॥ ই-হেলথ২৪ ডেস্ক ॥ ঘাতক ব্যাধি এইডসের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধী হিসেবে একটি বড়ি সেবনে সমর্থন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। এইচআইভি প্রতিরোধী হিসেবে এই প্রথম কোনো ওষুধ মার্কিন বিশেষজ্ঞদের সমর্থন পেল। ট্রুভাডা নামের বড়িটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদনের অপেক্ষায়। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এফডিএ এটি অনুমোদন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এফডিএর উপদেষ্টা প্যানেল দ্য এন্টিভাইরাল ড্রাগ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যরা গত ১০ মে প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। এতে এইচআইভি প্রতিরোধী হিসেবে ট্রুভাডা ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। এটি ব্যবহারের পক্ষে ১৯ জন এবং বিপক্ষে তিনজন যুক্তি উপস্থাপন করেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়ে কমিটি এফডিএকে ট্রুভাডা অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, সমকামী ও বাইসেক্সুয়াল (নারী ও পুরুষ উভয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী)
পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে ট্রুভাডা। একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে এইচআইভি সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন- এমন সমকামী পুরুষদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিদিন ট্রুভাডা সেবনের অনুমোদন চেয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ওষুধ কম্পানি জিলিড সায়েন্সেস ২০০৪ সালে ট্রুভাডা বাজারে ছাড়ে। এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এমট্রিভা ও ভাইরেড নামের দুটি ওষুধের সঙ্গে ট্রুভাডা ব্যবহৃত হচ্ছে। এইচআইভি ভাইরাস ধ্বংসের জন্য চিকিৎসকরা তিনটি ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দেন। উপদেষ্টা কমিটি এবার এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য শুধু ট্রুভাডা ব্যবহারের পরামর্শ দিল।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে এই ওষুধ খুব একটা কার্যকর নয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২ লাখ এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির দুই-তৃতীয়াংশই সমকামী ও বাইসেক্সুয়াল পুরুষ।
২০১০ সালে ট্রুভাডা প্রথমবারের মতো খবরে পরিণত হয়। সরকারি গবেষকরা ওষুধটির এইচআইভি প্রতিরোধী ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিন বছরের গবেষণায় তাঁরা দেখতে পান, প্রতিদিন ট্রুভাডা সেবনের ফলে সমকামী ও বাইসেক্সুয়াল পুরুষদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে ট্রুভাডার পাশাপাশি কনডম ব্যবহার এবং চিকিৎসকদের পরামর্শও নিয়েছেন তাঁরা।
গত বছর আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থাকা ব্যক্তিদের মধ্যেও ট্রুভাডা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। এসব ব্যক্তির নারী বা পুরুষ সঙ্গী এইচআইভি সংক্রমিত ছিলেন। এ কারণে অনেক চিকিৎসকই এখন এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য এ বড়ি সেবনের পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন। তবে এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই এইচআইভি নেগেটিভ হতে হবে।
এইচআইভি প্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে ট্রুভাডার ব্যবহার নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বহুদিন ধরে ট্রুভাডা সেবনের ফলে একসময় শরীরে এমন অবস্থা তৈরি হতে পারে যে ওষুধটি আর এইচআইভির বিরুদ্ধে কাজ করবে না। সেবনকারীদের মধ্যেও এইচআইভি থেকে নিরাপদ থাকার ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে। ট্রুভাডার মতো দামি ওষুধের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে গিয়ে এইচআইভি প্রতিরোধের সুলভ উপায়গুলোর তহবিল কমে আসবে বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ অ্যাডভাইজরি কমিটির বৈঠকে কারেন হফি নামের একজন সেবিকা বলেন, ‘ট্রুভাডা অবশ্যই প্রতিদিন এবং নির্দিষ্ট সময়েই সেবন করতে হবে। কিন্তু বহু বছরের অভিজ্ঞতায় আমি বলতে পারি, এটা সব সময় সম্ভব হয় না।’
সূত্র : বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া