Home জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুনইসিজির রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেও কি হৃদরোগ থাকতে পারে?

ইসিজির রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেও কি হৃদরোগ থাকতে পারে?

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

রহমত আলী, ৫০ বছর বয়স; তিনি একজন লবণ চাষী, থাকেন মহেশখালী, কক্সবাজার। তিনি বুকে ব্যথার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেন। ডাক্তার সাহেব তাকে একটি ইসিজি করার পরামর্শ দিলেন। ইসিজির রিপোর্ট এলো স্বাভাবিক। ডাক্তার সাহেব তাকে কিছু ওমেপ্রাজল জাতীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিলেন, কিন্তু রহমত আলীর দুই সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার পরও বুকের ব্যথা ভালো হয়নি। বরং লবণের বোঝা মাথায় নিয়ে বহন করলেই কিছু দূর যাওয়ার পর বুকে চাপ দেয় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

তিনি আবার স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার সাহেব তাকে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সাক্ষাতের পরামর্শ দেন। আরেকজন রোগীর পরামর্শে মালিবাগে আমার চেম্বারে আসেন এবং তার রোগের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করেন।

* ইসিজির রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেও কি হৃদরোগ থাকতে পারে?
– হ্যাঁ, ইসিজির রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেও বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ থাকতে পারে।

* করোনারি আর্টারি ডিজিজে (CAD) বা হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে কখন ইসিজি স্বাভাবিক থাকতে পারে।
– সাধারণত হার্ট অ্যাটার্ক বা মায়োকর্ডিয়াল ইনফাকশন না হওয়া পর্যন্ত ইসিজির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে না। তাই কোনো রোগীর হার্টের রক্তনালিতে এক বা একাধিক ব্লক থাকলেও ইসিজি স্বাভাবিক হতে পারে।

* সেক্ষেত্রে আমরা কীভাবে করোনারি আর্টারিতে বা হার্টের ব্লক আছে তা অনুমান করতে পারি?
– যদি ইসিজি স্বাভাবিক হয়, কিন্তু রোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়, বুকে ব্যথা হয় অথবা রোগী ধূমপায়ী হয় অথবা রোগীর ডায়াবেটিস থাকে বা রোগীর উচ্চরক্তচাপ বা রক্তের কলস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তবে অবশ্যই রোগীকে Proper evaluation-এর জন্য ETT (Exercise Tolerance Test) করা উচিত। তাহলে হার্টের রক্তনালিতে যদি ৭০ শতাংশের বেশি ব্লক (Stenosis) থাকে তা ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

* একজন রোগীর বুকে ব্যথা থাকলে ও ECG স্বাভাবিক হলে কী করা উচিত?
– একজন রোগীর বুকে ব্যথা হলে ও ECG স্বাভাবিক হলে সেসব ক্ষেত্রে বুকে ব্যথার কারণ নির্ণয়ের জন্য Echocardiography, ETT, USG of Upper abdomen, CXR P/A View এবং প্রয়োজনে Angiogram করা উচিত।

রহমত আলীকে বুকে ব্যথার কারণ নির্ণয়ের জন্য ইকো, ইটিটি, উপরের পেটের আলট্রাসনোগ্রাম, বুকের এক্স-রে, রক্তের ডায়াবেটিস এবং চর্বির মাত্রা নির্ণয়ের পরীক্ষা দেওয়া হলো। রোগী উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো করলেন এবং রিপোর্টসহ চেম্বারে দেখা করলেন। রোগীর রিপোর্টে দেখা গেল- ইকো স্বাভাবিক, ইটিটি পজিটিভ, বুকের এক্স-রে স্বাভাবিক, পেটের আলট্রাসনোগ্রাম স্বাভাবিক কিন্তু রোগীর ডায়াবেটিস আছে ১৩.৪mmol/L এবং রোগীর রক্তে উচ্চমাত্রায় কলস্টেরল আছে (TC-300mg/L, TG-350mg/L, HDL-30mg/L, LDL-160mg/L) রোগীর কিছু হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ, উচ্চমাত্রায় কলস্টেরলের ওষুধ এবং কিছু পরামর্শ দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হলো। তখন রোগী কিছু প্রশ্ন করলেন-

* ইসিজি স্বাভাবিক থাকলে ETT করার আগে কি Echo করার প্রয়োজন আছে?
– কিছু কিছু হৃদরোগ আছে যেমন- Aortic Stenosis অথবা HOCM (Hypertrophic Obstructive Cardiomyopathy) যেখানে ইসিজি স্বাভাবিক থাকে কিন্তু ETT করালে ETT করার সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব রোগীকে আমরা ETT থেকে বিরত রাখি। তাই কিছু কিছু রোগ যেখানে ইটিটি করালে ঝুঁকি বেশি সেসব রোগ Exclude করার জন্যও অনেক সময় ETT করার আগে Echo পরীক্ষা করাতে হয়।

* কোনো রোগীর বুক ব্যথা হলে USG of Upper abdomen কেন করাতে হবে?
– অনেক সময় পিত্তথলিতে ইনফেকশন বা পাথর হলে বিশেষত মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে (Cholelithiasis) বুকে ব্যথা হতে পারে বা Upper Abdomen discomfort বা বুক ব্যথা বলে মনে হতে পারে। তাই USG of Upper Abdomen পরীক্ষা করানো উচিত।

* কোনো রোগীর ইসিজি স্বাভাবিক হলে CXR P/A View পরীক্ষার ভূমিকা কী?
– ইসিজি স্বাভাবিক হলেও বুকে ব্যথার অন্যান্য কারণ যেমন- ফুসফুসের Pathology-এর সমস্যা নিরূপণের জন্য CXR P/A View পরীক্ষা করানো হয়।

* ইসিজি স্বাভাবিক থাকলেও কি কোনো রোগীর হার্টে মারাত্মক সমস্যা থাকতে পারে?
– হ্যাঁ, ইসিজি স্বাভাবিক থাকলেও কোনো কোনো রোগীর হার্টে মারাত্মক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন- রোগীর Ischaemic Heart Disease অথবা Valvular Heart Disease, Cardiomyopathy, Pericardial Heart Disease থাকতে পারে যেখানে ECG পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে।

রোগী বাড়িতে যাওয়ার পর নিয়মিত ওষুধগুলো সেবন করেন এবং দুই সপ্তাহ পর রোগীর বুকে চাপের অনুভূতি অনেক কমে গেল এবং রোগী এখন অনেক দূর হাঁটতে পারে; বুকে চাপ অনুভব ছাড়াই। রহমত সাহেব নিয়মিতভাবে ওষুধগুলো খেতে থাকেন। দুই মাস পরপর নিয়মিতভাবে ঢাকায় আসেন Followup-এর জন্য এবং তিনি বর্তমানে ভালো আছেন।

লেখক : অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান (ফারুক)
এমবিবিএস (ডিএমসি), এমডি (কার্ডিওলজি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এফএসিসি (আমেরিকা), এফএসিপি, এফএএসই, এফআরসিপি, এফসিসিপি, এফইএসসি, এফএএইচএ, এফএপিএসআইসি, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি; চেম্বার : মেডিনোমা, মালিবাগ মোড়, সোহাফ টাওয়ার।

You may also like