ডা. আহমেদ সরোয়ার মুর্শেদ
মানবদেহের ভয়াবহ ক্যান্সারগুলোর মধ্যে লিভার ক্যান্সার অন্যতম। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে যা নিরাময় সম্ভব।
লিভার ক্যান্সার দু’রকমের_ (১) প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার : যে ক্যান্সার লিভারের কোষ থেকে তৈরি হয় তাকে প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার বলে। (২) সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার : যে ক্যান্সার শরীরের অন্য কোনো জায়গা থেকে তৈরি হয়ে লিভারে ছড়িয়ে পড়ে তাকে সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার বলে।
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা : সার্জারি হচ্ছে লিভার ক্যান্সারের মূল চিকিৎসা। অপারেশন করে কেটে ফেলে দিলে রোগীর আয়ু বাড়তে পারে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, ৭০%-৮০% রোগীকে বিভিন্ন কারণে সার্জারি করা যায় না। এসব রোগীকে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এসব চিকিৎসার ফলাফল খুব আশাব্যঞ্জক নয়। তাই এতদিন ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সার্জারির কার্যকরী বিকল্প আবিষ্কার করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এর ফলস্বরূপ Cryosurgery, Alcohol ablation, RFT আবিষ্কার হয়। তারা রোগীদের ওপর ব্যাপক গবেষণা করে দেখেছেন যে, এদের মধ্যে RFT সবচেয়ে কার্যকরভাবে এবং বেশ নিরাপদে লিভার ক্যান্সার টিউমারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। RFT-এর দুটো ইউনিট আছে : ১) RF Generator ২)Leaveen Needle Electrode RFT কিভাবে কাজ করে : আল্ট্রাসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যান মেশিনের সাহায্যেLeaveen Needle Electrode-কে টিউমারের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। ঈধহঁষধ থেকে ১০টি ছোট Needle টিউমার নোঙ্গর করানো হয়। এবং RF তরঙ্গ টিউমারে প্রবাহিত হয়। RF তরঙ্গ থেকে তৈরি হওয়া তাপ টিউমার টিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়।
RFT কাদের করা যায় : বর্তমান লিভার ক্যান্সার RFT হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী চিকিৎসা। যাদের প্রাইমারি টিউমার ১০ সে. মি-এর চেয়ে বড় এবং সার্জারি করা যায় না তাদের জন্য RFT উপযুক্ত ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি। যাদের সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সারের আকৃতি ৬ সে. মি-এর বেশি নয়। যাদের লিভারে ৮টির বেশি টিউমার নেই। তবে অবশিষ্ট লিভারের অন্তত ৬০% টিস্যু সুস্থ থাকতে হবে।
ফলাফল : ইউএসএফডিএ-এর অনুমোদন প্রাপ্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০-এর বেশি হাসপাতালে এখন লিভার, ফুসফুস, হাড়, কিডনি ইত্যাদি ক্যান্সারের চিকিৎসা জঋঞ-কে বেশ সফলভাবে ব্যবহার করছেন। তারা পাঁচ বছর আগে প্রায় ১৫০০ প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার RFT করেছে। তাদের অর্ধেকেরও বেশি রোগী পাঁচ বছর ধরে রোগমুক্ত আছেন। ৭৫% রোগী তিন বছর ধরে রোগমুক্ত ছিলেন এবং ৯৫% রোগী এক বছর ধরে রোগমুক্ত ছিলেন। যাদের নতুন করে লিভার ক্যান্সার দেখা দিয়েছিল তারা পুনরায় জঋঞ করেছেন। নতুন করে রোগ দেখা দেওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে যেসব বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে কেবল বড় টিউমারকে নির্ণয় করা যায়; কিন্তু হাজার হাজার ক্যান্সার কোষ যেগুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে পারে তা নির্ণয় করা যায় না। এসব কোষ থেকে পুনরায় ক্যান্সার টিউমার জন্ম নিতে পারে। এসব অনির্ণিত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোষকে ধ্বংস করতে কেমোথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। তাই বিজ্ঞানীরা এখন লিভার ক্যান্সার চিকিৎসার RFT এবং কেমোথেরাপি ব্যবহার করছেন এবং এর ফলাফলও বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। বাংলাদেশে গত দু’বছর ধরে RFT-এর সাহায্যে ফুসফুস ও লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা করে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।
সুবিধাসমূহ : RFT-এর মাধ্যমে ১০০% Tumor ধ্বংস করা সম্ভব। তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হয়। রোগী খুব তাড়াতাড়ি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
ডা. আহমেদ সরোয়ার মুর্শেদ
গ্যাসট্রো লিভার হসপিটাল এন্ড রিচার্স ইনস্টিটিউট, ৬৯/ডি, গ্রিন রোড পান্থপথ, ঢাকা। ফোন : ০১৬৭১-০৩৩৫৪২, ০১৭১৩-০০১৩২০।