চিকিৎসক ও সেবা সংশ্লিষ্ট জনবল সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে কক্সবাজার জেলা সদর মডেল হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা কার্যক্রম। বিশেষায়িত এসব সেবা বন্ধ হলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে পর্যটক ও স্থানীয়রা। বিশেষ করে সংকটাপন্ন রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ সংকট দূর করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
কক্সবাজার জেলার ২৫ লাখ মানুষের সঙ্গে ২০১৭ সালে যোগ হয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। আর প্রতিবছর কক্সবাজারে বেড়াতে আসে কয়েক লাখ পর্যটক। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর উন্নত সেবার আধুনিক প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। গুরুত্ব বিবেচনায় অন্যতম হলেও এ হাসপাতালে সরকারি মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের মোট ৬৬ পদের এখনো ১২টি শূন্য। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, আরএমওসহ বর্তমানে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ৫৪ জন। স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় ছয়টি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘হেলথ অ্যান্ড জেন্ডার সার্ভিস প্রজেক্টে’ (এইচজিএসপি) ৬২ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়। যারা আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি বিভাগ, ইনডোর, আউটডোরে সেবা দিতেন। ফান্ড সংকটের কারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ২২ জন চিকিৎসককে বাদ দিয়ে ৪০ জনে কমিয়ে আনা হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেখান থেকে আরও আটজন কমিয়ে ৩২ জনে করা হয়েছিল। এরই মধ্যে গেল ৩০ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে ওই ৩২ চিকিৎসকের চাকরিও শেষ হয়।
এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি বিভাগ, আইসিইউ, সিসিইউ, প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষাসহ বিশেষায়িত সেবা এক প্রকার বন্ধ। এখন এটি পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু চিকিৎসক নয়, এ প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া নার্স ও ক্লিনার, আয়াসহ ১৪৭ জনের চাকরিও চলে গেছে। এ অবস্থায় বিপুল সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও মূলত ২০০৯ সাল থেকে এটি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হাতে-কলমে শিক্ষার অস্থায়ী মেডিকেল হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী জরুরি ও বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ৮০০-৯০০ রোগী। ইনডোরে জরুরি প্রসূতি ও শিশু চিকিৎসক এবং আউটডোরে নাক, কান, গলা (ইএমটি) চিকিৎসক নেই। রোগী অনুপাতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে ব্যর্থ সরকার।
চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা সদর মডেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আশিকুর রহমান বলেন, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী সেবার জন্য আসেন। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর মাত্র তিনজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। বিপুল পরিমাণ রোগীর সেবা দিতে যেমন হিমশিম খাচ্ছি, তেমনি রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যদি ন্যূনতম সেবা চালু রাখতে হয় তাহলে জরুরি বিভাগে অন্তত ১২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। এছাড়া ২৫০ শয্যার হলেও হাসপাতালে ইনডোরে গড় হিসেবে প্রতিদিন ৮০০-৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন। বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতি ও শিশু বিভাগ এবং আউটডোরে ইএমটি বিভাগে চিকিৎসক সংকটের কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলা সদর হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম হিসেবে সাধারণত আইসিইউ, সিসিইউ এবং স্ক্যান বিভাগ থাকে না। কিন্তু গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার বিশেষায়িত এসব সেবা চালু করে। ১০ শয্যার আইসিইউ চালু রাখতে রোস্টার মতে কমপক্ষে ১৬ জন ডাক্তার প্রয়োজন এবং সিসিইউতে আটজন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ দুই বিভাগে বর্তমানে আমাদের ডাক্তার রয়েছে একজন করে। চিকিৎসক পাওয়া না গেলে বিশেষায়িত এসব সেবা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। তাই অব্যাহত রোগীর চাপ, জনগণের সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে বিদ্যমান সরকারি জনবলের সঙ্গে অতিরিক্ত চিকিৎসক প্রয়োজন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, এনজিও প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। চিকিৎসক সংকট দুর করতে এইচজিএসপি প্রকল্পের আদলে ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অপারেটিং (আইএসও)’ প্রকল্প নামে নতুন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আশা করছি আইএসও প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাস হলে সংকট দূর হবে।
আইএসও প্রজেক্ট ডিরেক্টর বিপাশ খীসা বলেন, আইএসও প্রজেক্টটি আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তা পাস হলে ইউএন এজেন্সির নঙ্গে এগ্রিমেন্ট সই করে আবার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে, কবে নাগাদ প্রকল্পটি পাস হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।