কারও হয়তো শীতকালটা বেশি পছন্দের। শীতে অনেকেই ঘুরতে ভালোবাসেন। তবে এই শীতেই হতে পারে নানা রোগবালাই। শীত আর শীতের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। এগুলোর কোনোটি বিজ্ঞানসম্মত, আর কোনোটি ভিত্তিহীন। জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের মতামত।
তেল মালিশের যত কথা
সেই আদ্দিকাল থেকেই শরীরে তেল মালিশ করার রীতি প্রচলিত। শিশু বা পূর্ণবয়স্ক মানুষ—সবার জন্যই চলছে এমন রীতি। এ রীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান এম এ জলিল চৌধুরী জানান, শরীরে তেল মালিশ করলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে শীতের সময় শিশুসহ যেকোনো বয়সের মানুষই অসুস্থ হতে পারেন। শীতের সময়কার এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে গরম কাপড় পরতে হবে। প্রচণ্ড ঠান্ডার হাত থেকে নিজেকে আর শিশুকেও বাঁচাতে হবে। তবে তেল মালিশ করলে ঠান্ডার সমস্যায় উপকার পাবেন, এমন ধারণা ঠিক নয়।
কেউ কেউ আবার ঠান্ডা লেগে গেলে বুকে-পিঠে গরম সরিষার তেল আর রসুন মালিশ করতে বলেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান জানালেন, গরম তেল আর রসুন মালিশ করার যে রীতির প্রচলন রয়েছে, সেটি প্রয়োগে রোগী কিছুটা আরাম পেতে পারে। তবে শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা বা কাশির সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা উচিত। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যায় অতিসত্বর সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হলে অনেকে নাকের ফুটোয় সরিষার তেল লাগান। এটা ঠিক নয়। আবার জ্বরজনিত ফোস্কা (জর ঠোসা) হলেও সেখানে তেল লাগান—এ ধারণাও সঠিক নয়।
শিশুকে ঢেকে রাখা
গরম কাপড় পরার হ্যাপাও আছে বৈকি! নবজাতক বা একটু বড় শিশু হোক, মায়েদের চেষ্টা থাকে তাকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখার। শীতের হাত থেকে শিশুকে বাঁচাতে একটু সতর্ক তো থাকতেই হবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন শিশুকে গরম কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখার ফলে সে ঘেমে নেয়ে না ওঠে। মায়েদের তাই এটাও খেয়াল রাখতে হবে, দীর্ঘক্ষণ গরম কাপড় জড়িয়ে রাখার ফলে শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না। কারণ ঘাম বসে গিয়েও শিশুর ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোদ পোহানো
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের কিছুটা সময় রোদে থাকাটা স্বাস্থ্যকর। রোদে রাখুন শিশুকেও। শিশুদের জন্যই এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রোদে থাকার সঙ্গে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন ঘণ্টা খানেক রোদে থাকা যেতেই পারে। তবে এম এ জলিল চৌধুরী সকালের রোদ পোহানোর পরামর্শই দিলেন। সারা দিন রোদে থাকা ভালো নয় কারও জন্যই। রোদ পোহানোর আগে তেল মালিশ করা উচিত, এমন একটি ধারণাও প্রচলিত আছে। এম এ জলিল চৌধুরী জানালেন, আগেকার দিনের মানুষকে রোদ পোহাতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এমন কথা বলা হতো। রোদ পোহানোর সময় তেল মালিশ করলে কোনো ক্ষতি নেই, তবে নেই কোনো বাড়তি সুবিধাও।
গোসলে নয় ভয়
শীতের সময় কত তাপমাত্রার পানিতে গোসল করা উচিত, সে নিয়েও প্রচলিত আছে নানা ধারণা। শীতের সময় গোসলে আসতে পারে অনীহা। তাই এ সময় গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তা ছাড়া কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে মনও হয় সতেজ। তবে এটি আসলে অভ্যাসের ব্যাপার। অবশ্য খুব বেশি ঠান্ডা বা খুব বেশি গরম পানিতে গোসল করা ঠিক নয়।
ত্বকের যত্নে
ত্বকের যত্ন নিতে কোন ধরনের লোশন বা তেল ব্যবহার করতে হবে, সে নিয়েও আছে ভিন্ন ভিন্ন মত। ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাকির হোসাইন বলেন, শীতের সময় ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। এ সময় ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যেতে পারে। তাই লোশন বা তেল ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কেউ চাইলে সরিষার তেলও ব্যবহার করতে পারেন। তবে সরিষার তেল ব্যবহারে ত্বকে খানিকটা চিটচিটে ভাব আসতে পারে। এ ছাড়া সরিষার তেল ব্যবহারে অন্য কোনো সমস্যা নেই। শিশুদের জন্য বেবি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া মুখে ভালো ব্র্যান্ডের ‘কোল্ড ক্রিম’ এবং ঠোঁটে ‘লিপজেল’ লাগানো যেতে পারে। ত্বকে ব্যবহার করার জন্য যেসব ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও ভালো ব্র্যান্ডের হতে হবে। আর ফুল হাতা জামা পরলে ত্বক কম আর্দ্রতা হারাবে। এতে ত্বক ভালো থাকবে।
চুল নিয়ে চিন্তা?
ভেজা চুলের কারণে সমস্যা হয় বলে অনেকে প্রতিদিন চুল ভেজাতে চান না। মো. মুজিবুর রহমান জানালেন, চুল প্রতিদিন ভেজালেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে চুল ভেজানোর পর ভালোমতো শুকিয়ে ফেলতে হবে। অনেকে মনে করেন, ভেজা চুল নিয়ে ঘুমালে ঠান্ডা লেগে যাবে। এ ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। দীর্ঘ সময় চুল ভেজা রাখা ঠিক নয়।
আর জাকির হোসাইন জানালেন, চুলের যত্নে নারিকেল তেল লাগানো যেতে পারে।