এ বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে শতকরা ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বা প্রায় ২৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। এ বাজেট দিয়ে উন্নত বিশ্বের মত স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ইচ্ছে থাকলে জনবল ও আর্থীক স্বল্পতার কারণে তা সম্ভবকর হয়ে উঠছে না। তাই প্রতিবছর বাজেটে স্বাস্থ্যে ১ শতাংশ করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
বুধবার রাজধানীর বিএমআরসিন ভবনে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ’ বিষয়ক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইন্টারপার্লামেন্টারী ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি এবং সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত এ কথা বলেন।
মিল্লাত বলেন, দেশে প্রায় ১ লক্ষ ডাক্তার ও প্রায় আট লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা নিয়ে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রান্তীক পর্যায়ে পৌছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্দ পরিকর। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের অধিকার। এই সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি আরও ব্যাপকভাবে তা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার গঠন করার পর কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো উন্নত করা ও নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলে। দেশে এখন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এসব কেন্দ্র থেকে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এখান থেকে ৩০ প্রকার ওষধ বিনামূল্যে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, দেশে ৫০ শতাংশ ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ এসেছে। বিশ্বে চিত্রে এটা ৬৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তাকে ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজের প্রাথমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত গুণগত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে প্রতিবছর বাজেটে স্বাস্থ্যে ১ শতাংশ করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব বিক্রি করে নিঃস হচ্ছে। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বছরে ১২২ মিলিয়ন লোক দরিদ্র হন।
১৯৯৬ সালে ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। ১৯৯৮ সালের ২৮শে জুন একনেক সভায় এটি অনুমোদন লাভ করে। পরে সরকার পরিবর্তন হলে ২০০১ সালে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে। এলাকাবাসীর জমি দান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সরকারের কারিগরি সহায়তায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠেছে। ঘরের কাছে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প এখন বিশ্বের কাছে উদাহরণ। কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণ হচ্ছে এবং প্রয়োজনে রাজধানীর চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সভাপতিত্বে উক্ত সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ ও অনন্যা নেত্রীবৃন্দ।