শ্বেতী বা ধবল রোগের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। অনেকেই মনে করেন যে, এ রোগে আক্রান্তদের সংস্পর্শে এলেও এতে আক্রান্ত হয়। কিন্তু এ রোগটি মোটেও ছোঁয়াচে রোগ নয়। আবার এটি কোনো ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগও নয়। এ রোগের বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই এটি নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। আবার ছোঁয়াচে ভেবে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়ে থাকে অনেককেই। তাই এ বিষয়ে ধারণা রাখা উচিত সবার।
শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নিজের শরীরের বিভিন্ন কোষ ও কলাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই জাতীয় রোগকে বলা হয় ‘অটো ইমিউন ডিজিজ।’
শ্বেতী বা ত্বকের দুধ-সাদা দাগও এই ধরনের ‘অটো ইমিউন ডিজিজ’। ভিটিলিগো বা শ্বেতী নিয়ে সমাজে এখনও নানা কুসংস্কার আছে। ত্বকের এই সাদা দাগের সঙ্গে কুষ্ঠর কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সেই আতঙ্কে আক্রান্ত মানুষটি ও তাঁর পরিবার ভয়ানক ভেঙে পড়েন। ‘ওয়ার্ল্ড একজিমা কাউন্সিল’-এর এ দেশের প্রতিনিধি ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর জানালেন, দেখতে অন্য রকম লাগা ছাড়া সেই অর্থে শ্বেতীর অন্য কোনও বিপজ্জনক দিক নেই।
ইউরোপ-আমেরিকার বাসিন্দারা শ্বেতীকে অসুখের পর্যায়েই ফেলেন না। শ্বেতীর দাগ মেলাতে ‘ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট কভার’ ব্যবহার করেন। আমাদের দেশের মানুষ অসুখ নিয়ে অত্যন্ত বিচলিত বোধ করেন, অবসাদে ভোগেন। তাই রোগের শুরুতে চিকিৎসা করলে শ্বেতীর সাদা দাগ মুছে ফেলা কঠিন কাজ নয়।
শ্বেতী কেন হয়?
ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করতে কাজ করে ত্বকের মধ্যে থাকা মেলানোসাইট কোষের মেলানিন অংশটি। এটির ভারসাম্য নষ্ট হলে বা এর ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে সাধারণত শ্বেতী হয়ে থাকে। আবার বংশগতভাবেও এ রোগটি অনেক হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে— শ্বেতী রোগীদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই এটি বংশগত ধারায় হয়ে থাকে বাবা বা মায়ের জিনের বংশীয় প্রভাবে। আর ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী হয়ে থাকে মেলানিনের সমস্যার কারণে।
এ রোগে বর্তমানে সারা বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি মানুষ আক্রান্ত রয়েছেন। এটি প্রথমে সাধারণত মুখ, কনুই ও বুকে হতে দেখা যায়। ত্বকের মধ্যে মেলানিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে শ্বেতী হতে দেখা যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এটি পুরো শরীরজুড়েও হয়ে থাকে। তবে শ্বেতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ১০ বছর বয়স থেকেই এটি হতে শুরু করে।
শ্বেতী হলে যা করবেন
শ্বেতী মোটেও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো রোগ নয়। এটি ছোঁয়াচে ভেবে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। এটি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে পারেন। এ রোগের শুরু থেকেই চিকিৎসা নিয়ে পরিচর্যায় থাকলে এটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে ওঠা অনেক সময় সাপেক্ষ বিষয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও হাইপার থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বেতী হওয়ার প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে।
শ্বেতী হলে যে খাবারগুলো পরিহার করবেন
শ্বেতী হলে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি শ্বেতীর সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া কিছু ফল যেমন— আঙুর, কমলালেবু, বেদানা, পেয়ারা, ব্লুবেরি, গুজবেরি খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া ফলের আচার, কাঁচাটমেটো, কাঁচারসুন, তেঁতুল, মাছ, সামুদ্রিক মাছ, কফি, জাঙ্ক ফুড, চকলেট ইত্যাদি খাবার পরিহার করা উচিত।