॥ সানজিদা আক্তার খান ॥ শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক আশা থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল প্রত্যেক বাবা-মা’ই চায় তাদের আদরের সন্তান যেন সুখী, সুন্দর, আনন্দময় পরিবেশে বড় হয়ে উঠুক বেড়ে উঠুক আপন গতিতে। তেমনি জšে§র পর থেকে প্রত্যেক শিশু তার আপন পরিবেশে বাবা-মায়ের আদর ভালোবাসায় নিরাপদ ও শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। এমনকি জীবনে সব ক্ষেত্রে নিজের পারিবারিক পরিবেশের ছাপ ফেলে জীবন গড়ার আশা ব্যক্ত করে।
ষ শিশুদের হ্যাপি ফ্যামিলি নির্ভর করে তার প্রতি বাবা-মায়ের আচার-আচরণ, আদর-øেহ, মনোযোগ, দায়িত্ববোধ এবং স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারের ওপর।
ষ একটি শিশু তখনই আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে উঠবে যখন শিশু তার পরিবারে নিরাপদ থাকবে এবং ভালোবাসায় পূর্ণ রবে।
ষ শিশুরা সবসময় ভালোবাসা, আদর চায়। স্বাধীনভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়। তার প্রতি সবার সুন্দর মনোযোগ থাকুক এটাও তাদের কাম্য। এখানে অর্থনৈতিক মানদণ্ড বিবেচনায় আসে না।
ষ অনেক সময় দেখা যায়, প্রচুর অর্থ-সম্পদের মধ্যে বড় হয়েও শিশু হতাশাগ্রস্ত, বিষণœ এমনকি বড় হতে হতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এটার মূল কারণ মা-বাবার পর্যাপ্ত সময় না দেয়া। তাদের কাজের লোকদের ওপর রেখে নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকা শিশুদের কথায় কথায় বকা দেয়া। তাদের নিরাপত্তার প্রতি দৃষ্টি কম থাকে।
ষ আবার অনেক পরিবারে সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকার পর সন্ধ্যায় শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়ের গল্প করা, একসঙ্গে বসে খাওয়া, তাদের ভালো-মন্দ খোঁজ রাখা এমনকি তাদের সুন্দর মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এসবের মধ্যে শিশু বাবা-মায়ের একান্ত সান্নিধ্যে আনন্দে বেড়ে ওঠে।
ষ পারিবারিক পরিবেশ যদি নিরাপদ না হয়; বাবা-মায়ের সব সময় ঝগড়া, মারামারি, হিংস্রতা যখন-তখন প্রকাশ পায়; শিশুর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে না চাওয়া, তাদের বেড়াতে না নিয়ে যাওয়া, মোটকথা শিশুদের গুরুত্ব যে বাবা-মা দেয় না সেসব শিশু বড় হয়ে নিজেকে একা মনে করে। হীনমন্যতা, আÍকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর মনোভাব নিয়ে শিশু বেড়ে ওঠে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের এভাবে প্রকাশ করতে পছন্দ করে।
ষ একটি শিশুর পারিপার্শ্বিক প্রভাব, বাবা-মায়ের আচরণ সবকিছু মিলেই আনন্দ ও সুখী পারিবারিক জীবন গড়ে ওঠে। শুধু ঘরেই নয় শিশু স্কুলে কি ধরনের আচরণ করে কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, স্কুলের বন্ধুরা তার প্রতি কি মনোভাবÑ সবকিছুই বাবা-মায়ের লক্ষণীয় বিষয়। কারণ শিশু ঘরে আনন্দে থাকলে চলবে না স্কুলে আনন্দে না থাকলে ঘরে এসে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
ষ অনেক শিশু স্কুলে বন্ধুদের না বলে পেন্সিল, কালার বক্স এমনকি টিফিন চুরি করে। এটা এক ধরনের সায়ক্রিয়াট্রিক ডিজ অর্ডার। এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় পরিবারে মা-বাবা যদি তাদের চাহিদা অনুযায়ী আদর-যতœ না করে, তাদের এসব বিষয় গুরুত্ব না দিয়ে হালকাভাবে দেখে তাহলে দিনদিন এই ধরনের আচরণ বেড়েই চলে।
ষ অনেক সময় দেখা যায় যে পরিবারে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে অথবা বাবা বা মায়ের মৃত্যু; এতে করে ঘরে শিশুর পারিবারিক পরিবেশ আনন্দের বদলে বিষণœতা ও নিরানন্দময় হয়ে পড়ে। তখন শিশুরা সব সময় আতংক, উৎকণ্ঠায় একেবারে চুপচাপ হয়ে যায়। জিনিসপত্র ভাঙচুর করে এবং সবার বিরক্তির কারণ বলে নিজেকে অবাঞ্চিত মনে করে।
ষ অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে সৎমা ও বাবাকে মেনে নিতে পারে না এবং তাদের প্রতি ঘৃণাবোধ জš§ নেয়। এই ধরনের শিশু বড় হয়ে নিজেকে সমাজে খাপ খাওয়াতে পারে না এবং অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যায়।