১০ দিনের মধ্যে মধ্যে ফিভার ব্লিস্টার এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রথম সপ্তাহে অ্যান্টি-ভাইরাল জেল লাগালে আরোগ্যে দ্রুত হয়।
তবে ১৪ দিনের বেশি সময় ব্যথাযুক্ত ফিভার ব্লিস্টার থেকে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। খালি চোখে দেখেই ফিভার ব্লিস্টার সনাক্ত করা সম্ভব। তবে ব্লিস্টারের ভিতরের তরল থেকে ডিরেক্ট ইমিউনোফ্লুরোসেন্স টেস্ট বা পলিমারেজ চেইন রিএ্যাকশনের মাধ্যমে ভাইরাস সনাক্ত করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ:
১. ব্যবহৃত পানির গ্লাস, চামচ, লিপস্টিকসহ অন্যান্য কসমেটিক্স কারো সঙ্গে শেয়ার না করা।
২. ব্লিস্টার স্পর্শ করলে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা।
৩. মানসিক চাপ মুক্ত থাকা।
৪. সানস্ক্রিন ক্রিম, লিপ-বাম ব্যবহার করা।
৫. পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন।