Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

‘হেপাটাইটিস নির্মূলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে’

Published

on

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরামর্শকও। হেপাটাইটিস রোগের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন-

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস আক্রান্তের সংখ্যা কেমন? কোন জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি? হেপাটাইটিসের কোন ধরন আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়?
মামুন আল মাহতাব: বাংলাদেশে লিভারের খারাপ রোগগুলো, অর্থাৎ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। এ দেশে ৭০ ভাগের বেশি লিভার সিরোসিস আর লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী হচ্ছে এ দুটি ভাইরাস। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি একধাপ এগিয়ে। এ ভাইরাস ৬০ শতাংশের বেশি লিভার সিরোসিস আর লিভার ক্যানসারের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমিত। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দশমিক ৮ শতাংশ। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মেডিসিন বিভাগগুলোতে প্রতিবছর ভর্তি রোগীর ১২ শতাংশ লিভার রোগে আক্রান্ত। যেকোনো বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সফল টিকাকরণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের গুটিকয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশও পাঁচ বছর বয়সীদের মধ্যে হেপাটাইটিস বির প্রাদুর্ভাব ১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

হেপাটাইটিসের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
মামুন আল মাহতাব:
হেপাটাইটিস বি এবং সি হচ্ছে রক্তবাহিত ভাইরাস। এরা ছড়ায় শরীরে দূষিত রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে। দূষিত কোনো সুই, রেজার, ক্ষুর, ব্লেড ইত্যাদির মাধ্যমে ভাইরাস দুটো ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস বি এবং সি প্রতিরোধে তাই জোর দিতে হবে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের ওপর। এটি রোধে যে আইন আছে, তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। ব্যবহৃত সুইয়ের পুনর্ব্যবহার প্রতিরোধ নিশ্চিত করাটাও জরুরি।

দেশে হেপাটাইটিসের চিকিৎসা পরিষেবা কেমন আছে? প্রান্তিক মানুষের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?
মামুন আল মাহতাব:
হেপাটাইটিস বি এবং সি সত্যি সত্যি যদি নির্মূল করতে হয়, তাহলে দরকার আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতিতে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি আছে। তবে আমরা এগিয়েছিও অনেকটা পথ। ২০০৯ সালে বিএসএমএমইউর বাইরে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজে হেপাটোলজির সহকারী অধ্যাপকের একটিমাত্র শূন্যপদ ছিল। এখন তা বেড়ে ৩০ ছুঁই ছুঁই। দেশের প্রায় ২০টি সরকারি মেডিকেল কলেজসহ একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লিভার বিশেষজ্ঞ আছেন। সারা দেশে শতাধিক লিভার বিশেষজ্ঞ আছেন।

দেশেই এখন লিভার ফেইলিওরের জন্য প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, লিভার ডায়ালাইসিসসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা আছে। এখন আমাদের হাতে শতাধিক পিসিআর ল্যাব আছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে এলে পিসিআর ল্যাবগুলোকেই হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের ডিএনএ এবং আরএনএ নির্ণয়ের কাজে লাগাতে পারব।

Advertisement

বর্তমান সময়ে করোনা ছাড়া অন্য রোগগুলো কি উপেক্ষিত হচ্ছে? করোনা পরিস্থিতিতে হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে কি ঝুঁকি তৈরি করছে?
মামুন আল মাহতাব:
করোনাকালে অন্যান্য নন-কোভিড রোগগুলোর মতো হেপাটাইটিসের চিকিৎসাও মারাত্মকভাবেœব্যাহত হচ্ছে। টিকা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কোভিডকেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় তার কিছুটা প্রভাব চলমান টিকাদান কর্মসূচিতে পড়বে। আমরা কোভিডের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের জীবনযাত্রাকে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছি। তেমনি একইভাবে হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন নন-কোভিড চিকিৎসাসেবাকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করতে হবে। কারণ, একসময় যে হেপাটাইটিস বি বা সি বা অন্য কোনো নন-কোভিড ভাইরাস আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না, এ কথা হলফ করে বলা যায় না।

হেপাটাইটিসের টিকার সম্প্রসারণ কতটা দরকার? বর্তমানে দেশে টিকার যে অবস্থা তা কি পর্যাপ্ত? যদি না হয়, তাহলে কী করা উচিত?
মামুন আল মাহতাব:
১৬ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য টিকাদান এবং যাঁরা ইপিআই কর্মসূচিতে হেপাটাইটিস বির টিকা নানা কারণে নিতে পারেননি, তাঁদের জন্য টিকার ব্যবস্থা দরকার। এই টিকাকেও সরকারিভাবে বিনা মূল্যে সব নাগরিককে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। যে দেশ তার ৮০ ভাগ নাগরিককে বিনা মূল্যে কোভিডের টিকা দিতে পারে, তার জন্য এটি কোনো বড় বিষয় হতে পারে না। বিশেষ করে দেশেই যখন একাধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এরই মধ্যে হেপাটাইটিস বির টিকা উৎপাদন করছে।

যতটুকেু জেনেছি কারাগারে থাকা ব্যক্তি, সমকামী মাদকসেবীদের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
মামুন আল মাহতাব:
যেসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে হেপাটাইটিস বি এবং সির সংক্রমণের শঙ্কা বেশি, তাদের অন্যতম হচ্ছেন কারাবন্দী, সমকামী এবং মাদকসেবীরা। তাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার ও মাদক গ্রহণে একই সুইয়ের বারবার ব্যবহারের প্রবণতা আছে। এই ধরনের উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।

অন্য রোগের তুলনায় হেপাটাইটিস নিয়ে আলোচনা কম। এর প্রচারে কী ভূমিকা নেওয়া যায়?
মামুন আল মাহতাব:
শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০ হাজারের বেশি মানুষ। এটি কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি। অন্যান্য অনেক রোগের তুলনায় হেপাটাইটিস বি ও সি নিয়ে প্রচার নেই বললেই চলে। হেপাটাইটিস বি বা সি সম্বন্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলায় সরকার, লিভার বিশেষজ্ঞ, লিভার রোগী, সিভিল সোসাইটি এবং সর্বোপরি গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম।

আপনাকে ধন্যবাদ।
মামুন আল মাহতাব:ধন্যবাদ।

Advertisement
Continue Reading
Advertisement