কিডনি রোগের সঙ্গে ওষুধের অনেকটা সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি ওষুধ খেলে কিডনি তাত্ক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করে দিতে পারে, যাকে বলা হয় Acute Renal Failure (ARF) । আবার ওষুধ খেয়ে যেমন কিডনি রোগ হতে পারে ঠিক তেমনি কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ওষুধ সেবনেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
সুতরাং ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তার ও রোগীকে সতর্ক থাকা দরকার, যেমন ওষুধজনিত কিডনি রোগ হতে পারে তেমন কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিম্নে এ বিষয় দুটো আলোচনা করা হলো :
ওষুধজনিত কিডনি রোগ
প্রকাশিত বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, বিভিন্ন মাত্রার ওষুধে শতকরা ৭-১০ ভাগ কিডনি তাত্ক্ষণিকভাবে বিকল (ARF) হয়ে যেতে পারে এবং শতকরা ৫-৭ ভাগ ধীরগতিতে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। একে বলা হয় ক্রনিক রেনাল ফেলিউর বা CRF। এর কারণ হচ্ছে বেশিরভাগ ওষুধই কিডনি দ্বারা বের হয়ে যায়, আর সেজন্যই কিডনিকে বিভিন্নম্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ওষুধের জন্য বমি হয়ে রক্তচাপ কমেও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়াও কিছু কিছু ওষুধের কারণে (Nephrotoxic drugs) নানা ধরনের অ্যালার্জি, কিডনির রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া, এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে খর্ব করে বা সরাসরি কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেমন : ব্যথার ওষুধ বা NSAID গ্রুপের ওষুধ প্রতিনিয়ত সাধারণত মানুষ ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করে থাকে। অনেক সময় প্রস্রাব বেশি করার জন্য Frusemide বা Diuretics অথবা পায়খানা করার জন্য Laxative জাতীয় ওষুধ খেয়ে শরীরের পানি, লবণ, পটাশিয়াম ও ক্ষারের তারতম্য কমে আকস্মিক কিডনি ফেলিউর হতে পারে। এসব ওষুধের সঙ্গে যখন ব্যথা উপশমের ওষুধ দেয়া হয় তখন কিডনির ওপর আরও অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
সচরাচর জীবাণুজনিত ইনফেকশনের জন্য যেসব এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে সালফোনামাইড, কোট্রাইমোক্সাজল, পেনিসিলিন, Interstitial Nephritis করতে পারে। এমনকি ব্যথার জন্য ব্যবহৃত এসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, আইব্রুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন ইত্যাদি Acute Interstitial Nephritis থেকে শুরু করে ARF করতে পারে। কিডনির ছাঁকনিকে নষ্ট করে নেফ্রাইটিস করতে পারে যেমন : পেনিসিলামাইন, লেড, গোল্ড, মারকারি এবং আর্সেনিক মিশ্রিত ওষুধগুলো। জেন্টামাইসিন, কেনামাইসিন, সেফাললোসপরিন, রিফামপিসিন, এলুপিরিনল জাতীয় ওষুধও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিডনিকে অকেজো করে ফেলতে পারে। আবার অনেক দিন ধরে বা প্রায় ২-৩ বছর ধরে প্যারাসিটামল, এসপিরিন, ফেনাসিটিন, ক্যাফিন জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে খেলে অথবা ১০-১৫ বছরে এক থেকে দুই কেজি এনালজেসিক সেবন করলে Analgesic Nephropathy হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উন্নত বিশ্বে ১০-৩০ ভাগ ক্ষেত্রে ধীরগতিতে কিডনি অকেজো হওয়ার একটা অন্যতম কারণ। যাদের কিডনি এরই মধ্যে অসুস্থ অথবা কিছুটা হলেও অকেজো হয়েছে তাদের জন্য ওষুধের প্রয়োগ এবং প্রভাব কিরকম এ সম্বন্ধে এবার আলোচনা করা হলো :
কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার
কিডনি অকেজো বা বিকল থাকলে ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কেননা, কিডনির কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ হলো পরিপাকের পর শরীর থেকে ওষুধসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত করা। কাজেই কিডনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন রক্তে ওষুধের অবস্থান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় থাকতে পারে। এমনকি ওষুধ কিডনি থেকে বের হওয়ার পথে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়, যার ফলে ওষুধ সেবনে, মাত্রায় এবং ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। রক্তে ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন বেশি থাকলে বা কিডনি অকেজো হলে যেসব ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ যেমন— Tetracycline, Cotrimoxazol, Sulfonamide, Nalidexic acid, Nitrofurantion, Kenamycin, Spiron olactone, Streptomycin, Diclofenac, Noproxan, Aspirin জাতীয় ওষুধ।
কিডনি অসুস্থ থাকলে যেসব ওষুধের মাত্রা কমাতে হয়
Antibiotics: Ampicillin, Amoxycillin, Cephlosprin, Cephradin, Ciprofloxacin, Gentamycin, Kenamycin, Ceftazidime etc.
Anti TB : Ethambutol.
Antifungal : Amphoterticin
Anti Hypertensive : Captopril, Atenolal, Analprilo, Lisinopril.
Analgesic: Indomethacin, Ibuprofen, Ketiprofen, Penicillamin, Gold, Allupurinol.
Immunosuppressive: Methotraxate, Cyclosporine, Cisplatin, Carboplatin.
ওষুধ যেমন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় তেমনি ওষুধের অপব্যবহারে কিডনিসহ যে কোনো অঙ্গের ক্ষতিও হতে পারে। কাজেই ডাক্তার ও রোগী উভয়কেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে, যাতে করে ওষুধজনিত কিডনি রোগ না হয়। তাই কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে করে অসুস্থ কিডনি আরও বেশি অসুস্থ না হয়।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল ইসলাম (সেলিম)
নেফ্রোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা