বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যতোই উন্নয়ন ঘটছে ততোই যেনো জটিল ও কঠিন রোগগুলো বেশি বেশি দেখা দিচ্ছে। সাধারণে তাই মনে করে। কারণ রোগ যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে রোগীরা যখন হাসপাতালে যায় তখন অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসক দুয়েকটি ঔষধ দিয়ে আসতে বারণ করেন। রোগের তীব্রতা এবং প্রদত্ত ঔষধের মধ্যে পরিমাণগত পার্থক্য অর্থাৎ রোগ অনুযায়ী অনেকগুলো ঔষধ না দেয়ায় অনেক রোগীই চিকিৎসকের যোগ্যতার প্রশ্ন তোলেন।
রোগীরা মনে করেন অনেকগুলো ঔষধ দিয়ে বোধহয় দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যেত। বিশ্বের নামি-দামি এমন অনেক চিকিৎসক আছেন যারা পেশা জীবনের অধিকাংশ সময়ই এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।
এই অবস্থায় সাধারণে প্রশ্ন করতে পারেন বাড়তি ঔষধ প্রদানে চিকিৎসকের এত অনিহা কেন ? এই প্রশ্নের সহজ সরল উত্তর হচ্ছে পরিমিত ঔষধ খেলে যেমনি রোগ ব্যাধি সারে আবার অপরিমিত ঔষধ খেলে রোগীর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মূলত এজন্যই চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন পরিমিত এবং উপযুক্ত ঔষধ দিতে। চিকিৎসকের কাজ মানব সেবা করা। কিন্তু সেবা করতে গিয়ে ওষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় যদি কোনো রোগীর মৃত্যু হয় তাহলে এর দায় দায়িত্ব চিকিৎসকের উপরই বর্তায়; সৎ এবং নিষ্ঠাবান চিকিৎসকের জন্য এই অপবাদ অনেকটা দুঃখজনক।
রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে এই অপবাদের শকার হন নি এমন চিকিৎসক বিশেষ খুব কম আছেন। তাই তো অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসকরা অনেক দিন যাবৎ চাচ্ছেন এমন কোনো ঔষধ তৈরি করতে যা প্রয়োগ শুধু রোগব্যাধী থেকে রোগীরা পরিত্রাণ পাবে। ভুল প্রয়োগ বা পরিমাণে বেশি প্রয়োগের কারণে রোগীর শরীরে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে না। প্রকৃতি নিয়ে যারা গবেষণা করেন এই প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা যখন উক্ত চিকিৎসকদের সাথে কাজ শুরু করলেন বলা যায় এরই ফলশ্রুতিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমন উন্নয়ণ সম্ভব হয়েছে যে, আজ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন এমনই এক প্রযুক্তি তারা উদ্ভাবন করেছেন যা চিকিৎসা শাস্ত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিবে। তাহলে কী সেই প্রযুক্তি ?
গবেষকরা তো বলছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা যে বায়োচিপের কথা শুনে এসেছি এই প্রযুক্তি তাই। গতাণুগতিক চিপগুলোর মতোই এই বায়োচিপ মুহূর্তেই হাজার হাজার বায়োলজিক্যাল ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করতে পারবে। আমরা ইতোমধ্যে বায়নিক চিপের কথা শুনেছি। এটি প্রাণীদের জীবকোষ এবং বিশেষ ধরনের সার্কিটের সমন্বয়ে তৈরি করা যায়। এ চিপের সাহায্যে পরীক্ষাগারে এমন সব গবেষণার কাজ করা যাবে যা থেকে খুব কম খরচে ও কম জায়গায় রোগ নির্ণয়, ঔষধ আবিষ্কার এবং গতাণুগতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজগুলো অনায়াসে করা যাবে। আর বায়োলজিক্যাল চিপ তৈরি হবে শুধু জীব কোষের সমন্বয়ে। যেগুলো বিশেষ বিশেষ ডিভাইসের মধ্যে অবস্থান করে ঠিক প্রাণীদের মতোই নীরবে নিঃশব্দে ক্রমাগত কাজ করে যাবে। অর্থাৎ কর্মস্থলে কম্পিউটারের আগমনে কাজে কর্মে যে গতিশীলতা বেড়েছে সে ক্ষেত্রে এ ধরনের চিপ সম্বলিত ছোট ছোট ডিভাইসগুলো আপনার কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিবে। তাছাড়া কেমিক্যাল প্ল্যান্টের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে একাধিক কেমিক্যাল নিয়ে পরীক্ষার কাজে তেজস্ক্রিয়তার যেসব ঝুঁকি থাকত এখন আর তা থাকবে না। অর্থাৎ এই চিপের আগমনে বিশ্বের যা কিছু ঘটবে তার সব কিছুই হবে মানুষের জন্য মঙ্গলকর। অমঙ্গলকর সব কিছুই বিদায় নিবে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছে এগুলো যেমনি মানুষের জন্য মঙ্গলজনক তেমনি অমঙ্গল জনকও। সে স্থলে এই প্রথম কোনো প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটল যা হবে মঙ্গলকর। প্রযুক্তি নিয়ে যারা গবেষণা করেন, প্রযুক্তি যারা উদ্ভাবন করেন এবার তারা নিশ্চয় জানতে চাইবেন কীভাবে তৈরি করা হবে এই প্রযুক্তিকে।
গতাণুগতিক প্রক্রিয়ায় সংকরীভবন অর্থাৎ হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে যখন পুরনো কোনো প্রজাতি থেকে নতুন কোনো প্রজাতির কিছু তৈরি করা হয় তখন নাইট্রোসেলুলাস এবং নাইলনের মতো নরম এবং কোমল মেমব্রেনগুলোকে সদব্যবহার করা হয়। অথচ একই কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে বায়চিপ এসেস অর্থাৎ ফার্মাসিউটিক্যাল বা ধাতুর মধ্যে কার্যকর উপাদান সমূহকে ফ্লুরোসেন্ট (বিকিরণ গ্রহণ করে তা আলোরূপে ফিরিয়ে দেয় এমন) ল্যাবেলিং এবং ডিটেকশনসহ কাঁচের মতো সলিড সার্ফেসের সদ্ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। সংকরীভবনের মাধ্যমে কোনো কিছু তৈরি এবং বায়োচিপের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে বায়োচিপ দিয়ে বায়লজিক্যাল এনালাইসিসের কাজগুলো করা হয়। বায়োচিপের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সলিড সার্ফেসের উপর খুব সূক্ষ্ম ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রগুলোতে থাকে বিভিন্ন কাজের উপযুক্ত বায়োকেমিক্যাল মেটারিয়েল, যেগুলোকে যথাযথভাবে এক ছিদ্র থেকে অন্য ছিদ্রে অপসারণ করা যায়। নাইলন এবং নাইট্রোসেলুশন-এর মতো সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত সাবস্ট্রেট অর্থাৎ কোনো এনজাইম কর্তৃক বিক্রিয়ার মধ্যে প্রভাবকের কাজে প্রভাব সৃষ্টিকারী বস্তু চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাইক্রোএ্যারো প্রিপারেশনের জন্য কোনো নিয়ম কানুন মেনে চলে না। অথচ সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত সাবস্ট্রেট অর্থাৎ এনজাইম কর্তৃক বিক্রিয়ার মধ্যে প্রভাবকের কাজে প্রভাব সৃষ্টিকারী বস্তু সাবস্ট্রেট মেট্রিক্স (যে পদার্থের খনিজ পদার্থাদি অবস্থান করে)-এর মধ্যে রিএজেন্ট এবং স্যাপলগুলো শোষন প্রতিরোধ করায় বায়চিপ কেব্রিকেশন এবং ব্যবহারের সময় যেসব ব্যাধি দেহ যন্ত্রের শুধু ক্রিয় নয়, তাদের গঠনেও আক্রমণ করে সেগুলো (অর্গানিক) এবং বিকিরণ গ্রহণ করে তা আলোরূপে ফিরিয়ে দেয় এমন (ফ্লুরোসেন্ট) কম্পাউন্ডগুলোকে দ্রুত বেগে স্থানান্তরের কাজ করে। এর ফলে সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত সার্ফেসের মধ্যে যে বায়কেমিক্যাল থাকে সেগুলোর ছোট ছোট এক একটি অংশ মিলিত হয়ে দ্রুত সংকরীভবনের মাধ্যমে এ্যারে ইলিমেন্টগুলোর মান বাড়িয়ে দেয়। মূলত এভাবেই বায়োচিপ কাজ করায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যে সলিড সার্ফেসের উপর ন্যানো আকৃতির ছিদ্রের মধ্যে বায়োকেমিক্যাল মেটারিয়েল রেখে বায়োচিপ তৈরি করা হয় এই ছিদ্রগুলোতে যদি বিভিন্ন কাজের উপযুক্ত বায়োকেমিক্যাল মেটারিয়েল রাখা হয় তাহলে সে চিপ দিয়ে ঐ কাজই করা যাবে। বায় টেকনোলজি নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা এ জন্যই শুরু থেকে বলে আসছেন বায়োচিপ দিয়ে কঠিন ও জটিল সব রোগ চিকিৎসা করা যাবে। বায়োচিপ তৈরির প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি না থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে রোগ চিকিৎসায় ঔষধের পরিবর্তে বায়োচিপ প্রয়োগ করা হবে। আর তখন চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।
বায়োচিপকে শুধু যে চিকিৎসা ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হবে তা নয়। ফেব্রিকেশন টেকনোলজির যে হারে উন্নয়ণ সম্ভব হচ্ছে এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় উৎপাদনের প্রবণতা বাড়ছে তা থেকে বলা যায় বায়োচিপ এক সময় মাইক্রোএ্যারে ফেব্রিকেশনের কাজেও ব্যবহার করা হবে। বর্তমানে মাইক্রোএ্যারে ম্যানুফেকচারিংয়ের কাজে প্রাথমিক পর্যায়ের ৩টি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ফটোলিথোগ্রাফি, ইঙ্কজেটিং এবং মেকানিক্যাল মাইক্রোস্পটিং। এসব প্রযুক্তির সবগুলোরই সুবিধা এবং অসুবিধা উভয় গুণাবলী রয়েছে। এসব প্রযুক্তির কোনোটিই গতাণুগতিক হাইব্রিডাইজেশন এসেস অর্থাৎ ফার্মাসিউটিক্যাল বা ধাতুর মধ্যে কার্যকর উপাদানগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত সলিড সার্ফেসে বিদ্যমান এনজাইম কর্তৃক বিক্রিয়ার মধ্যে প্রভাবকের কাজে প্রভাব সৃষ্টিকারী বস্তুর সাথে কাম্পটেক নয়। বায়োচিপ সেটিংয়ের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি ব্যবহারের জন্য ফটোলথোগ্রাফি উন্মুক্ত করা হয়েছে। আলো ব্যবহার করে ডিএনএকে সংশ্লেষন করে যে ধরনের আলোতে তাপের অনুভূতি নেই এমন আলো দ্বারা লুকায়িত কোনো কিছুর অবয়বকে প্রকাশ করা হয় এক্ষেত্রে। এরূপ হাজার হাজার অবয়ব একত্রিক করে ইঙ্কজেট টেকনোলজির ক্ষেত্রে কোনো কিছুর পূর্ণাঙ্গ অবস্থান/আকার ফুটিয়ে তোলা হয়। মাইক্রোস্পটিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মাইক্রোএ্যারে ফেব্রিকেশনের জন্য কোনো তলের উপর সরাসরি কোনো কিছুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রিন্ট হেডে অনেকগুলো ছোট ছোট দাগ ফেলার উপযুক্ত পিন থাকে যেগুলো চুলের চেয়েও সরু হয়। এই পিনগুলো প্রয়োজনে উঠা নামা বা স্থানান্তর করার মাধ্যমে রিএজেন্টগুলোকে কোনো কঠিন তলের উপর ছিটিয়ে কোনো কিছু ফুটিয়ে তোলা হয়। এ সময় একটি xyz মোশন কন্ট্রোল সিস্টেম অলিগোনিউক্লিওটাইডস, CDNA (Complementary DNA) এবং অন্যান্য বায়মলিকিউলসের মাইক্রোএ্যারের প্রস্তুতি পর্বটি নিয়ন্ত্রণ করে।
আপাতত জীন এক্সপ্রেশন এবং মিউটেশন ডিটেকশনের জন্য মাইক্রোএ্যারে মেনুফেকচারিংয়ের কাজে এই তিন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বিজ্ঞানীরা বলছেন। এই ৩টি প্রযুক্তির প্রত্যেকটিই কোনো সিঙ্গেল চিপে যথাযথ ঘনত্ব বজায় রাখতে সক্ষম যার মাধ্যমে মানুষের জীনগত অবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। তা স্বত্ব্ওে বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, এই প্রযুক্তি আদৌ ব্যবহার করা হবে কি-না সে বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে এর উৎপাদন ক্ষমতা, ঘনত্ব, খরচ, মান, নমনীয়তা এবং অন্যান্য মানদণ্ডের উপর। তবে এই প্রযুক্তির সে সম্ভাব্যতা প্রমাণীত হয়েছে তা থেকে বলা যায় অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
সাবস্ট্রেট এবং মাইক্রোএ্যারে ফেব্রিকেশনের পর বায়চিপ তৈরির আরেকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র হচ্ছে বায় কেমিক্যাল রি-একশন। এক্ষেত্রে ডিএনএ অথবা আরএনএ-কে বায়লজিক্যাল সোর্স থেকে পৃথক করা হলে বায়চিপের সাথে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তার তথ্যবহুল বিন্যাস থেকে কোনো পদার্থ সম্পর্কে সার্বিক তথ্যাদি জানা যায়। এ সময় বায়কেমিক্যাল রি-একশনের মধ্যে অন্তর্নিহিত ফ্লোরোসেন্ট লেবেল ব্যবহার করা হয়। ফলে গতি, ডাটা কোয়ালিটি এবং ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা স্বাপেক্ষে গতাণুগতিক যান্ত্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে খুব ছোট স্থানে মাইক্রোস্কোপিক যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্ভূলভাবে অনেক কঠিন ও জটিল কাজ করা যায়।
সিসিডি (চার্জ কপল্ড ডিভাইস) ক্যামেরায় স্ক্যানিং এবং ইমেজিং প্রযুক্তি কথা বলা হচ্ছে ফ্লোরোসেন্ট ভিত্তিক প্রযুক্তিই সেক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে। এক্ষেত্রে যে বায়চিপ ব্যবহার করা হবে এতে কাঁচ জাতীয় তলের উপর অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম গর্তের মধ্যে ৫-২০০ মাইক্রন লিটার বায়োকেমিক্যাল রিএক্টরের এক একটি ভলিউম থাকবে। এতে কোনো কাজ করার জন্য রিএজেন্টগুলো পরিমিত ব্যবহৃত হওয়ায় খরচ যেমনি কমে যাবে তেমনি মাইক্রোএ্যারে এসেসের মধ্যে নিউক্লিক এসিড রিএক্টগুলো কোনো স্থানে দ্রুত জড়ো করা সহজ হবে। এতে কোনো কাজ করার সময় কমে যাবে।
বায়োচিপ তৈরির ক্ষেত্রে সাবস্ট্রেট, মাইক্রোএ্যারের ফেব্রিকেশন, বায়োকেমিক্যাল রিয়েকশন ছাড়াও ডিটেকশন ও ডাটা এনালাইসিস কৌশল ব্যবহৃত হয়। কনফোকালি স্ক্যানিং ডিভাইস এবং সিসিডি ক্যামেরাতে মাইক্রোএ্যারে ডিটেকশন টেকনোলজি ব্যবহার করা যায়। বায়োচিপ সমন্বিত স্ক্যানারগুলো এমন ক্ষমতাসম্পন্ন হবে যে গ্লাস সাবস্ট্রেটের উপর অতি ক্ষুদ্র স্থানে লেজার রশ্মি ফেলে সে স্থানের চিত্রটি বারংবার ধারণ করে ধারণ করা এই চিত্রটিকে ইলেকট্রিক সিগনালে পরিণত করা হবে। এই সিগনাল ফটোমাল্টিপ্লায়ার টিউব অথবা সমপর্যায়ের ডিটেক্টর ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হবে। কনফোকাল স্ক্যানার দিয়ে এই ইলেকট্রিক ডাটাকে জড়ো করা এবং সংগ্রহ করার কাজ গতানুগতিক পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত রেডিওএকটিভ ফিল্টারসহ অটোরেডিওগ্রাফির চেয়ে প্রায় দশ গুণ দ্রুত গতিসম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে যেসব সিগনাল ধারণ করা যাবে এগুলোকে ডিজিটালী কনভার্ট করে সাধারণত ১৬ বিট টিআইএফএফ (tiff) ফরম্যাটে সংরক্ষন করা হবে। এ সময় ডাটার পরিমাণ গণনার কাজ সম্পন্ন করা হবে মাইক্রোএ্যারে ইমেজগুলো কোনো স্থানে একটির উপর অন্যটি জড়ো করে। এবং প্রত্যেক মাইক্রোএ্যারে ইলিমেন্টগুলোর ইন্টেনসিটি ভ্যালু অটোমোটেড সফটওয়্যার ছাড়া গণনা করা হবে। এরপর ইন্টেনসিটি ভ্যালুকে প্রতি কোষে কি পরিমাণ mRNA (ম্যাসেঞ্জার RNA) থাকে সে সংখ্যার মতো বায়লজিক্যালি রিলিভেন্ট আউটপুটে পরিণত করা হবে। তারপর এই আউটপুটগুলোকে অর্থাৎ জীনগত ব্যাখ্যা, জীনের ধরন এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য জীনের বিন্যাসগুলোকে পূর্বে নির্ধারণ করা জীনগত গবেষণা কর্মের সাথে তুলনা করে নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা হবে।
জীব কোষ দিয়ে চিপ তৈরি, কাঁচ জাতীয় পদার্থের উপর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্রে বায়োকেমিক্যাল বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে চিপ তৈরি ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় যেসব বায়োচিপ তৈরি করা হবে নিশ্চয় এগুলোকে এক সময় বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হবে। এ সম্পর্কিত গবেষকদের মতে যদিও জীনগত কার্যকলাপের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজে প্রথম থেকেই বায়োচিপ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মিউটিশন ডিটেকশন, পলিমরফিডম এনালাইসিস, ম্যাপিং ইত্যাদি সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম বায়মেডিসিনের একটি নতুন ক্ষেত্র হচ্ছে ফার্মাকো জিনেমিক্স। ঔষধের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, ব্যবহার এবং প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে এক্ষেত্রে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রেও বায়োচিপ ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা চলছে। জীনের বিন্যাস, কাজ এবং জীনগত সার্বিক ধারণা যখন অর্জন সম্ভব হবে তখন ফার্মাকোজিনোমিক্স বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে খুব সহজেই জানা যাবে কোন প্রোটিন আমাদের জন্য ক্ষতিকর এবং কোনটি নয়। আর এসব প্রোটিন অর্থাৎ বায়কেমিক্যাল দিয়ে যেসব বায়োচিপ তৈরি করা সম্ভব হবে সেগুলোই আমাদের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে যাবে। এছাড়াও বায়োচিপ নিয়ে যেসব সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে এগুলোর যখন সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তখন এগুলোকে ইলেকট্রিক সার্কিটারির সাথে জুড়ে দিয়ে এমন সব ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন যান্ত্রিক সামগ্রী তৈরি করা যাবে যেগুলো আমাদের সমাজ ও জীবন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দিবে। কিন্তু এজন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক প্রযুক্তিগুলোকে বায়োচিপ ব্যবহারের উপযুক্ততা অর্জন পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
সিএনভিএস অবলম্বনে- প্রাণ কানাই রায় চৌধুরী