রোগটির নাম ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল)। এটি রক্তের ক্যানসারেরই একটি ধরন। তবে ক্যানসার শুনেই ভয়ের কিছু নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এই রোগের চিকিৎসা আছে এবং নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগী স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব সিএমএল সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জীবন পরিবর্তনকারী সিএমএল থেরাপির ২০ বছর, তবে চিকিৎসা সবার নাগালে নেওয়া প্রয়োজন’। ২০১১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, মানুষের বংশগতির বাহক ক্রোমোসোমের ৯ ও ২২ নম্বরের মধ্যে বিনিময়জনিত পরিবর্তনের কারণে এই রোগের উৎপত্তি।
বাংলাদেশে সিএমএল রোগ নিয়ে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সর্বশেষ ২০১৪ সালে বারডেমের হেমাটোলজি বিভাগের একটি প্রতিবেদন বিএমসি রিসার্চ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ পুরুষ। তাঁরা ৬৩ সিএমএল রোগীর ওপর গবেষণাটি করে। এদিকে ক্যানসারবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্যানসারডটনেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত ১৫ শতাংশই সিএমএল রোগী।
২০ বছর আগে সিএমএলের যুগান্তকারী চিকিৎসাপদ্ধতি বের হয়। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার খুব কম।
অধ্যাপক এ বি এম ইউনুস, হেমাটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ইউনুস বলেন, দেশে রক্তের ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ সিএমএল রোগী। চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের রোগটি হওয়ার প্রবণতা বেশি। তিনি বলেন, এ ধরনের ক্যানসারের অন্যতম কারণ হচ্ছে তেজস্ক্রিয়তা। আর তেজস্ক্রিয়তাসংশ্লিষ্ট কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, রোগটি মারাত্মক নয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে ভালো থাকা যায়। এ বি এম ইউনুস বলেন, ২০ বছর আগে সিএমএলের যুগান্তকারী চিকিৎসাপদ্ধতি বের হয়। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার খুব কম। তবে চিকিৎসা সফল না হলে বা চিকিৎসা না পেলে এবং রোগটি ক্রনিক থেকে যদি অ্যাডাল্ট অ্যাকুয়েট মায়েলয়েড লিউকেমিয়ায় (এএএমএল) রূপ নেয়, তখন রোগীর মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়।
চিকিৎসকেরা জানান, সিএমএলের লক্ষণ অবসাদগ্রস্ততা, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, ঘাম হওয়া, কোনোকিছু ভালো না লাগা, গরম সহ্য করতে না পারা, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, হঠাৎ জ্বর আসা এবং কারণ ছাড়াই চুলকানি বেড়ে যাওয়া। এসব দেখা দিলে রক্তের পরীক্ষা করাতে হবে। এই রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা বাংলাদেশে আছে।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মী শফিউর রহমান ২০০০ সালে বুঝতে পারেন, তাঁর ওজন কমে যাচ্ছে। পরে পরীক্ষায় তাঁর সিএমএল ধরা পড়ে। তিনি বলেন, শুরুতে রোগটির চিকিৎসার জন্য তাঁকে মাসে লাখ টাকার বেশি খরচ করতে হতো। কিন্তু এখন চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়নে খরচ অনেক কমে এসেছে।
শফিউর রহমান এখন সুস্থ আছেন। তিনি বিয়ে করেছেন, সন্তান আছে তাঁর। তবে তিনি নিয়মিত চিকিৎসাও নিচ্ছেন। তাঁর মতে এটা ঠিক ডায়াবেটিসের মতো। তিনি বলেন, চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, সিএমএল নিয়ে দেশের মানুষের ধারণা কম। সেই চিন্তা থেকে তিনি ‘বাংলাদেশ সিএমএল সাপোর্ট গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
সিএমএলের চিকিৎসার খরচ আগের চেয়ে অনেক কমে এলেও এখনো তা সবার জন্য সহজলভ্য নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে সিএমএলের ওষুধ তৈরি হয়। তবে যেসব ওষুধ দেশে তৈরি হয় না, সেসবের দাম বেশি।