১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পথচলা শুরু হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় অর্ধশত বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ। শুরুতে বেসরকারি খাতের এ স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আশার পথ দেখালেও অল্পদিন পরেই রূপ নেয় হতাশার প্রতিচ্ছবিতে। অতিরিক্ত ফি, ভর্তি বাণিজ্য, বিএমডিসির নীতিমালা মেনে না চলা এবং কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলেও চলছে শিক্ষা বাণিজ্য। দায়িত্বশীলদের অনিয়ম, দুর্নীতি আর আইনি জটিলতার কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও শিক্ষার্থীপ্রতি সর্বনিম্ন ৪ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে কলেজগুলো।
বর্তমানে দেশজুড়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৪৪টি। ডেন্টাল কলেজ রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে বিএমডিসির অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২৫টি মেডিকেল ও ৮টি ডেন্টাল কলেজের। বিএমডিসির নিবন্ধন ছ্ড়াাই বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ৮টি মেডিকেল ও ৪টি ডেন্টাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই একটি পূর্ণাঙ্গ বিধিমালা তৈরি করা হলেও সেটা মেনে চলা হচ্ছে না। বিএমডিসির নীতিমালা না মানার কারণে ২০০৭ সালে বেসরকারি ১৫টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হলেও আদালতের আদেশ আর প্রভাবের জোরে সবসময়ই পার পেয়ে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনুমোদনবিহীন এসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অবস্থা ভালো নয়। নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো, শিক্ষক ও জনবল নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণেও সঙ্কট রয়েছে। তারপরও চলছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা বাণিজ্য।
নীতিমালায় যা রয়েছে
২০০৪ সালের ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা শাখা প্রণীত স্বাপকম/চিশিজ/বেসমেক-০১/২০০৪/৫৬৭ নং স্মারকের বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রচলিত ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কোনো রেজিস্টার্ড ট্রাস্ট/ফাউন্ডেশন/ লিমিটেড কোম্পানির আওতায় স্থাপন করতে হবে। এজন্য কলেজের নামে ন্যূনতম এক কোটি টাকা অনুদান এফডিআর আকারে জমা রাখতে হবে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য প্রতি ৫০ আসনবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজে ১ জন অধ্যাপক, ২ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৩ জন সহকারী অধ্যাপক থাকতে হবে। প্রতি ৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন করে প্রভাষক থাকতে হবে। গড়ে প্রতিটি বিষয়ের জন্য কমপক্ষে ১৫ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালাতে হবে। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বয়স ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমা অনুযায়ী হবে। কলেজের অধ্যক্ষকে বিএমডিসি এবং পিএসসির নীতিমালা অনুযায়ী চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে অধ্যাপক হতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য কোনো অবস্থাতেই ভাড়া বাড়িতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা যাবে না। ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য ২৫০ আসনবিশিষ্ট হাসপাতাল করতে হবে। মেট্রোপলিটন শহরে ন্যূনতম আড়াই একর অথবা কলেজ ভবনের জন্য এক লাখ বর্গফুট, হাসপাতাল ভবনের জন্য এক লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস এবং মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে ন্যূনতম ৫ একর নির্মাণযোগ্য জমি কলেজের অনুকূলে রেজিস্ট্রি দলিলমূলে দান বা ক্রয় করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী ১:১০ হবে। কলেজের শতকরা ৫ ভাগ আসন দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকতে হবে। তাদের কাছ থেকে সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো অনুরূপ ফি আদায় করা যেতে পারে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। যা রেজিস্টার্ড অডিট ফার্মের মাধ্যমে প্রতি বছর নিরীক্ষা করতে হবে। হাসপাতালের দরিদ্র জনগণের জন্য বিনা ভাড়ায় ৫ ভাগ আসন সংরক্ষিত থাকতে হবে। আর কলেজে দরিদ্র ও মেধাবী ৫ ভাগ ছাত্র বিনা বেতনে পড়াতে হবে। শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি, ছাত্রছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা এবং শিক্ষক ও কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক নিয়োগ থাকতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য নীতিমালা থাকলেও সেটা মেনে চলা হচ্ছে না। এ কারণে বিএমডিসি ৮টি মেডিকেল কলেজ ও ৪টি ডেন্টাল কলেজকে নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন ছাড়াই সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে স্বাস্থ্য শিক্ষা বাণিজ্য। বেসরকারি সাতটি মেডিকেল কলেজের ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে মিলেছে এমন তথ্য।
নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ
আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০০-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়েছে। হাসপাতাল স্থাপন না করা, পর্যাপ্তসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা, আধুনিক ল্যাব সুবিধা ব্যবহার করতে না পারা এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার পরিবেশ না থাকা। এসব অভিযোগের কারণে ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দেয়া আদেশে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শন শাখা। ওই আদেশের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে আদেশ দেয়। আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। এ অবস্থায় ২০০৯ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সার্বিক কারণে পরিস্থিতি শিক্ষাদানের উপযোগী না থাকার কারণে ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর ২০০৯-১০ শিক্ষবর্ষে বন্ধ হয় নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে পাঠদান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালতের এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত আদেশে বেসরকারি নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের অনুমোদন বাতিলের আদেশ বহাল রাখা হলে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশবলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ। এ অবস্থায় অধ্যয়নরত ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বদলি করে দেয়া হয়।
সাপ্তাহিক-এর পক্ষ থেকে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনের জন্য যেতে চাওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে রোগী পরিচয়ে হাসপাতালে যাই। সেখানে ইনডোরে ২টার পর কোনো চিকিৎসক থাকে না। ইনডোরে দৈনিক গড়ে মাত্র ২০ জন করে রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ৬০ জন চিকিৎসক নিয়োগের কথা বলা হলেও তাদের মধ্যে হাতেগোনা কজন হাসপাতালে আসেন।
পরবর্তীতে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ থেকে লিখিতভাবে সাপ্তাহিক-কে জানানো হয়েছে, সেখানে ১৮টি বিভাগে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৭১ জন বলে দাবি করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিদর্শন শাখার তথ্যানুযায়ী ৬০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরজমিন পরিদর্শনকালে কলেজের নিচতলায় আউটডোরে হাসপাতাল পরিচালকসহ ১৫ জন চিকিৎসকের নাম পাওয়া গেছে। বিএমডিসির নীতিমালা অনুসারে ১৮টি বিষয়ে পড়ানোর জন্য বিভাগপ্রতি কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষক সার্বক্ষণিক থাকার কথা। আউটডোরে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ৩২ জনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরিদর্শনকালে আউটডোরে ২ জন চিকিৎসক পাওয়া গেছে। সব রুম তালাবদ্ধ ছিল। শুধু আউটডোরের চিকিৎসকের একটি কক্ষ খোলা ছিল।
হাসপাতালের ইনডোরে ২৫০ জন রোগীর আসনের বিপরীতে দৈনিক গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী থাকে। এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী কখনো বা তারও কম রোগী ইনডোরে ভর্তি থাকে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স জানিয়েছে। আউটডোরে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা পেয়ে থাকে বলে দাবি করা হয়।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে বসে ঢাবির উচ্চপর্যায়ের এক ছাত্রলীগ নেতার মধ্যস্থতায় পুনরায় নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম খানের নামে অর্থ লেনদেন হয়েছে। সে কারণে ইতঃপূর্বে শিক্ষার পরিবেশ না থাকার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরও ফের নতুন করে চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে বহুল আলোচিত ওই প্রতিষ্ঠানটিকে।
ইনডোরে রোগীর সংখ্যা অপর্যাপ্ত, নিয়মিত চিকিৎসকের সংখ্যা শিক্ষার্থী অনুপাতে যথেষ্ট নয়। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অনুমতি নিশ্চিত করা হয়েছে এমন অভিযোগের জবাবে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাপ্তাহিক-কে বলেন, ‘এই কথাটি মোটেও ঠিক নয়, যেখানে আমাদের হাসপাতালের ইনডোরে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকে। তবে মাঝে মাঝে কখনো বেশি কখনো কম হয়। যেখানে নিয়মিত শিক্ষকমন্ডলীর সংখ্যা ৭১ জন, সেখানে যথেষ্ট নয় কথাটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. একেএম সাইফুল ইসলাম খান সাপ্তাহিক-এর সঙ্গে আলাপকালে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার মান দেখাশোনা করেন। সেখানে কলেজ পরিদর্শন শাখা রয়েছে। তারা সেটা দেখে থাকেন। আমরা শুধু পরীক্ষার বিষয়ে খোঁজ খবর রাখি। অধিভুক্তি দেয়া না দেয়া সেটা কলেজ পরিদর্শন শাখা দেখে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শিক্ষার পরিবেশ না থাকার অভিযোগ ছিল। সেখানে হাসপাতাল ছিল না। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক ছিল না। বারবার বলার পরও তারা হাসপাতাল চালু করতে পারেনি। সে কারণেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুনরায় অনুমোদন নয়, প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তাদের অধিভুক্তি দেয়া হয়েছে। সেটা করা হয়েছে নতুন মেডিকেল স্থাপনের নীতিমালা মেনে। তারা কিছু শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। সেটা যথেষ্ট না হলেও আমরা তাদের সময় বেঁধে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারলে অধিভুক্তি নবায়ন করা হবে না। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ নতুন করে শুরু করার মতো পরিবেশ এখন তাদের আছে। বর্তমান শিক্ষার্থীরা ৩য় সিমেস্টারে যাওয়ার আগেই তাদের হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ’
সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামের সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এখনো কোনো ব্যাচ এমবিবিএস কোর্স শেষ করে বের হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারের কাছ থেকে ৫০ জন করে প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায় সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বর্তমানে ৫ম ব্যাচের ভর্তি শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২৭ জন। আগামী ২০১২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ পরিচালিত না হলে এবং বিএমডিসির নিবন্ধনের বাইরে থাকাবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে বের হলেও তাদের কোনো সনদপত্র দেয়া হবে না। চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন দেয়া হবে না বিএমডিসি থেকে। প্রায় অর্ধযুগ ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও এ পর্যন্ত তারা বিএমডিসির নীতিমালা মেনে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য বিএমডিসি বরাবরে কোনো আবেদন করেনি। বিএমডিসির পক্ষ থেকে একাধিকবার নিবন্ধন নেয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আবেদন করেনি, নিবন্ধন নেয়নি। ২০০৭ সালে বিএমডিসির নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছিল। সেই সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে স্থগিতাদেশ নিয়ে এখনো পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্যতম গুরুতর অভিযোগ হলো গত ৫ বছরেও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে হাসপাতালের আসন সংখ্যা ২৫০-এ উন্নীত করতে পারেনি।
এ বিষয়ে সাপ্তাহিক-এর সঙ্গে আলাপকালে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাসানুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা বিএমডিসির নীতিমালা মেনে চলছি। তাদের মাধ্যমে নিবন্ধন নেয়ার জন্য আবেদন করেছি। আগামী অল্প দিনের মধ্যে আমরা নিবন্ধন পেয়ে যাব। সেই সঙ্গে যেসব অভিযোগ উঠছে সেগুলো সঠিক নয়। আমাদের সবকিছু আছে। আগামী জুলাইয়ে আমাদের প্রথম ব্যাচ বের হবে। প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পরও কেন বিএমডিসির নিবন্ধন নেয়া হলো না এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পর্যন্ত অনুমোদন নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে কিনা-এ প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের অধিভুক্তি প্রদানকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মনীন্দ্র কুমার রায় সাপ্তাহিক-কে বলেন, ‘সাউদার্ন-এর সমস্যা হলো তাদের রোগী নেই। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এখনো। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করে যাচ্ছে। আগামী বছর তাদের শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের বিপাকে পড়বে কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ বলছে তারা আগামী জুলাইয়ের আগে বিএমডিসির নীতিমালা মেনে নিবন্ধিত হবে।’
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ
রাজধানীর মিরপুরে ২০০৬ সালে স্থাপন করা হয় ডেল্টা মেডিকেল কলেজ নামের আলোচিত আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল, হাসপাতাল ও শিক্ষার পরিবেশ না থাকার কারণে ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৫০ আসনের ওই মেডিকেল কলেজে শিক্ষা পাঠদান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করে এখনো পরিচালিত হচ্ছে ডেল্টা মেডিকেল কলেজ। মামলার কারণে ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর আরো ১০টি আসন বৃদ্ধির পর ফের চলছে শিক্ষার্থী ভর্তি। বর্তমানে এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০।
একের পর এক বিএমডিসির পক্ষ থেকে নীতিমালা মেনে চলার জন্য নির্দেশ হলেও ওই প্রতিষ্ঠানটি এখনো নীতিমালা পূরণ করতে পারেনি। শিক্ষার্থী অনুপাতে স্থায়ী শিক্ষক ও হাসপাতালে রোগীর ঘাটতি রয়েছে।
সরজমিন পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ডেল্টা মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। বিএমডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ডেল্টা মেডিকেল কলেজের বর্তমান অবস্থা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। হাসপাতালে রোগী কম থাকে। আমরা তাদের কিছু শর্ত পালন করার জন্য বলেছি।’
নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ
রাজধানীর ধানম-িতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিএমডিসির নীতিমালা মেনে চলতে না পারার অভিযোগ শুরু থেকেই। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজি (আইবিএটি) ট্রাস্ট-এর নামে প্রতিষ্ঠিত ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৫টি ব্যাচ মিলিয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২০ জন। প্রশাসনিক, অবকাঠামো আর একাডেমিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা রয়েছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ২২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এখানে দায়িত্বরত শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। ১৫ জন অধ্যাপক, ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৭ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৩৪ জন প্রভাষক থাকার কথা বলা হলেও এ সংখ্যক শিক্ষকের অর্ধেকের বেশি অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত। ৫ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে চলছে নর্দান ইন্টারন্যাশনালের পাঠদান কার্যক্রম। কলেজের মূল ক্যাম্পাসে নেই হাসপাতাল। এসব অভিযোগের কারণে ২০০৭ সালে সেপ্টেম্বরে সরকার ওই প্রতিষ্ঠানের এমবিবিএস কোর্স বাতিল ঘোষণা করেছিল। তারপর থামেনি নীতিমালা মেনে না চলার মানসিকতা। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার নামে শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন নেয়ার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি। চলতি মাস থেকে ক্যাম্পাস ধানম-ি ৭ নং থেকে সরিয়ে ৮ নং রোডে নর্দান হাসপাতালের মূল ভবনে নেয়া হয়েছে। এভাবে শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে আসা নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজটিতে ভর্তির জন্য উন্নয়ন ফি বা ডোনেশনের নামে এককালীন আট লাখ ৫১ হাজার টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএমডিসির একটি পরিদর্শক দল সম্প্রতি নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমডিসির একটি সূত্র জানায়, ‘বিএমডিসির নীতিমালা মেনে চলার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির অনেক ঘাটতি রয়েছে। সব শর্ত মেনে না চললে নর্দান ইন্টারন্যাশনালে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিএমডিসির সনদ পাবে না।’
নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ
রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিএমডিসির নীতিমালা মেনে না চলার অভিযোগ উঠছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত কলেজটি চলতি শিক্ষাবর্ষে ৩০ টি আসনের মধ্যে ২৩ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। বর্তমানে সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ জন। রোগী ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকা, অধিক হারে কোর্স ফি আদায়, আসন সংখ্যার অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি ও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে ২০০৭ সালে সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন স্থগিত করে রাখা হয়েছিল। তারপরও বিএমডিসির নীতিমালা মোতাবেক শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষার পরিবেশ মেনে না চলার কারণে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করা হয়। একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করার পরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং শিক্ষার্থীদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কলেজের আসন সংখ্যা ৫০টিতে উন্নীত করে শর্ত সাপেক্ষ ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত স্বপকম/চিশিজ-২/বেসমেক-৫/৯৯ (অংশ-১)/১৬ নং স্মারকে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্ধিত আসনে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি গ্রহণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। সেই সঙ্গে আগামী ১ বছরের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোসহ হাসপাতাল সুবিধাদি বৃদ্ধি করতে হবে। এ ব্যাপারে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বরং বিএমডিসির নীতিমালা মেনে চলার নামে কাগজে-কলমে রংপুরের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সেখানে নিয়োগ দেখানো হচ্ছে। এসব শর্ত মেনে নেয়া না হলে প্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাপ্তাহিক-এর সঙ্গে আলাপকালে নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান বেগম রোকেয়া লাভলী বলেন, ‘বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী আমরা পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারিনি। বিএমডিসির পরিদর্শকদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা তাদের পরামর্শ মোতাবেক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। বর্তমানে ৪র্থ বর্ষে পাঠদান চলছে। আমি আশা করছি এ ব্যাচ শেষ করার আগেই আমরা বিএমডিসির চাহিদা পূরণ করে নিবন্ধন নিতে পারব।’
বিএমডিসির একাধিক সূত্র জানায়, ‘নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। তারা শিক্ষক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। পর্যাপ্ত স্থায়ী শিক্ষক না থাকলেও কাগজে-কলমে কোনো নিয়োগ দেয়া হলে সেটার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে না।’
উদয়ন ডেন্টাল কলেজ
রাজশাহীর উদয়ন ডেন্টাল কলেজে বিডিএস কোর্সে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। পাঠদান শুরু করার ২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বিএমডিসির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এখনো বিএমডিসির পক্ষ থেকে কলেজটিকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি। বিএমডিসির নিবন্ধন, পর্যাপ্ত শিক্ষক, নিজস্ব ভবন ও অবকাঠামো না থাকার পরও চলছে বাণিজ্য। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আব্দুল মালেক স্বীকার করেছেন বিএমডিসির নীতিমালা পুরোপুরিভাবে মেনে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষাদান চলছে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি শুরু হয়েছে। প্রথম ব্যাচে ৩২ জন, দ্বিতীয় ব্যাচে ৪৮ জন ও তৃতীয় ব্যাচের ৫০ জনসহ মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে ভাড়া করা ভবনে। বর্তমানে ১৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ জন শিক্ষক রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু এসব শিক্ষকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি স্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত নন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।
উদয়ন ডেন্টাল কলেজের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. আব্দুল মালেক সাপ্তাহিক-কে বলেন, ‘শুরু থেকেই বিএমডিসির নীতিমালা মেনে কলেজ শুরু করা কঠিন। তারপর আরা তারে অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করেছি। কিন্তু বিএমডিসি এখনো তদন্ত করেনি। আমরা প্রস্তুত রয়েছি এবং আশা করছি শিক্ষার মানের পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়ে শীঘ্রই অনুমোদন নিতে পারব। আমাদের প্রথম ব্যাচ বের হবার আগেই নিবন্ধন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
মার্কস ডেন্টাল কলেজ
আধুনিক ঢাকার অতিপরিচিত ঢাকা সেনানিবাস ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজ সংলগ্ন মিরপুর ১৪নং এলাকায় ২০০৬ সালে চালু হয়েছে মার্কস ডেন্টাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম । ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মার্কস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবেই যাত্রা শুরু করে এ কলেজটি। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কাজী আবদুল খালেক প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজটি পরিচালনা করছেন। ওই ডেন্টাল কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন মার্কস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তারিক মাসুদ খান। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মার্কস ডেন্টাল কলেজের (এমডিসি) পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিশিষ্ট নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ব্রি. জে. (অব.) ডা. এম আর খান। বিএমডিসির নীতিমালা মোতাবেক ডেন্টাল কলেজ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই।
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এ ডেন্টাল কলেজে বিডিএস কোর্সে চার ব্যাচে মোট ২৭০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। এ পরিমাণ শিক্ষার্থীর জন্য ইনডোরে রোগী থাকার কথা ৫ শতাধিক। কিন্তু বর্তমানে ওই ডেন্টাল কলেজের ইনডোরে দৈনিক গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম।
মার্কস ডেন্টাল কলেজ বিএমডিসির নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ফাউন্ডেশন/ট্রাস্টের অধীনে চলছে না। সেখানে রোগীর সংখ্যাও অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদও খালি রয়ে গেছে। খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে চলে পাঠদান। এসব কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করেছিল বলে জানান বিএমডিসির একটি সূত্র। তারপর আবারো পুরো উদ্যমে চালু হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএমডিসির নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় মার্কস ডেন্টাল কলেজের নাম নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ আব্দুল লতিফ সাপ্তাহিককে বলেন, ‘বাংলাদেশে ও বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে আমার কাছে তথ্য নেই। বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়া বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজ চালানোর কোনো সুযোগ নেই। আমি অফিসে গিয়ে কাগজপত্র না দেখে কিছু বলতে পারবো না। এখন বাইরে আছি, পরে একসময় আমার অফিসে আসেন। কাগজপত্র দেখে তারপর এ নিয়ে কথা বলা যাবে।’
‘অনুমোদন ছাড়া মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজ চালানোর কোনো সুযোগ নেই’
কাজী শফিকুল আলম
সিনিয়র সহকারী সচিব
চিকিৎসা শিক্ষা শাখা-২, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ নীতিমালা মেনে কলেজ পরিচালনা করার জন্য বলছি। কেউ যদি কোনোভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস বা বিডিএস কোর্স চালানোর কোনো সুযোগ নেই।
‘শিক্ষার পরিবেশ নেই এমন প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার পর সনদ পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না’
ডা. জেহাদুল হক বসুনিয়া
রেজিস্ট্রার
বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল
অনুমোদন বিহীন মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজ থেকে পাস করে বের হলে তারা চিকিৎসক হিসেবে বিএমডিসির সার্টিফিকেট পাবে না। যেখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই, সেখান থেকে বের হওয়ার পর সনদ পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বিএমডিসির নিবন্ধনের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করলেও শিক্ষার্থীদের সনদপত্র দেয়া হবে না। এজন্য ভর্তি হওয়ার আগেই এ বিষয়ে জেনে নিতে হবে। ২০০৪ সালে প্রণীত প্রাইভেট মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন নীতিমালায় জবাবদিহিতা, টিউশন ফি নির্ধারণসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তাই সরকার নীতিমালাটি হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নীতিমালায় কলেজ স্থাপনের পূর্বশর্ত কঠোর করার পাশাপাশি নিয়মিত অডিট প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা করছে সরকার।
‘অবকাঠামো, শিক্ষক, নীতিমালা ছাড়াই শিক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে’
ডা. বিমল কুমার গুহ
কলেজ পরিদর্শক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘বর্তমানে শিক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে। অবকাঠামো, শিক্ষক, বিএমডিসির নীতিমালা ছাড়াই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিএমডিসির নীতিমালা মেনে না চললে, শিক্ষার পরিবেশ না থাকলে আর কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে ভবিষ্যতে চলতে না পারে সেই পথে সরকার এগোচ্ছে। নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য অধিভুক্তি পেয়েছে। তারা নীতিমালা লঙ্ঘন করলে যে কোনো সময় বন্ধ করে দেয়া হবে। বর্তমানে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে পড়ানোর জন্য শিক্ষক আছে। তাদের হাসপাতাল ও রোগীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রত্যেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ যাতে নীতিমালা মেনে চলে সে ব্যাপারে যৌথভাবে কাজ করার চিন্তা চলছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরো বেশি কঠোর অবস্থান নেয়া হবে।’
‘শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখতে পারছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে’
প্রফেসর ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
‘চট্টগ্রামের সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়াই চলছে। সরকার এর আগে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল, সেই আদেশ উচ্চ আদালত স্থগিত করে দিয়েছে। যে কারণে বিএমডিসি বা সরকার আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাদের মূল সঙ্কট রয়েছে হাসপাতালে। সেখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নেই। বিএমডিসির নিবন্ধন তারা এখনো নেয়নি। আমরা কথা বলেছি, তারা আগামী বছরের আগেই নিবন্ধন নেওয়ার জন্য শর্ত পূরণ করছেন বলে জানিয়েছে। এভাবে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখতে পারছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।’
কলেজগুলোতে শিক্ষক, অবকাঠামো ও রোগীর সঙ্কট প্রকট
প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
‘আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো বিএমডিসির নীতিমালা মেনে না চললে তাদের পরীক্ষা নেব না। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছি। এ অবস্থায় কলেজগুলোতে শিক্ষক, অবকাঠামো ও রোগীর সঙ্কট প্রকট। কাগজে-কলমে যে সংখ্যক শিক্ষক থাকে বাস্তবে সবাইকে পাওয়া যায় না। হাসপাতাল, রোগী নিয়েও সঙ্কট রয়েছে। এ দিকগুলো আরো খেয়াল রাখা দরকার।’
সুত্র : সাপ্তাহিক