Connect with us

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

প্রাণঘাতী নিপা ভাইরাস থেকে সাবধান! রোগের লক্ষণ ও করণীয়

Published

on

বাংলাদেশে সাধারণত বাদুড় থেকে নিপা ভাইরাস ছড়ায়। এ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফেলাইটিস এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো জ্বর, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

নিপা ভাইরাস একটি Emerging Zoonotic ভাইরাস, যা পশু-পাখি থেকে মানুষে ছড়ায়। ভাইরাসটি মস্তিষ্ক বা শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটি Henipavirus জেনাসের অন্তর্গত একটি ভাইরাস। নিপা ভাইরাসে এনসেফালাইটিস নামক মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ হয়।

১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম নিপা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। ভাইরাসটি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শূকরের খামারে কাজ করা চাষীদের মাধ্যমে প্রথম ছড়িয়েছিল। আক্রান্ত শূকরের স্পর্শ, তাদের লালা ও সংক্রমিত মাংসের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটে। পরে রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। মালয়েশিয়ার নিপা গ্রামে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়, এ কারণেই এই ভাইরাসের নাম নিপা। পরে ১৯৯৯ সালে সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসের সংক্রামণ দেখা দেয়। সেই সময়ে ২৭৬ জন মানুষ মারা যায় বলে জানা যায়।

বাংলাদেশে এর সংক্রমণ নতুন নয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়৷ মেহেরপুরে ২০০১ সালে, নওগাঁয় ২০০৩ সালে, রাজবাড়ি ও ফরিদপুরে ২০০৪ সালে, ঠাকুরগাঁও ও কুষ্টিয়ায় ২০০৭ সালে এ রোগ দেখা গেছে। এই ভাইরাস বাদুর বহন করে বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়।

Advertisement

কীভাবে ছড়ায়
আমাদের দেশে শীতকালে খেজুরের গাছ কেটে হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। ওই হাঁড়ি থেকে রাতে বাদুড়ও রস পান করে। এ সময় বাদুড়ের লালা থেকে নিপা ভাইরাস হাঁড়ির রসে চলে যায়। বাদুড়ের প্রস্রাবের মাধ্যমেও ভাইরাসটি খেজুরের রসে মেশে। এ ছাড়া গাছে বাদুড়ে খাওয়া ফলেও নিপা ভাইরাস থাকতে পারে। ওই রস ও ফল খেলে মানুষের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তারপর আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ায় নিপা ভাইরাস।

নিপা ভাইরাসজনিত জ্বরের উপসর্গ

  • এই জ্বরে রোগী তীব্র জ্বর এবং মাথাব্যথা অনুভব করে থাকেন।
  • রোগীর ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়, এবং আলো সহনশীলতা কমে যায়।
  • এই সময় রোগীর খিঁচুনি হতে পারে।
  • রোগীর মানসিক পরিবর্তন ঘটে, এই সময় প্রলাপ বকতে থাকে।
  • রোগী অচেতন হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা
নিপা ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নাই। এ ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রতিরোধ বা সতর্কতা
এই ভাইরাসের সংক্রমণে শতকরা ৭৫ ভাগ রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই এই রোগের সংক্রমণ রোধ এবং ব্যাপক প্রাণহানি রোধ করতে আইইডিসিআর-এর পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় এবং আক্রান্ত মানুষের লালা, হাঁচি, কাশি থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।

নিপা ভাইরাস প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই। গাছ থেকে সদ্য নামানো খেজুরের রস ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেকোনো ফল ভালো করে ধুয়ে খোসা ফেলে খেতে হবে। খেজুরের রস ফুটিয়ে নিলে নিপা ভাইরাস মরে যায়। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেলে সাবধান থাকতে হবে। গাছ পরিচর্যা, ফলমূল পাড়া ও খেজুরের রস আহরণের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

সরাসরি নিপা ভাইরাস নিরাময়ে কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি৷ সুতরাং এই রোগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করাই বর্তমানে রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পন্থা৷ নিপা ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত৷

Advertisement
  • খেজুরের কাঁচা রস বা তাড়ি না খাওয়া৷
  • খেজুরের কাঁচা রসে ডুবিয়ে পিঠা বা অন্য খাবার না খাওয়া৷ রস ভালোভাবে টগবগিয়ে ফুটিয়ে বা গুড় বানিয়ে খাওয়া উচিত৷
  • আধা খাওয়া ফল না খাওয়া৷ বাদুড়ের আধাখাওয়া ফল থেকে নিপা ছড়াতে পারে৷
  • যে কোনো ফল ধুয়ে খাওয়া৷
  • সাবান ব্যবহারে নিপা ভাইরাস মারা যায়৷ তাই সবধরনের ধোয়া-মোছার কাজে সাবান ব্যবহার করা উচিত৷
  • নিপা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে৷ তাই আক্রান্ত এলাকায় কারো মধ্যে এর লক্ষণসমূহ দেখা দিলে মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে হবে৷ নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণত শীতকালে গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ ও খাওয়া হয় সেই সময়ে হয়ে থাকে৷ এজন্য অক্টোবর মাস থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে নিপা সংক্রমণ করমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে৷
Continue Reading
Advertisement
Advertisement
জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন4 weeks ago

ওষুধ খাওয়ার ভুলে অসুস্থতা

জ্বর বা মাথাব্যথা হলেই প্যারাসিটামল, অ্যালার্জির জন্য হিস্টাসিন কিংবা গ্যাসের ট্যাবলেট- এই ধরনের ওষুধগুলো আমরা হরহামেশাই খাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই।...

খাদ্য ও পুষ্টি1 month ago

শিশুদের জন্য লবণ যতটুকু দরকার

অতিরিক্ত লবণ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা প্রদানের পাশাপাশি অল্প বয়সে রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিমাণ লবণ রাখতে হবে যা...

জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন1 month ago

ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কেন

বয়সে টিংকু বেশ ছোট। এত ছোট যে মাঝেমধ্যে টিংকুর দাঁত পড়ে। একবার বিড়াল টিংকুকে আঁচড়ে দিল। চিকিৎসক বললেন যে র‌্যাবিসের...

Advertisement