গ্রামের চেয়ে শহরে বাড়ছে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন বা প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৪ জন। শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ শিশু যা প্রতি হাজারে ২ দশমিক ৫ জন অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন। সেই হিসাবে প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৭ জন। গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম বৈশিষ্ট্য শিশুর সংখ্যা বেশি। প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ১৭ শিশু অটিজমে আক্রান্ত। ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) এর পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি মানুষের হরমোনজনিত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। এটির প্রতীকী রং নীল। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য যেমন আলাদা; তেমনি তাদের প্রতিভাও ভিন্ন। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতে পারছে, কেউ বা টয়লেট ক্লিনিং করতে পারছে- সেটাও ওই শিশুর জন্যে একটা সাফল্য বলে খুশি থাকতে হবে।
তারা বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্যে কেবল মাকে নয়, বাবাকেও কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ শিশুদের জন্যে সুযোগ রাখা প্রয়োজন। অভিভাবকদের কাউন্সিলিং দরকার। কারণ এই শিশুদের অভিভাবকরা ভালো থাকলে তাদের সন্তানটিটও ভালো থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশে ২ এপ্রিল পালিত হবে ১২তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালের ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বর্তমানে মোট ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬০৮ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে যাদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৪১৭ জন রয়েছে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি বলেন, অটিজম দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে আগামীকাল থেকে ৩ দিন পর্যন্ত দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নীলবাতি প্রজ্বলন করা হবে। দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১১ টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নীলবাতি প্রজ্বলনের পর থেকেই ৩ দিন ব্যাপী নীলবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি কার্যকর হবে। এছাড়া অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ অবদান রাখায় সফল ব্যক্তিদের ৫০ হাজার টাকার চেক, একটি ক্রেস্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হবে।
সরকার অটিজমসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের উন্নয়নে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ এবং ‘নিউরো ডেভলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩’ নামে পৃথক দু’টি আইন প্রণয়ন করেছে। যেখানে সরকারের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি কল্যাণমুখী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সাংবিধানিক অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এখন আইন দ্বারা স্বীকৃত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নারী ও পুরুষের সার্বিক উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ সকল কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করছি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), ভিশন ২০২১ ও ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখেই।