গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ অত্যন্ত মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ। এই রোগের মূল কারণ গর্ভাবস্থা। এতে গর্ভস্থ শিশু ও মা উভয়েই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেক-আপে থাকতে হবে।
গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ কী?
যে মায়ের আগে থেকে কোনো উচ্চ রক্তচাপ ছিল না, কিন্তু গর্ভধারণ করার ফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিয়েছে তাকেই গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। মূলত গর্ভাবস্থাকেই এই উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়ার পর এই উচ্চ রক্তচাপ আর থাকে না এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর থেকে দেখা দেয়। এটি সাধারণত পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে –
১। জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন
২। প্রি-এক্লাম্পসিয়া
৩। এক্লাম্পসিয়া
৪। ক্রনিক হাইপারটেনশন
৫। প্রি-এক্লাম্পসিয়া/ এক্লাম্পসিয়া সুপারইম্পোজড অন ক্রনিক হাইপারটেনশন
আজ আমরা অত্যন্ত মারাত্মক বিষয় প্রি-এক্লাম্পসিয়া সম্পর্কে জানব।
নারী–পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ কী কী? নির্ণয় ও চিকিৎসা যেভাবেনারী–পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ কী কী? নির্ণয় ও চিকিৎসা যেভাবে
প্রি-এক্লাম্পসিয়া কী?
প্রি-এক্লাম্পসিয়া উচ্চ রক্তচাপজনিত একটি সমস্যা, যা শুধু গর্ভবতী নারীদের হয়ে থাকে। শতকরা ৫-১৫ ভাগ নারী গর্ভাবস্থায় এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি পারদ বা এর বেশি হলে এবং প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বা এলবুমিন নির্গত হলে এই অবস্থাটিকে প্রি-এক্লাম্পসিয়া বলা হয়। এর সঙ্গে অনেক সময় পায়ে ফুলা থাকতে পারে আবার না ও থাকতে পারে।
প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ধরণ
প্রি-এক্লাম্পসিয়া প্রধানত দুই প্রকার- মাইল্ড বা মৃদু এবং সিভিয়ার বা তীব্র।
মৃদু প্রি-এক্লাম্পসিয়া – রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা এর বেশি কিন্তু ১৬০/১১০ মিমি পারদের কম।
তীব্র প্রি-এক্লাম্পসিয়া – রক্তচাপ ১৬০/১০০ মিমি পারদের বেশি হলে।
কাদের প্রি-এক্লাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
১. খুব কম বয়স বা বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে।
২. পরিবারে বা নিজের উচ্চরক্তচাপ বা প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ইতিহাস থাকলে।
৩. গর্ভে একাধিক শিশু থাকলে (টুইন)।
৪. ডায়াবেটিস বা কিডনির রোগ থাকলে।
৫. স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন হলে।
৬. মোলার প্রেগন্যান্সি বা অন্য যে কোনো কারণে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের অস্বাভাবিকতা থাকলে।
৭. পূর্ববর্তী রক্তজনিত কোনো রোগ থাকলে।
গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর করণীয়গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর করণীয়
প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণ
১. রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমি পারদ বা এর বেশি।
২. দ্রুত ওজন বেড়ে যাওয়া, সপ্তাহে ১ পাউন্ড বা মাসে ৫ পাউন্ডের বেশি ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
৩. ১২ ঘণ্টা বিশ্রামের পরেও পায়ের গোড়ালিতে ফোলা থাকা।
৪. প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন নির্গত হওয়া।
প্রি-এক্লাম্পসিয়া থেকে এক্লাম্পসিয়া হওয়ার লক্ষণ
প্রি-এক্লাম্পসিয়া থেকে খিঁচুনি বা একলাম্পসিয়া হতে পারে, যা মা শিশুর জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিচের লক্ষণগুলো দেখলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
১. মাথাব্যথা
২. ঘুম না হওয়া
৩. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
৪. পেট ও বুকের সংযোগস্থলে ব্যথা (এপিগ্যাস্ট্রিক পেইন)
৫. চোখে ঝাপসা দেখা বা কম দেখা বা জ্বালা করা
৬. সারা শরীর অত্যধিক ফুলে যাওয়া
চিকিৎসা
প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মাইল্ড প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করা গেলেও সিভিয়ার প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে।
ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ কমানো এবং নিয়মিত মা ও শিশুর মনিটরিং প্রি-এক্লাম্পসিয়ার মূল চিকিৎসা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাধারণত সন্তান প্রসবের পরপরই প্রি-এক্লাম্পসিয়া ভালো হয়ে যায়। তাই যতক্ষণ সন্তান প্রসব না করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীকে নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে থাকতে হবে।
গরমে চা, কফি বা কোমল পানীয় কম খাবেন কেন?গরমে চা, কফি বা কোমল পানীয় কম খাবেন কেন?
গর্ভাবস্থার ৩৭-৩৮ সপ্তাহে সন্তান প্রসব করানো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। কিন্তু রোগীর অবস্থা মারাত্মক হয়ে গেলে ৩৭ সপ্তাহের আগেও ওষুধের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা অথবা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো হয়ে থাকে। ডেলিভারির আগ পর্যন্ত নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে এবং শিশুর নড়াচড়া ও বৃদ্ধির উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
যেহেতু প্রি-এক্লাম্পসিয়ার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি, তাই এর প্রতিরোধেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপের মাধ্যমে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার জটিলতা এড়ানো সম্ভব।