প্রসব বেদনার ফলে মায়ের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন হয়। ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব বিভিন্ন পদ্ধতিতে এটা করলে ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই পদ্ধতিতে মা ও নবজাতক সন্তানের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বর্তমান বিশ্বে ইপিডুরাল পদ্ধতিতে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব করা হয়।
রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইমপালস হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘ব্যাথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অধ্যাপক ডা. জহির আলামিনের সভাপতিত্বে ও ডা. দবির উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান লাইজু, গাইনি অ্যান্ড অবস বিশেষজ্ঞ ডা. নিয়াজ টি পারভীন, গাইনি অ্যান্ড অবস বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহম্মেদ। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকরা সেমিনারে অংশ নেন।
অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান লাইজু জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে লাগামহীনভাবে সিজারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির তথ্য জনগণকে জানালে তারা সিজার থেকে রক্ষা পাবে এবং এটাতে উৎসাহিত হবে। আমি মনে করি ইমপালস হাসপাতালের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করবে।
https://www.youtube.com/watch?v=cCL29FOtQSU
ডা. নিয়াজ টি পারভীন জানান, ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) ১৯৮৫ সালের একটা প্রতিবেদনে বলা হয় সি-সেকশনের হার শতকরা ৫-১৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এটির হার শতকরা ২৩ ভাগ। যা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। ব্যথামুক্ত সন্তার প্রসব পদ্ধতি সঠিকভাবে চালু করলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির জানান, সমাজে মেয়েদের খাটো করে দেখা হয়। অথচ যে মা হতে পারে সে পৃথিবীর সব কাজ করতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা একটা ভালো উদ্যোগ। উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রতিটা মায়ের অধিকার। এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে মায়েরা শারীরিক অসুবিধা থেকে মুক্তি পাবে।
গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহম্মেদ জানান, সিজারিয়ান সেকশনের জন্য অপারেশন, অজ্ঞানের জাটিলতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশনসহ মারাত্মক কিছু ঝুঁকি থাকে। যা ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা করতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এতদিন বাধ্য হয়ে প্রসব ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে আমাদের মায়েদের। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে আজ তা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতির ব্যবহারে সিজারের প্রবণতাও অনেকটায় কমে যাবে। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তার ও রোগীদের সচেতন হতে হবে।
সেমিনার শেষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি ইউনিটের শুভ উদ্বোধন করেন।