Home জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুনহঠাৎ হাঁটু মচকে গেলে যা করবেন

হঠাৎ হাঁটু মচকে গেলে যা করবেন

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

জীবনের কোনো না কোনো সময় যে কারোর হাঁটু মচকাতে পারে। হাঁটু এমন একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ জোড়া যা বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, উপরে উঠতে এবং নামতে একান্ত প্রয়োজন। এ ধরনের কাজেই অধিকাংশ সময় হাঁটু মচকায়। শরীরের ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে হাঁটু অন্যতম।

হাঁটুর গঠন
হাঁটুর জোড়া তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট ও দুটি মেনিসকাস (তরুণাস্থি) থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিসু, যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ায় শক্তি প্রদান করে, হাড়ের নড়াচড়ায় অংশগ্রহণ করে এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। মেনিসকাস শরীরের ওজন সমভাবে ঊরুর হাড় থেকে পায়ের হাড়ে সরবরাহ করে, হাড়ের প্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় সহায়তা করে এবং জোড়ার দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখে। মচকানো (টুইসটিং) আঘাতে হাঁটুর লিগামেন্ট ও মেনিসকাস ইনজুরি হয়ে থাকে। মচকানো ইনজুরিতে লিগামেন্ট বিস্তৃত হতে পারে এবং আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। হাঁটু মচকানোর জন্য মেনিসকাসের বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি ছাড়াও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূর্ণ টিয়ার হতে পারে। ৭০ শতাংশ মচকানো আঘাতে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের সঙ্গে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।

মচকানো ইনজুরির কারণগুলো
—হঠাত্ মচকানো গতি।
—আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে গেলে, গাড়ি বা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা।
—ফুটবল, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি ও হাডুডু খেলোয়াড়দের মাঝে হাঁটুর মচকানো ইনজুরি হয়।
—মই থেকে পড়ে গেল।
—উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে।
—গর্তে পড়ে গেল।
—সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক স্টেপ ভুল করলে।
—হাঁটুর বাহির পার্শ্বে সরাসরি আঘাত।

হাঁটু মচকানো ইনজুরির লক্ষণগুলো
—প্রথমে তীব্র ব্যথা, পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।
—ব্যথা হাঁটুর বাইর পার্শ্বে এবং পেছনে অনুভূত হবে।
—হাঁটুর ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়।
—আঘাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়।
—ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না।
—দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
—আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে।
—বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
—অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুকে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে।
—উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
—হাঁটু অস্থিতিশীল বা ছুটে বা ঘুরে যাচ্ছে, এরকম মনে হবে।
—দীর্ঘদিন ধরে লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়

প্রাথমিক করণীয়
—হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
—বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে ইহা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্বতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
—হাঁটুতে ইলাসটো কমপ্রেসন বা স্পিল্গন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।
—হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফুলা কম হবে।
—এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।
—হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিত্সা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিত্সকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রাথমিক চিকিত্সায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর, হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কি কি লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। কখনও কখনও এক্স-রে ও এমআরআই-এর সাহায্য নিতে হয়।

প্রয়োজনীয় চিকিত্সা
হাঁটুর লিগামেন্ট বিস্তৃত (স্ট্রেস) ইনজুরি ও মেনিসকাসের ক্ষুদ্র ইনজুরি হলে প্রাথমিক চিকিত্সায় ভালো হয়। তবে কিছু কিছু আংশিক টিয়ারের ক্ষেত্রে হাঁটুর পেশির ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হলে নতুন করে লিগামেন্ট তৈরি করতে হয়। এর মধ্যে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট তৈরি করা জরুরি কারণ যা না করলে হাঁটুতে তাড়াতাড়ি ওসটিও আর্থ্রাইটিস হয়ে জোড়া নষ্ট হতে পারে। বর্তমানে হাঁটুর বাহির থেকে টেনডন নিয়ে ছোট দুটি ছিদ্র দিয়ে আর্থ্রোস্কোপ যন্ত্র হাঁটুতে প্রবেশ করিয়ে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করা হয়। বড় ধরনের মেনিসকাস ইনজুরি হলে রিপেয়ার বা রিমোভ করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারির পর নিয়মিত ও পরিমিত পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

You may also like