Home জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুনস্লিপ এপনিয়া ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া

স্লিপ এপনিয়া ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

ঘুম হচ্ছে বিধাতার সর্বশ্রেষ্ঠ দানের মধ্যে একটি। রাতের ফ্রেশ ঘুম একটি কর্মময় সুন্দর দিনের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্*ু একবার ভেবে দেখুন তো ঘুমের মধ্যে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কী রকম ভয়াবহ অবস্থার সৃ*ি হতে পারে। হ্যাঁ পাঠক, অনেকের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের অবস্থাকে স্লিপ এপনিয়া বলা হয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে চিকিত্সাবিদ্যায় এপনিয়া বলে। তাই স্লিপ এপনিয়া বলতে ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। টানা ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস বন্ধ থাকলে বা একেবারে কমে গেলে এ অবস্থার সৃ*ি হতে পারে।
কাদের হয়
এটা সাধারণত বড়দের রোগ এবং শিশুরা খুব কম ক্ষেত্রে আক্রান্* হয়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্* হয়। তবে বয়স ৫০ পেরুলে মহিলা-পুরুষ সমানভাবে এ রোগে আক্রান্* হতে পারে। স্থূলকায় লোকদের এ রোগে আক্রান্* হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া হার্টের রোগসহ বেশকিছু রোগ আছে যেগুলোতে আক্রান্* হলে স্লিপ এপনিয়া হতে পারে। এ ধরনের রোগীরা সাধারণত একটু ঘুমালেই নাক ডাকতে থাকে। এসব রোগীর রাতের বেলা ঘুম ঠিকমত না হওয়ায় এরা সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে চলাফেরা করে। ফলে কাজকর্মে ঠিকমত মন বসে না। এদের স্মৃতিশক্তি একেবারে কমে যায়। এমনকি মিটিং চলাকালেও এরা ঘুমিয়ে পড়ে। এমন লোকেরা ড্রাইভিং পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলে এক্সিডেন্টের ঝুঁকি মারাত্মক বেড়ে যায়।

কীভাবে হয়
স্লিপ এপনিয়া কীভাবে হয় সেটা বুঝতে হলে প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে আমরা কীভাবে শ্বাস নেই। আমরা নাক ও মুখ দিয়ে যে বাতাস গ্রহণ করি তা শ্বাসনালি নামক লম্বা পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্* ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। স্লিপ এপনিয়ার শুরুতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসনালিপথ বন্ধ বা কলাপ্স হয়ে যায়। এ অবস্থায় রোগী একটু জোরে শ্বাস নেয়ার চে*া করে। কিন্*ু সেটা সম্ভব হয় না। ফলে রোগীর ব্রেইনে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্রেইন তখন বাধ্য হয়ে রোগীকে জাগিয়ে তোলে। ফলে রোগী হঠাত্ ঘুম থেকে উঠে তীব্র শ্বাসক* অনুভব করে। জেগে জেগে বেশ কিছুক্ষণ শ্বাস নেয়ার পর একটু স্বসি* পায়। আপনি যদি এজাতীয় রোগীর পাশে শোন তাহলে দেখবেন এরা ঘুমের মধ্যে হঠাত্ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘুম থেকে জেগে খুব তীব্রভাবে শ্বাস নেয়ার চে*া করে।
কী কারণে হয়
আমরা যখন ঘুমাই তখন ব্রেইন শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে জড়িত মাংসপেশিগুলোকে নির্দেশ দেয় সুন্দরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য। অনেক সময় ব্রেইন এ ধরনের নির্দেশ পাঠায় না। তখন স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ব্র্র্রেইন হয়তো নির্দেশ পাঠাল, কিন্*ু শ্বাসনালিপথ যদি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তখনও শ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। একইসঙ্গে দুই ঘটনাও ঘটতে পারে। অর্থাত্ ব্রেইন নির্দেশ পাঠাল না এবং শ্বাসনালিপথও বন্ধ থাকল। তখন তীব্র শ্বাসক*ে রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠে।

স্লিপ এপনিয়া কেন এত ভয়াবহ
স্লিপ এপনিয়া বেশিরভাগ সময় মারাত্মক কোনো রোগের ইঙ্গিত বহন করে। যেমন :
*হার্টের রোগ, যেমন—হার্ট ফেইলর, অনিয়মিত হৃত্স্পন্দন ইত্যাদি।
*ব্রেইনের রোগ।
*জন্মগত কোনো ত্রুটি।
*কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
*উচ্চরক্তচাপ।

প্রতিকার বা চিকিত্সা
সঠিক চিকিত্সায় এ ধরনের সমস্যা একেবারেই ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিত্সা শুরু করার আগে খুব ভালোভাবে দেখে নিতে হয়—রোগীর প্রকৃত কোন সমস্যার কারণে স্লিপ এপনিয়া হচ্ছে। এজন্য রোগের ইতিহাস জানতে হয়। এছাড়া বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, যেগুলোর সাহায্যে রোগ ও রোগের তীব্রতা নির্ণয় করা যায়।
সঠিক চিকিত্সার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয় সেগুলো হলো :
*শোয়ার স্টাইল পরিবর্তন। কারণ চিত হয়ে শুয়ে থাকলে স্লিপ এপনিয়া বাড়ে।
*ওজন কমানো। ১০ ভাগ ওজন কমালে স্লিপ এপনিয়া ২৫ ভাগ কমে যায়।
*সুষম খাবার গ্রহণ।
*নিয়মিত ব্যায়াম।
*কিছু ওষুধের সাহায্যে চিকিত্সা।
*অপারেশন বা সার্জারির মাধ্যমে চিকিত্সা।

চিকিত্সার জন্য কার কাছে যাবেন
স্লিপ এপনিয়া কোনো নির্দি* অঙ্গের রোগ নয়। ফলে একজন বিশেষজ্ঞের নাম এককথায় বলে দেয়া মুশকিল। বিদেশের হাসপাতালগুলোতে স্লিপিং সেন্টার নামে আলাদা ইউনিট থাকে, যেখান থেকে এ ধরনের রোগীদের চিকিত্সা দেয়া হয়। বিদেশি আদলে আমাদের দেশেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এ ধরনের সেন্টার গড়ে উঠেছে যারা স্লিপ এপনিয়া রোগীদের সুচিকিত্সা দিয়ে থাকে। তবে যেখানেই যান একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ বা একজন ডেন্টিস্টের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের রোগীদের চিকিত্সা দেয়া প্রায় অসম্ভব।
পাঠক, বুঝতেই পারছেন। নাকডাকা রোগ থাকলে নাকে তেল দিয়ে না ঘুমানোই উত্তম। কেননা ছোট্ট এই সমস্যাটি অনেক জটিল জটিল রোগের বাহক হতে পারে।
ডা. সাকলায়েন রাসেল
কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ (পিজি হসপিটাল)
saklayendmc@gmail.com

You may also like