চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে, চোখের পেছনের øায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়াকে গ্লুকোমা বলা হয়। গ্লুকোমা হলো বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। স্বাভাবিক চোখের চাপ সাধারণ ১০-২১ মি. মি. মার্কারি। অস্বাভাবিক চোখের চাপ থাকলে সব পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করে ত্বরিত চিকিৎসা নেয়া বাঞ্ছনীয়।
যে কারণে হয়?
বেশি বয়সজনিত কারণে চোখের গঠন পরিবর্তন, চোখের জš§গত গঠনে ত্র“টি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি, ছানি পেকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে হতে পারে।
এছাড়াও, পারিবারিকভাবে যাদের এ রোগ আছে, যারা মাইনাস পাওয়ার চশমা পরেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উপসর্গ
হঠাৎ করে এক চোখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, তার সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। ক্রমান্বয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্যথাবিহীনভাবে উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এবং চশমার পাওয়ার পরিবর্তন নিয়েও রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসেন। মাঝে মাঝে দৃষ্টিসীমানার যে কোন এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ছানি পেকে চোখ লাল হওয়া ইত্যাদিও এ রোগের উপসর্গ হতে পারে। জš§গত বড় চোখ, চোখ হতে পানি পড়া এবং আলোতে চোখ বন্ধ কর ফেলা জš§গত গ্লুকোমার লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিরোধ
■ পারিবারিকভাবে যাদের গ্লুকোমা রোগের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখ পরীক্ষা করাতে হবে।
■ অল্প আলোতে কারও চোখে এবং মাথায় ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
■ চোখ ছানি পড়লে তা পেকে যাওয়ার আগে অপারেশন করিয়ে নেয়া ভালো।
■ চোখে প্রদাহ হলে সেটা হতে গ্লুকোমা হওয়ার আগে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
■ চোখে আঘাতের পর দেরি না করে চিকিৎসা করাবেন।
■ স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি যারা নেন তারা নিয়মিতভাবে অন্তত ৩-৪ মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করাবেন।
■ আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ কোন হাসপাতালে অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখের ছানি অপারেশনসহ বিভিন্ন অপারেশন করালে অপারেশন পরবর্তী গ্লুকোমা রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা যায়।
■ পরিশেষে জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনÑ যেমন পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, লবণ জাতীয় খাবার বর্জনের মাধ্যমে তথা ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
যা করতে হবে
ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। চোখের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি হলে একটি ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চোখের চাপ যদি বেশি থাকে অথবা ১টি ওষুধে যদি নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে ২টি অথবা ৩টি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি ২-৩টি ওষুধে চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে এবং আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি লোপ পেতে থাকে, সে ক্ষেত্রে ট্রাবেকুলেকটমি নামক অপারেশনের মাধ্যমে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাচ্চাদের গ্লকোমা ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেক্ষেত্রে ট্রাবেকুলেকটমি, ট্রাবেকুলোটমি, গনিয়টমি ইত্যাদি অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। সেকেন্ডারি গ্লুকোমায় গ্লুকোমার চিকিৎসার সঙ্গে কারণ চিহ্নিত করে তার প্রতিকার করতে হবে। প্রতি ২ মাস অন্তর ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তখন চোখের প্রেসার চেক করা এবং øায়ু পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে ফিল্ড টেস্ট করানো যেতে পারে।
লেজার থেরাপির মাধ্যমে গ্লুকোমার চিকিৎসা করা সম্ভব। যেমন আর্গন লেজারের সহায়তায় অপেন এঙ্গেল গ্লুকোমা এবং ইয়াগ লেজারের সহায়তায় এঙ্গেল ক্লোসার গ্লুকোমার চিকিৎসা করা যায়। ওষুধ ব্যবহারে নিয়মানুবর্তী হলে গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মনে রাখতে হবে, যেহেতু এই রোগে øায়ুর পরিবর্তন হয়, সেহেতু এটা অপূরণীয়। পরে আরও বেশি ক্ষতি হতে চোখকে রক্ষা করাই হলো গ্লুকোমা চিকিৎসার উদ্দেশ্য।
ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান
চক্ষু বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী